শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৪৩ am

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ বাংলাদেশ ও ভারত ভিসা জটিলতায় চার যৌথ সিনেমা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক
ভোলাহাটে বাঁচার জন্য কাজে নেমেছে থ্যালিসিমিয়া রুগী জসিম

ভোলাহাটে বাঁচার জন্য কাজে নেমেছে থ্যালিসিমিয়া রুগী জসিম

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : দূরন্ত বালক মো. মোজাম্মেল হক জসিম। বয়স ১৮ বছর। আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ এই শিশুর দেহে লুকিয়ে আছে থ্যালাসিমিয়া রোগ। তাঁকে দেখে মনে হয় এখন তার বয়স ১০ বছর। জসিম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার গোহালবাড়ী গ্রামের মোঃ গোলাম মোস্তফার ২য় সন্তান। বড়টা মেয়ে, ছোটটি ৫ বছরের ছেলে। দরিদ্র পরিবারের  হঠাৎ বিপদ আছড়ে পড়লো।

৯ মাস বয়সে ধরা পড়লো জসিমের থ্যালাসিমিয়া রোগ। দিনের পর দিন এখন পর্যন্ত এ রোগের পিছনে খরচ করতে করতে হিমসিম খেয়ে পড়েছেন। দিন আনা দিন খাাওয়া কামলা দেয়া পরিবারটির উপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। দূরন্ত জসিম আর কতদিন বাবা-মায়ের ঘাড়ে চেপে নিজের খাওয়া-পরা, অসুখের খরচ চাইবে। তার অসুখের খরচ চালাতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছে। আর বসে থাকতে চাইনা জসিম।

এদিক ওদিক কাজের সন্ধান করতে গিয়ে উপজেলার মেডিকেল মোড়ের সবজি বাজারের দয়ালু এক তালার ক্ষুদ্র মেকার মনিরুল ইসলাম মুনি কাজের সুযোগ দিলেন। চট বিছিয়ে দোকারে এক পাশে বসে জসিম নিজের মনমত একটি ছোট টর্চ লাইট ভালো করছে। মনমরা অসুস্থ একটি ছেলেকে কাজ করতে দেখে কৌতুলহল নিয়ে পাশে বসলাম। তার ব্যাপারে জানতে আগ্রহ দেখালে হাস্যজ্জোল জসিম আজকের পত্রিকাকে তার কষ্টের জীবন কাহিনি হাসি মুখে বলতে শুরু করলো। জসিম জানায়, আমার বাবা আগে একটা বিয়ে করেছিল।

বাচ্চা না হওয়ায় আমার মা জোসনাকে বিয়ে করে। প্রথমে আমার একটা বোন হয়। তার বিয়ে হয়ে গেছে। তারপর আমার জন্ম হয়। আমি নাকি জন্মের পর পর খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন ৯ মাস বয়সে আমাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। সেখানে আমার  থ্যালাসিমিয়া রোগ ধরা পড়ে। তখন থেকে ১মাস পর পর ১’শ কিলোমিটার দূরে রাজশাহীতে গিয়ে রক্ত দিতে হতো। সময় মত রক্ত দেয়া না হলে চলাফেরা করা খুব কষ্ট হতো। এভাব চলতে চলতে ডাক্তারের পরামর্শে ৯ বছর বয়সে লিভারের অপারেশন করি।

এ সময় ডাক্তার বলেন, অপারেশন করলে এ অসুখ ভালো হয়ে যাবে না, হয়তো মারা যাবে। এমন কথায় আমার মা বলছে মানুষকে তো মরতে হবেই। অপারেশন করলে ভালো হলে হবে না হয় মরলে মরে যাবে বলে অপারেশন করে ফেলি। অপারেশনের পর সম্পন্ন ভালো হয়নি। এখন আড়াই ৩ মাস পর পর রক্ত দিতে হয়। জসিম বলেন, আগের চেয়ে এখন আল্লাহর রহমাতে ভালো আছি। তিনি বলেন, ২বার থেকে আর রাজশাহী যেতে হয় না ভোলাহাট হাসপাতালে রক্ত দেয়া যাচ্ছে।

জসিম বলেন, আমার অসুখে খরচ করতে করতে খুব বিপদ হয়ে গেছে। আমাকে রাজশাহী রক্ত দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার যাতাযাতসহ অন্যান্য খরচের টাকা না থাকলে পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন দিয়ে চালাত। আমার বাবা মানুষের অল্প জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে মা চরকায় সুতা কেটে ৭/৮’শ টাকা আয় করতো।

জসিম আরও বলেন, আমার বাবা- মাকে একদিন আমার অসুখে কত খরচ হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, তোর ওজন আর টাকার ওজন সমান। কত খরচ হয়েছে এভাবেই বলেছে আমাকে। ধীরে ধীরে বড় হচ্ছি আমার কষ্টের মাত্রাটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমার বয়সী আত্মীয়-স্বজনেরা, পাড়া-প্রতিবেশীরা কলেজে পড়া-লেখা করছে। কেউ আর্মির চাকরি করছে।

কিন্তু আমার ভাগ্যে কিছুই জুটলো না। শুধুই আপসস। একপর্যায়ে সকল দুঃখ কষ্টকে বুকের মধ্যে চেপে অভাবি বাবা-মার সংসারে হাল ধরার চেষ্টায় কাজের সন্ধ্যানে ঘুরতে ঘুরতে সামন্য মায়নায় কাজ দেয় মেডিকেল মোড়ের মেকার মনি ভাই। ছোট দোকান তালা ভালো করা, চাবি বানানো, গ্যাসের চুলা ভালো করা, চর্ট লাইট ভালো করা কাজে ৩ বছর পূর্বে জড়িয়ে পড়ি। ছোট দোকানে তেমন আয় নাই। তারপরও আমাকে প্রতিদিন ৫০টাকা করে দেয়। জসিম বলেন, এ আয়ের টাকা আমার বাবা-মাকে দিলে ঋণের টাকা শোধ করে কখনো সংসারের খরচ করে।

জসিমের মা জোসনা বলেন, ৯ মাস বয়সে এ রোগ ধরা পড়ে জসিমের। ১ মাস পর পর ৯ বছর বয়স পর্যন্ত ১ ব্যাগ করে রক্ত দিতে হতো তাকে। সাথে নিতে হতো আয়রন কমানোর ব্যয়বহুল ঔষধ। ওষুধ খেলে রক্ত নিলে একদম  সুস্থ স্বাভাবিক আর আট-দশটা বাচ্চার এু থাকতে পারে। কিন্তু রক্ত কমে গেলে দুর্বল হয়ে যায়।

মা জোসনা আরো বলেন, ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। জসিমের থ্যালাসিমিয়া রোগ ধরা পড়ার পর তিনি সংসারে নানা কটু কথা, অবজ্ঞা-অবহেলার শিকার হয়েছেন। তিনি ও তার স্বামী অন্যের বাড়িতে, কৃষি মাঠে দিনমজুরী করে সামান্য আয় দিয়ে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন।
বাবা গোলাম মোস্তফা বলেন, সংসারে অভাব থাকলেও আমার কাছে ছেলের তুলনায় টাকার কোন মূল্য নাই। সকলে বলে, ছেলে তো বেশি দিন বাঁচবে না, চিকিৎসা করিয়ে কি হবে। অন্যের কথায় কান দেই না, ছেলেটা আমাকে বাবা বলে ডাকে এতেই আমার শান্তি।” আজকের তানোর

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.