শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, সময় : ১২:১৩ am
ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক :
রাজশাহীর তানোরে ১৪ বছর ধরে জাল সনদে শিক্ষকতার চাকুরি করছেন মহসিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি উপজেলার কামারগাঁ ইউপির কামারগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। একজন মানুষ গড়ার কারিগরের এমন জালিয়াতির খবর ছড়িয়ে পড়লে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষক সমাজ। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই শিক্ষককের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থাসহ বিভাগীয় মামলার দাবি তুলেছেন শিক্ষক সমাজ।
যাতে করে আর কোন শিক্ষক জালিয়াতি করে শিক্ষকতার মত মহান পেশায় লিপ্ত না হতে পারে। কারণ জালিয়াতির মাধ্যমে চাকুরি নিলে তার দ্বারা জাল শিক্ষার্থী গঠন হবে। তার জালিয়াতির বিষয়ে বর্তমান প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার সবকিছু জানার পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। সুতরাং প্রধান শিক্ষকও দায় থেকে এড়াতে পারেন না। তাকেও আইনের আওতায় আনার দাবি ওই স্কুলের শিক্ষকসহ অভিভাবক মহলের। অবশ্য দুজনেই বিগত সরকারের সময় নিয়োগ পেয়েছেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত সরকারের সময় উপজেলার কামারগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পান মহসীন আলী। তিনি ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৩ তারিখে যোগদান করেন। তার ইনডেক্স নম্বর ১০৪২২১৭৮। নিবন্ধন ২০০৮, রেজি নম্বর ১২২১১০৬৬৭, রোল নম্বর ৮০০০৬৩৮৪। শিক্ষক মহসীনের নিবন্ধনটি জাল বা অন্য শিক্ষকের বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি কামারগাঁ শ্রীখণ্ডা গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকেন। তার বাড়ি বাগমারা উপজেলায়। তিনি ২২ হাজার ৯২৩ টাকার বেতন পান। যোগদান থেকে তার চাকুরির বয়স ১৫ বছর। বছরে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৭৬ টাকা বেতন ভাতা পেয়েছেন। সেই হিসেবে ১৫ বছরে প্রায় ৪১ লাখ ২৬ হাজার ১৪০ টাকা বেতন পেয়েছেন এই জালিয়াত শিক্ষক। অর্থাৎ সরকারি কোষাগার থেকে এপরিমান টাকা লোপাট করেছেন তিনি।
ওই স্কুলের শিক্ষকসহ স্থানীয়রা জানান, একজন শিক্ষক জেনে বুঝে জাল সনদ দিয়ে চাকুরি নিয়ে ১৫টি বছর আরাম আয়েশ করেছেন। তার জাল সনদের ঘটনায় গত বছরের ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাসের দিকে মিনিস্ট্রি থেকে তদন্ত হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ও প্রধান শিক্ষক এবং জাল শিক্ষকসহ ওই সময়ের ক্ষমতা ধরেরা টাকার বিনিময়ে তদন্ত ধামাচাপা পড়ে আছে। তদন্তের প্রায় এক বছর হতে চললেও বহাল তবিয়তে আছেন মহসীন। তার সমুদয় টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতসহ বিভাগীয় মামলার দাবি তুলেছেন শিক্ষক সমাজ ও অভিভাবক মহল। কারণ দেশে সকল বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার করছেন। তার ধারাবাহিকতায় মহসীনদের মত শিক্ষকদের বাকি সময় শ্রীঘরে থাকায় শ্রেয়। তার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। শুধু মহসীন নয় ওই সময়ের প্রধান শিক্ষক ও বিগত সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বর্তমান প্রধান শিক্ষকসহ ওই সময়ের কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি হয়ে পড়েছে। শুধু বেতন ফেরত নিয়ে যেন এই জালিয়াতি ধামাচাপা দেয়া না হয়।
এবিষয়ে জানতে শিক্ষক মহসীনের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি অকপটে স্বীকার করে জানান, গত ফেব্রুয়ারী কিংবা মার্চ মাসে মিনিস্ট্রি থেকে তদন্ত টিম এসেছিল। ওই টিম যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে গেছে। তারা আমার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আমি সেটা মেনে নিব। এর বেশি কোন কথা বলতে পারব না বলে দাম্ভিকতা দেখান।
প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমারও একই ধরনের কথা বলেন। আপনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা আমার বিষয় নয়, তদন্ত টিম দেখবে। আমাকে এসব নিয়ে কোনকিছু বলবেন না বলে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পুনরায় ফোন দিয়ে নিয়োগ বোর্ডে কে ছিল কারা তদন্ত করেছেন প্রশ্ন করা হলে প্রচন্ড রাগান্বিত হন মানুষ গড়ার কারিগর এই শিক্ষক।
এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমানকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হলে তিনিও জানান, তদন্ত টিম দেখবে। তারপরও অভিযোগ পেলে দেখা যাবে বলে তিনিও দায় সারেন। তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার খায়রুল ইসলামকে অবহিত করা হলে তিনি স্কুলের নাম ও শিক্ষকের নাম বলতে বলে এড়িয়ে গেছেন। রা/অ