রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৫৮ pm
ডেস্ক রির্পোট: সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিন শুনানির রায় বিলম্বের ঘটনাকে ‘ওল্ড প্রাকটিস’ উল্লেখ করে ‘এটাই রাষ্ট্রের বর্তমান চরিত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন। বিএনপির উদ্যোগে ‘অবরুদ্ধ গণতন্ত্র, শৃঙ্খলিত গণমাধ্যম, মুক্তি পথ কী?’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোথায় যাবেন? জুডিশিয়ারি! আজকে রোজিনা ইসলামের জামিনের শুনানি হয়েছে। রায় দিবে রোববার। সেইম ওল্ড প্রাকটিস। আমাদের (বিএনপি নেতা) সঙ্গে যে কী আচরণ করার হয় সেটা তো আমরা ধর্তব্যের মধ্যে নেই না। যে আমরা রাজনীতিবিদ, আমাদের প্রাপ্য-এটা হবে। কিন্তু দ্যাটস দি রিয়েলিটি। এই জিনিসটা আমাদের বুঝতে হবে এটাই রাষ্ট্রের চরিত্র। এই রাষ্ট্র যারা শাসন করছেন, তারা রাষ্ট্রকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার রাষ্ট্র বাকশাল প্রতিষ্ঠার জন্য তারা অতীতেও করেছিলেন, সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।’
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপোষহীন সংগ্রাম থেকে সকলকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগুনোর কথাও বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘রোজিনা ইসলামের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সামগ্রিক যে বাংলাদেশের আজকে চেহারা, সেই চেহারার একটা অংশ। সি ইজ নট অনলি দ্যা ভিকটিম, এখানে ধারাবাহিকভাবে ইতিপূর্বে এই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একের পর এক এই সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছে, সংবাদপত্র, গণমাধ্যমের ওপর নির্যাতন নেমে এসেছে, সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং সাংবাদিকদের দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে, হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের যে চিত্র সেই চিত্র কিন্তু শুধু সংবাদপত্রের জন্য নয়, বাংলাদেশের মানুষের জন্যে অত্যন্ত ভীতিকর একটা চিত্র। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। লক্ষ্যটি হচ্ছে, দেশে এমন একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের কোনো বক্তব্য থাকবে না, ভিন্নমত ধারণ করবার, পোষণ করবার কোনো উপায় থাকবে না। তারা তথাকথিত উন্নয়নের নামে লুটপাট ডাকাতি-এসব চালিয়ে যেতে থাকবে। এ কাজগুলো একেক করে সুচিন্তিতভাবে করে গেছে। প্রথমে তারা সংবিধানকে পরিবর্তন করেছে। সংবিধানকে কেটে কেটে তাদের মতো করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে একদিকে যেমন সংবাদপত্রের ওপর আঘাত আসছে অন্যদিকে মানুষের অধিকার যে নিয়ে কাজ করেন তাদের ওপরও আঘাত আসছে চরমভাবে। নারী অধিকার আন্দোলনের নেত্রী অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীকে ফেক অডিও তারা (সরকার) ছেড়ে দিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছে, তিনবার তাকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। একইভাবে আমাদের ৪০০-৫০০ নেতাকর্মী ও আলেম-উলামা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরকে গ্রেপ্তার করল, তা এখনো অব্যাহত রেখেছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করে, উদঘাটন করে, যোগার করে-এটাকে চুরি করা বলে না। সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা রয়েছেন, দালাল রয়েছেন-তারা কানাডায় সেকেন্ড হোম করার জন্য সুইজল্যান্ডে টাকা পাচার করছে। এ দেশে এখনো দুর্নীতিসহ সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে রাজনীতিবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষবিদসহ অনেকেই সরকারের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তার সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সব দোষ রাজনীতিবিদদের দেওয়া হয়। কথা দিচ্ছি আপনারা যদি পেশা ও নীতিবোধের কারণে একত্রিত থাকেন, আমরা রাজনীতিবিদরাও আপনাদের পাশে আছি এবং শেষ পর্যন্ত লড়াই করব। সেক্ষেত্রে গণমাধ্যমেও প্রতিবাদের খবর প্রকাশ করতে হবে। সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গ্রেপ্তার, নির্যাতনে আপনাদের মাঝেও উপলব্দি হতে হবে-এটা সাংবাদিকদের পেশার ওপর আঘাত।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এভাবে দেশ চলতে পারে না। যারা এখনো অনুধাবন করতে পারছেন না, তারা কখন অনুধাবন করবেন? এটা এখন শ্রেষ্ঠ সময়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, আজ রক্তবীজের ছাপ কিন্তু সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। এই জেবুন্নসাকে যেরকম দেখেছেন, এই জেবুন্নেসা হচ্ছে আমাদের সামনে এই চরিত্র যে, আমলাতন্ত্রে জেবুন্নেসায় ভরে গেছে।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, সাংবাদিকদের মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবকে সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, বর্তমান সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ও মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এলিনা খান এই ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন। সূত্র : আমাদের সময়।