সমবার, ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, সময় : ০২:১৭ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে। চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বইছে ঠাণ্ডা বাতাস। ওঠেনি রোদ। কনকনে শীতে অসহায় হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে বেশ সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। সরকারি কম্বল বরাদ্দ শুরু হলেও এখনো মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়নি। আর চাহিদার বিপরীতে কম্বলের সংখ্যাও অনেক কম।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নে জনসংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। এবার তাদের জন্য ৩০০ পিস কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। এখনো কম্বল আসেনি।
তিনি বলেন, ‘৩০০ পিস কম্বল কার কাছে কিভাবে বিতরণ করব? প্রতিদিনই ৩০০ জনের বেশি মানুষ আসে কম্বলের দাবি নিয়ে। আমিই এখন বিপদে।’
রাজশাহীতে গত বুধবার থেকে বইছে ঠাণ্ডা বাতাস। সেইসঙ্গে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। এ অবস্থায় রাজশাহী মহানগরীর সাহেববাজার এলাকায় ফুটপাতের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে হুমড়ি খাওয়া ভিড় শুরু হয়েছে। কিন্তু এটুকু সামর্থ্যও যাদের নেই, তারা কাঁপছেন শীতে। সরকারিভাবে শীতার্তদের জন্য যে কম্বল বরাদ্দ এসেছে তা খুব অপ্রতুল বলছেন জনপ্রতিনিধিরা।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাজশাহীতে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন বৃহস্পতিবার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, ডিসেম্বর মাসের শুরুতে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রিতে নেমেছিল। তখন হিমেল হাওয়া ছিল না। এখন আবার কয়েক দিন থেকে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। এ কারণে তাপমাত্রা বেশি নিচে না নামলেও শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।
এদিকে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহে নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। খড়কুটো জ্বালিয়ে সকাল-সন্ধ্যা শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। জেলার ৯ উপজেলা ও ১৪টি পৌরসভায় কম্বল বরাদ্দ হয়েছে শীতার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য। তবে বেশিরভাগ এলাকায় কম্বল বিতরণ শুরু হয়নি। কম্বল পড়ে আছে গুদামে। ফলে শীতে কাঁপছেন মানুষ।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় সরকারিভাবে ২ হাজার ৬০০ কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা পৌঁছায়নি হতদরিদ্র শীতার্তদের মাঝে। দুই সপ্তাহ আগে কম্বলের বরাদ্দ এলেও তা উপজেলা পরিষদের গুদামেই পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যানরা। এখন পর্যন্ত এক পিস কম্বলও তারা হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন।
উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম মাখন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ বাসিন্দা পদ্মা নদীর পাড়ে বসবাস করে। একটু বাতাসেই তীব্র শীত অনুভব হয়। গত দুই সপ্তাহ ধরে শুনছি কম্বলের বরাদ্দ এসেছে, কিন্তু এখনো হাতে পাইনি।’ রা/অ
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফরহাদ লতিফ বলেন, কম্বলের বরাদ্দ দুই সপ্তাহ আগে পেয়েছি। এতিমখানাসহ কিছু জায়গায় প্রায় ৫০০ পিস বিতরণ হয়েছে। ইউনিয়ন প্রতি ৩০০ পিস হারে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ইউনিয়নগুলোতে তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দীন আল ওয়াদুদ জানান, পুরো জেলার জন্য ১০ হাজার কম্বল পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। এ টাকায় আরও প্রায় ৩৫ হাজার পিস কম্বল কেনা হয়েছে। এগুলো বিতরণের জন্য ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আরও পাঁচ হাজার কম্বল পাওয়া যাবে বলে চিঠি পেয়েছি।
তিনি বলেন, এই কম্বলও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কখনই তো চাহিদার সবটা পাওয়া যায় না। এভাবে চালিয়ে নিতে হয়। সামনে আরও কিছু কম্বল বিতরণের জন্য আসতে পারে। রা/অ