শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:৪৯ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘বাঁচো, তুমি বাঁচো ধীরে স্থির, অনাবিল বেঁচে থাকো; এক বুক রৌদ্রছায়া নিয়ে বাঁচো।’ কবি শামসুর রাহমানের এই কবিতার চরণ কটিই শুধু ফলকে আছে। গাছ নেই, ছায়াও নেই।
রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ির আমবাগানের একটি গাছের গোড়া ঘিরে পাকা বেদি তৈরি করে তার গায়ে ‘রৌদ্রছায়া’ নামের ফলক বসিয়েছিলেন পুঠিয়ার সাবেক ইউএনও মো. ওলিউজ্জামান। একইভাবে বাগানের ৯টি আমগাছ ও কয়েকটি নারকেলগাছের গোড়াও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এর কয়েক মাসের মধ্যেই গাছগুলো মরে গেছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, শিশুপার্ক করা হলো নাকি রাজবাড়ির গাছগুলো ‘হত্যা’ করা হলো।
২০২০ সালের ১৭ মার্চ পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনের সাংসদ মনসুর রহমান পুঠিয়া রাজবাড়ির পূর্ব পাশের ২ দশমিক ৬৯ বিঘা আয়তনের এই বাগানকে ‘শেখ রাসেল শিশুপার্ক’ হিসেবে উদ্বোধন করেন। এই পার্কের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী ছিলেন সাবেক ইউএনও ওলিউজ্জামান। এখন প্রশ্ন উঠেছে, শিশুপার্ক করা হলো নাকি রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী গাছগুলো ‘হত্যা’ করা হলো।
ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, টিআর-কাবিখা প্রকল্প থেকে ছয় লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে গাছের গোড়াগুলো বাঁধানো হয়। বাগানের যে গাছটি সবচেয়ে বড় ছিল সেটির গোড়া একটি মঞ্চের মতো বড় করে বাঁধানো হয়েছিল। সেই বেদির সঙ্গেই ইউএনও ‘রৌদ্রছায়া’ নামের ফলক বসিয়েছিলেন। এখন শুধুই বেদি আছে। নকশা আছে। গাছ নেই। গাছের গোড়াটা এখনো বেদির মধ্যেই রয়ে গেছে। সম্প্রতি বাগানের মরা গাছগুলো কেটে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী নূরুল আমিনের বাড়ি পুঠিয়ায়। পুঠিয়াকে পর্যটন নগরী হিসেবে বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
তিনি বলেন, শতবর্ষী আমগাছগুলো পুঠিয়ার রাজা-রানির স্মৃতি বহন করছে। সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকেরা এই রাজবাড়ি যেমন দেখতে আসেন, তেমনি তাঁরা রাজা-রানির স্মৃতিধন্য এই আমগাছগুলোও দেখেন। কর্তৃপক্ষ কোনো দিনই গাছগুলোর কোনো ধরনের পরিচর্যা করেনি। তার ওপর গাছগুলোর গোড়া বেঁধে দেওয়ার সময় কাজটা প্রকৃতিবান্ধব হচ্ছে কি না, গাছগুলো আদৌ বাঁচবে কি না, বিষয়টি মোটেই আমলে নেয়নি।
গাছগুলো বাঁচানোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার ভূঁইয়া বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
যোগাযোগ করা হলে বন বিভাগ পুঠিয়ার দায়িত্বে থাকা ফরেস্ট রেঞ্জার এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, গাছের গোড়া বাঁধানোর আগে তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি।
বর্তমানে পুঠিয়ার ইউএনও নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, আগের ইউএনও শিশুপার্কের কাজ শুরু করেছিলেন। তার আগে রাজবাড়ির ওই আমবাগান বেদখল ছিল। তিনিই বাগানটি পুনরুদ্ধার করেন।
ইউএনও বলেন, এগুলো রাজা-রানির সময়ের গাছ। বয়স হয়েছে। এমনিতেও হয়তো মারা যেত। তবে গাছের গোড়া বাঁধার কারণে হয়তো গাছগুলোর মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়েছে। এখন পার্কটিকে নতুন করে সাজানোর জন্য তাঁরা ২৫ লাখ টাকার বরাদ্দ পেয়েছেন। আরও বরাদ্দ আসছে। সব মিলিয়ে মোট ২৯ লাখ টাকার কাজ হবে। আজকের তানোর