শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:০৮ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদের শেষ দিনে ১৪১ জনকে নিয়োগ দিয়ে যান উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ধরণের নিয়োগ না দেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লিখিত কঠোর নির্দেশনা ছিল।
ইউজিসি বলছে, সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিয়োগ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। এ কারণে এই নিয়োগ আদেশের কোন কার্যকরিতাও নেই। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এই নিয়োগ অবৈধ। এই অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জড়িতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত বৃহস্পতিবার উপাচার্য আব্দুস সোবহানের শেষ কর্মদিবস ছিল। এই দিন ৯ জন শিক্ষক, ২৩ জন কর্মকর্তা, ৮৫ জন নিম্নমান সহকারী এবং ২৪ জন সহায়ক কর্মচারী পদে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ আদেশ জারি করে যান ভিসি। নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তান, স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজন, ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী এবং সাংবাদিক রয়েছেন।
নিয়োগ আদেশ জারি করেই পুলিশ প্রহরায় ক্যাম্পাস ছাড়েন উপাচার্য। তবে এর আগে নিয়োগ না পাওয়া ও পাওয়াদের মধ্যে ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে ওইদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ নিয়োগের ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটিও গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ আলমগীর বলেন, ওই নিয়োগ আদেশ অটোমেটিক বাতিল হবে। ওই নিয়োগের কোন কার্যকরিতাও নেই। উপাচার্য একটি নিয়োগ আদেশ দিয়ে গেছেন। এটাই নিয়োগ হয়ে গেলো বলা যাবে না। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, অনধিক ছয় মাসের জন্য এডহক নিয়োগ দেয়া হয়। এডহক নিয়োগের সময় বাড়ানো যায়। তবে নিয়োগ স্থায়ী করতে হলে পত্রিকায় সার্কুলার দিয়ে প্রার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। নিয়োগ স্থায়ী করা না হলে ওই নিয়োগের কোন কার্যকরিতা থাকে না।
অধ্যাপক মুহম্মদ আলমগীর বলেন, তদন্ত কমিটিকে বলা হয়েছে এই অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সুপারিশ করবেন তাঁরা। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ইউজিসির অপর এক সদস্য বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী উপাচার্য এডহক নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা আছে। তবে এর আগে একই আইনে বলা আছে, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন, বিধিসহ দায়িত্ব পালন করতে হবে বিশ্বস্তার সাথে। কিন্তু এভাবে নিয়োগ দিয়ে তিনি তার দায়িত্ব পালনের বিশ্বস্ততা হারিয়েছেন। এছাড়া নিয়োগের জন্য প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশও নিতে হয়।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকারি এক প্রজ্ঞাপন দ্বারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এডহক নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়। প্রজ্ঞাপন আইনেরই অংশ। সে কারণেও উপাচার্য এভাবে নিয়োগ দিতে পারেন না। এটা আইনে লঙ্ঘন।
জানা গেছে, এই অবৈধ নিয়োগ আদেশে সাক্ষর নেই রেজিষ্ট্রারের। এর পরের কর্মকর্তা অতিরিক্ত রেজিষ্ট্রারও অবৈধ নিয়োগ আদেশে সাক্ষরে রাজি না হওয়ায় উপাচার্যের পক্ষের এক উপ-রেজিষ্ট্রার সাক্ষর করেছেন।
নিয়োগ পাওয়া এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নিয়োগ পাওয়ায় তারা বৃহস্পতিবারই যোগদান করেছেন। তবে এই নিয়োগ নিয়ে নিয়োগ প্রত্যাশীদের মধ্যেই হতাশা তৈরি হয়েছে। তাদের চাকরি টিকবে কি টিকবে না এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
২০০৯ সালে প্রথম মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পান অধ্যাপক আব্দুস সোবহান। নিয়মের বাইরে গিয়ে সে সময় কয়েকশ শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। ওই সময় প্রশাসনিক নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। নানা অনিয়ম থাকার পরও ২০১৭ সালের ৭ মে দ্বিতীয়বারের মতো উপাচার্য পদে নিয়োগ পান তিন। একই ভাবে নানা প্রশাসনিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। যোগ্যতা শিথিল করে মেয়ে ও জামাতাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ, রাষ্ট্রপতিকে অসত্য তথ্য দেওয়াসহ নানা অভিযোগ ওঠে।
এসব অনিয়মের কারণে গত বছরের জানুয়ারিতে ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমা পড়ে। পরে প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিযোগসমূহ তদন্তে ইউজিসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটি উভয় পক্ষের বক্তব্য উপস্থাপনে উন্মুক্ত শুনানির আয়োজন করে।
তদন্ত কার্যক্রম শেষে গত ২১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ইউজিসি। তদন্তে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যদের বিরুদ্ধে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১০ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখাসহ বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে উপাচার্যকে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সূত্র- ইত্তেফাক। আজকের তানোর