রবিবর, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, সময় : ০৫:৫৫ am
এম এম মামুন :
রাজশাহীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তালা ভেঙে অধ্যক্ষের চেয়ার দখল এবং পুলিশকে কিল-ঘুষি মারার দুই মামলায় আট আসামি আদালতে জামিন পেয়েছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টার সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলামের অনুসারিরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ তারা হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন প্রার্থনা করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক ফয়সাল তারেক জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়া আসামিদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের অব্যাহতি পাওয়া অধ্যক্ষ ড. গোলাম মাওলা, তার ছেলে ঐহিক, ভাইরা ভাই জিএম মাহবুব চৌধুরী, প্রতিষ্ঠানের সাচিবিক বিদ্যা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক মামুনুর রহমান, যুক্তিবিদ্যা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক মকবুল হোসেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আজিজুন নেসা ও রসায়নের সহকারী অধ্যাপক মল্লিকা সমাদ্দার রয়েছেন। এছাড়া রাজু নামের আরেক আসামি জামিন পেয়েছেন। আসামিদের জামিন শুনানি করেন হাইকোর্টের আইনজীবী রায়হান রনি এবং রাজশাহী জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মিজানুর রহমান বাদশা ও আনারুল হক।
আইনজীবী মিজানুর রহমান বাদশা বলেন, একই ঘটনায় দুটি মামলা করেছে। ওটা কোন মামলা হয়নি। প্রতিহিংসামূলক মামলা সেটা আমরা আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। পুলিশের একজন পরিদর্শক একটা ভিডিও দিয়েছিলেন, সেখানে কাউকে এজাহারের অপরাধ করতে দেখা যায়নি। ফলে আদালত আমাদের আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেছেন।
তিনি জানান, দুটি মামলার মধ্যে একটিতে ৯ জন এবং আরেকটিতে এই ৯ জনসহ মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে যাদের বাবার নাম আছে কিংবা সুনির্দিষ্টভাবে পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে তারা আইনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন। আর যাদের বাবার নাম উল্লেখ নেই তারা তদন্ত প্রতিবেদনের পর জামিন নেবেন।
শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজটি পরিচালনা করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন অধ্যক্ষ গোলাম মাওলার বিরুদ্ধে আওয়ামীপ্রীতির অভিযোগ সামনে আসে। তখন কয়েকজন শিক্ষক ও কিছু বহিরাগতদের দাবির প্রেক্ষিতে তাকে অব্যাহতি দেয় আরএমপি। তবে গত সোমবার ড. গোলাম মাওলা তার অনুসারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে যান। একটি কাগজ দেখিয়ে জানান, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে অব্যাহতি দেওয়ার বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে রিট করেছিলেন। হাইকোর্ট অব্যাহতির আদেশ স্থগিত করেছেন। ফলে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ দাবি করেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিয়ে রাখে। এক পর্যায়ে ড. মাওলার অনুসারীরা তালা ভেঙে তাকে ভেতরে ঢোকান এবং অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়ে দেন। দুপুরের পর পুলিশ যায়। তারা তালা ভেঙে ফেলার অভিযোগে কয়েকজনকে গাড়িতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশের সাথে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে কাউকে আটক না করেই ফিরে যায় পুলিশ। রাতে এ নিয়ে মামলা করা হয়।
নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে একটি মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আয়নাল হক। আর তালা ভেঙে অফিসে প্রবেশ এবং ড্রয়ারে থাকা ৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা চুরি করার অভিযোগে আরেকটি মামলা কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম। দুই মামলাতেই বেশিরভাগ আসামি জামিন পেলেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলামের অনুসারিরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ করেন। প্রতিষ্ঠানের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-অভিভাবক ফোরাম’ এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচি থেকে দুই মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। পরে সেখানে আসেন আরএমপি কমিশনার ও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তখন বিক্ষোভকারীরা আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তাকে একটি স্মারকলিপি দেন। এছাড়া পরে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেন।
এর আগে স্মারকলিপি গ্রহণের সময় পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, যারা অবৈধভাবে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ঢুকেছেন, পুলিশের গায়ে হাত দিয়েছেন, আসামি ছিনিয়ে নিয়েছেন অফিসের টাকা চুরি হয়েছে- ছবি-ভিডিওতে আমরা তাদের দেখেছি। আমরা দোষী সবাইকে আমরা আইনের আওতায় আনব। কাউকে আমরা ছাড়ব না। এ ব্যাপারে আমরা কোন দল-মতও দেখব না।
জামিন পাওয়ার পর ড. গোলাম মাওলা বলেন, তাকে অন্যায়ভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং চেয়ারে বসতে দেওয়া হচ্ছে না। দুটি মিথ্যা মামলা চাপানো হয়েছে। তার ১৭ বছর বয়সী ছেলেকে ২৬ বছর দেখিয়ে আসামি করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বিস্তারিত বলবেন। রা/অ