রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৫০ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : এগার দিনের সহিংসতার পর ইসরাইল-ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিরতি হলো। শুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির আগে অন্তত ২৪০ জন মারা গেছেন এবং এদের বেশির ভাগই মারা গেছেন গাযায়। ইসরাইল-ফিলিস্তিনের এই সহিংসতা নিয়ে ২০১৪ সালেই জাতীয় সংসদে কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। সেদিন তিনি ফিলিস্তিনের ‘মুক্তিযুদ্ধকে’ সম্মান জানিয়েছিলেন।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। এই প্রস্তাবের ওপর সেদিন সাধারণ আলোচনায় অংশ নেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে। তাঁর এই প্রস্তাব উত্থাপনের প্রেক্ষিতে আমরা দুটো কথা বলার সুযোগ পেয়েছি।’
বক্তব্যের শুরুতে বাদশা বলেন, ‘আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই যে, বাংলাদেশ এমন একটি রাষ্ট্র, যার কেবিনেটে সর্বপ্রথম ইসরাইলের নিন্দা করে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল এবং আজকে পার্লামেন্টে এ বিষয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বের রাজনীতিতে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছি। এটি নিশ্চয়ই বিশ্ববিবেকের কাছে অভিনন্দনযোগ্য হবে বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদীরা অনেক পাপ করে। সেই পাপের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে ইসরাইল। ১৯৪৮ সালে তারা ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত করার পর থেকে প্যালেস্টাইনিরা তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে আসছে। তাদের এই স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি কোন মমতাবোধ পশ্চিমা দুনিয়ার কাছ থেকে আমরা দেখিনি। আর জাতিসংঘ কয়েকদিন আগে এমন একটি নাটক করলো, যে নাটকের কোন রাজনৈতিক অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। সে নাটক কী? ২০১২ সালে বললো যে- প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রটি হচ্ছে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে এটুকু স্বীকৃতি দেয়া হলো যে- ভবিষ্যতে প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি সম্ভাবনার স্বীকৃতি দেয়া হলো। জাতিসংঘের এত বড় প্রতারণা আর হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কখনোই প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন একক মুসলমানদের ছিল না। জর্জ হামাসের কথা আমাদের মনে আছে। জেরুজালেমের ক্রিশ্চিয়ান কমিউনিটি ইসরাইল রাষ্ট্রকে মেনে নেয়নি। তারা ফিলিস্তিনী জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছিল। এ জন্য ইয়াসির আরাফাতও ধর্মনিরপেক্ষ একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। এখানেই হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের আক্রোশ। তারা বাংলাদেশের মতো অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রকে মেনে নিতে চায় না। এটাই হচ্ছে রাজনীতি। আজকে আমি এ প্রস্তাবের সাথে ঐক্যমত পোষণ করে কয়েকটি দাবি উত্থাপন করতে চাই।’
রাকসুর সাবেক ভিপি ফজলে হোসেন বাদশা সেদিন সংসদে আরও বলেছিলেন, ‘আট বছর ধরে ইসরাইল একক সিদ্ধান্তে প্যালেস্টাইনের ওপর অবরোধ করে রেখেছে। এর বিরুদ্ধে কোন কথা উচ্চারিত হতে দেখি না জাতিসংঘ থেকে। আমরা এর নিন্দা জানাই। অবরোধ তুলে নিতে হবে প্যালেস্টাইনের ওপর থেকে। এটা আমাদের বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি। গাযা এলাকায় এবং জেরুজালেমে সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর করার অধিকার তাদেরকে দিতে হবে; যদি ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্ম সনদ জাতিসংঘ মেনে নিয়ে থাকে। আমি আরেকটি দাবি করতে চাই। সেটি হলো- ইহুদি বসতি বন্ধ করতে হবে। আজকের যুদ্ধের মূল কথা হচ্ছে এই।’
বাদশা বলেন, ‘আর কয়েকদিন পর প্যালেস্টাইনে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এই নির্বাচন একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। পিএলও-র সঙ্গে হামাসের একটি ঐক্য-প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে। যদি সেই ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সমগ্র প্যালেস্টাইনের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হতে পারতো। আজকে ইহুদিরা এটি বুঝতে পেরেছে। পশ্চিমা দুনিয়া বুঝতে পেরেছে। বাকি সাম্রাজ্য বুঝতে পেরেছে। তাই প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন রাষ্ট্রে যাতে পরিণত না হতে পারে ফিলিস্তিন, সে জন্য তার বিরুদ্ধে এই হামলা।’
বক্তব্যের শেষে ফজলে হোসেন বাদশা বলেছিলেন, ‘আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে জন্ম গ্রহণ করেছে। আমরা অন্য দেশের মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান দেখাতে চাই। আমরা ফিলিস্তিনী জনগণের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, সম্মান জানাই এবং তাদেরকে পূর্ণ সমর্থন জানাই।’
শুক্রবার থেকে ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আজ ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধবিরতি হলো। সকলেই আনন্দ করছে। প্যালেস্টাইনে উৎসব হচ্ছে। আমাদের দেশের জনগণও খুশি। কিন্তু এখনও ভাবছি স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র কতদূর? সমস্যার শেষ কোথায়? আজকের তানোর