শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৫২ am
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আমরা একটি ছোট্ট মেয়ের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। সেখানে একটি মোবাইল বেজে চলছিল অবিরাম। আমরা সেই শব্দ অনুসরণ করে বুলডোজার ও হালকা সরঞ্জাম ব্যবহার করে কয়েক ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই।’
বেসামরিক উদ্ধারকর্মী মেদহাত হামদান। ইসরায়েল হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজা সিটিতে উদ্ধারকাজে অংশ নিতে এসেছেন খান ইউনিস থেকে। তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে হতাহতদের উদ্ধারে টানা ১১ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছিলেন। তিনি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার কাছে এই উদ্ধারের বর্ণনা দেন।
ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তিনটি মৃত শিশুর লাশ বের করেছেন হামদান। সেই অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই কাজ করতে এসে যেন আমার ভেতর থেকে সব ডরভয় চলে গেছে। এখন আমি আর বিস্মিত হই না, কিন্তু আমরা যখন ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে শিশুদের লাশ বের করছি, তখন আবেগ আর বাঁধ মানে না।’
এই উদ্ধারকর্মী বলেন, ‘এক নারী তাঁর দুই ছেলে, দুই মেয়েসহ নিহত হয়েছেন। এই শিশুরা কি রকেট ছুড়েছিল? তারা ঈদের আনন্দ করতে পারেনি, এটাই কি যথেষ্ট ছিল না? তারা শিশু। সবচেয়ে বড়টি চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত।’
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল টানা সপ্তম দিনের মতো বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ আজ রোববার ভোরের হামলায় অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে দুটি আবাসিক ভবন।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, গতকাল রাতে এক ঘণ্টা ধরে দেড় শতাধিক রকেট বৃষ্টির মতো ছোড়া হয়েছে। জরুরি সহায়তা দল ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে হতাহতদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গাজা উপত্যকার আল-ওহেদা শহরকে কেন্দ্র করে ৭০টির বেশি রকেট ছোড়া হয়েছে। এতে আবাসিক ভবন, অবকাঠামো ও সড়ক পুরোপুরি বা কোথাও কোথাও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাজায় ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রসের (আইসিআরসি) প্রধান মিরজাম মুলার বলেন, গত কয়েক দিনে সহিংসতার ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দল খুব কমই বের হতে পারছে। সহিংসতার এই তীব্রতা অবশ্যই কমানো উচিত। তাহলে আমরা মানবিক পরিস্থিতি কি পর্যায়ে আছে, তা বোঝার সুযোগ পাব এবং অত্যন্ত জরুরি সহায়তা দিতে পারব।’
মিরজাম বলেন, ‘আমি এখানে দুদিন ছিলাম…এর মধ্যে যা দেখলাম তাতে হৃদয় ভেঙে যায়।’খলিল আল-কোলাক নামের এক বাসিন্দা বলেন, তাঁর পারিবারিক দুটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মধ্যরাতে বোমার শব্দে আমরা জেগে উঠি। আমাদের পরিবারের মাত্র দুজন বেঁচে আছে। আর ১৪ জন মারা গেছে। তাদের মধ্যে ৬ জন এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে।’ সূত্র : প্রথমআলো, আজকের তানোর