শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৩৯ am
ডেস্ক রির্পোট : আসন্ন ঈদ ঘিরে দেশব্যাপী অপরাধী চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে উঠছে। এমনতিই প্রতি বছর ঈদের সময় শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও মৌসুমি অপরাধীরা তৎপর হয়ে ওঠে। তবে করোনার কারণে লকডাউন থাকায় প্রথমদিকে অপরাধ তৎপরতা কিছুটা কম ছিল।
কিন্তু ঈদ এগিয়ে আসতে থাকায় ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল হওয়ায় মানুষের চলাফেরা বেড়েছে। কারখানা, শপিংমল খুলে দেয়া হয়েছে। শহরে রাত-দিন বেড়েছে অস্বাভাবিক যান চলাচল। আর এ সুযোগেই অপরাধীরা তৎপরতা শুরু করেছে। ছিনতাইকারী, মলমপার্টি, অজ্ঞানপার্টি, চাঁদাবাজচক্রসহ নানা কিসিমের অপরাধীরা এখন শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
অন্যবারের মতো এবারো একাধিক অপরাধী চক্র তৎপর রয়েছে এমন তথ্যে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বড় অঙ্কের অর্থবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানি এস্কর্ট সেবা দিচ্ছে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঈদ সামনে রেখে অপরাধী চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। দুর্বৃত্তরা নানা কৌশলে মানুষের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। ওসব চক্রের মধ্যে রয়েছে অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, থাবা-পার্টি এবং টানা-পার্টি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও ওসব অপরাধীদের দৌরাত্ম্য থেমে নেই। ঈদের কেনাকাটায় মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ছিনতাইসহ মৌসুমি অপরাধীরা মাঠে নেমেছে। আর তাদের ধরতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশ ও র্যাব। অপরাধী ধরতে ছদ্মবেশে নগরীর ব্যস্ত জায়গা ও শপিংমলগুলোর পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে ডিবি।
সূত্র জানায়, ঈদ সামনে রেখে সংঘবদ্ধ অপরাধীরা রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড, সদরঘাট ও রেলস্টেশন এলাকায় আসা লোকজনকে টার্গেট করে সখ্য স্থাপন করে। পরে তাদের অপর সহযোগিরা টার্গেটকৃত ব্যক্তি ও তাদের স্বজনদের চেতনানাশক ওষুধ মেশানো পানীয় বা খাদ্যদ্রব্য খেতে আমন্ত্রণ জানায়। টার্গেট করা ব্যক্তি রাজি হলে তাকে চেতনা নাশক মেশানো ওই খাবার খাওয়ায় ও নিজেরা সাধারণ খাবার খায়।
পানীয় বা খাবার খেয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তি অজ্ঞান হলে অপরাধীরা তার মূল্যবান জিনিসপত্র, টাকা-পয়সা ও মোবাইলফোন নিয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। ওসব ক্ষেত্রে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা চেতনানাশক ওষুধ মেশানো খাদ্যদ্রব্য হিসেবে চা, কফি, জুস, ডাবের পানি, ক্রিম জাতীয় বিস্কুটসহ বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহার করে। আবার কখনো কখনো অজ্ঞান ব্যক্তির মোবাইল ফোন ব্যবহার করে তার স্বজনদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ ও অন্যান্য মাধ্যমে মুক্তিপণও আদায় করে।
সূত্র আরো জানায়, ঈদ ঘিরে ইতিমধ্যে প্রতারকদের তৈরি কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জাল টাকা তৈরির সঙ্গে জড়িত চক্রগুলো সারাবছর তৎপর থাকলেও উৎসবে তারা বড় টার্গেট নিয়ে মাঠে নামে। এ সময় মুদি দোকান থেকে শপিংমল সবখানে উপচেপড়া ভিড় থাকে। আর জাল নোট চক্রের সদস্যরা এ সুযোগ কাজে লাগায়। এমনকি অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাংকে লেনদেন ও এটিএম বুথেও জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়া হয়। তবে জাল নোটের ওসব চক্র ধরতেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে সক্রিয় রয়েছে। মূলত ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকার কারবারি, অজ্ঞান, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মাহবুবুর রহমান জানান, এবার বড় অঙ্কের অর্থবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিএমপি মানি এস্কর্ট সেবা দিচ্ছে। সেজন্য বড় অঙ্কের অর্থ বহন ও উত্তোলনে সতকর্তা অবলম্বনসহ এ সেবা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি সাধারণ জনগণকেও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ প্রতারক ও দুর্বৃরা পান, ডাব, শরবত, মসলা-মুড়ি ও নানা ধরনের মুখরোচক খাদ্যের বিক্রেতা হিসেবে হকারি করে। ভদ্র চেহারার যাত্রীবেশে বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, সদরঘাট এমনকি বিমানবন্দরে ঘুরে যাত্রীদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারের পর কারামুক্ত হয়ে তারা একই কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
ওই কারণে তারা খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করে। সূত্র : এফএনএস। আজকের তানোর