মঙ্গবার, ৩১ িসেম্র ২০২৪, সময় : ০৪:৪৩ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ৮ দিন পর আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তানোর থানায় হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত ২২ ডিসেম্বর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারী সেলিম রেজা বাদি হয়ে মামলটি দায়ের করেন। কিন্তু এ মামলা রুজুর ৭ দিনেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।
মামলায় ১ নম্বর আসামী দেখানো হয়েছে মো. সোহেল রানা (৪২)। তিনি উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র ইমরুল হকের আপন ভাই। বাড়ি হরিদেবপুর গ্রামে। এছাড়াও মামলার ৫ নম্বর আসামী শফি কামাল মিন্টু (৪২)। তিনি উপজেলার কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ও অত্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার বাড়ি কামারগাঁ গ্রামে।
অপরদিকে ওই মমলায় ৪ নম্বর আসামী করা হয়েছে তোফায়েল হোসেনকে (৪২)। তিনি উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমানে অত্র ইউপি মেম্বার। এর বাড়ি কামারগাঁ গ্রামে। এছাড়াও ২ নম্বর আসামী করা হয়েছে রেজাউল ইসলামকে (৪০)। তিনি তানোর পৌর যুবলীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। বাড়ি চাপড়া গ্রামে। আর তৌহিদুল ইসলাম, আ.লীগ সমর্থক। তাকে ৩ নম্বর আসামী দেখিয়ে মামলায় ৫০-৬০ জন অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার বাসিন্দা রাজশাহী-১ (তানোর গোদাগাড়ী) আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশি বিশিষ্ট শিল্পপতি অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক কেন্দ্রীয় বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তানোর থানা মোড়, মুণ্ডুমালা বাজার ও বাধাইড় ইউপিসহ বিভিন্ন এলাকায় পথসভা করার কথা ছিল। সেইমতে গত ১৫ ডিসেম্বর তানোর উপজেলায় ১৩-১৪টির মতো মাইক্রোবাস তানোর সদরে শোডাউন নিয়ে আসে তিনি। এর আগে দুটি মাইক্রোবাস উপজেলা পরিষদ ও ডাকবাংলো চত্বরে দেয়াল ঘেঁষে রাখা হয়।
খবর পেয়ে মাইক্রোবাসে হামলা ও ভাংচুর আর মারপিট শুরু করে বিএনপি নেতা মিজান গ্রুপের তানোর পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন তোফা ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিজানের ভগিনীপতি হাবিবসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীরা। প্রায় আধঘণ্টা পর্যন্ত চলে মারপিট ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আর ইট পাটকেল নিক্ষেপ। এতে জনদুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। হামলায় উভয় গ্রুপের অন্তত ৮ থেকে ১০ জন আহত হয়। পরে উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে থানা মোড়ে ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য লিফলেট বিতরণ ও পথসভা করেন অ্যাডভোকেট তারেক।
ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধমে খবর প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ১৭ ডিসেম্বর রাজশাহী নগরীর অলোকার মোড়ের একটি রেস্তোরাঁয় বিএনপি নেতা মিজান ও তার অনুসারীদের বহিষ্কার দাবিতে সংবাদ সম্মেলনও করেন তারেকের অনুসারী নেতাকর্মীরা। পরে ১৮ ডিসেম্বর দুপুরে তানোর বিএনপির পার্টি অফিসে মিজান অনুসারী নেতাকর্মীরা এ্যাডভোকেট তারেক কেউ বহিষ্কার দাবিতে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
কিন্তু এহেন ঘটনায় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে মামলায় কাউকে আসামী করা হয়নি। তবে, ২২ ডিসেম্বর গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা ইউপির ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারী সেলিম রেজা বাদি হয়ে উল্টো আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তানোর থানায় হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেছেন।
এবিষয়ে মামলার বাদি সেলিম রেজা বলেন, আসলে তেমন ভাবে মামলার আসামীদের কাউকে চেনেন না তিনি। তানোরে তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা যাদের নাম পরিচয় দিয়েছেন, কেবল তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। তবে, মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত বলে প্রমান পাবে তাদের বিরুদ্ধেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। তার এমন বক্তব্যের কল রেকর্ড এপ্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষণ রয়েছে।
এনিয়ে উপজেলার কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা শফি কামাল মিন্টু বলেন, শোনেছি বেশ কয়েকদিন আগে শোডাউন নিয়ে বিএনপির মিজান গ্রুপ আর তারেক গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। আমরা আ.লীগ করি, কিন্তু বিএনপির মাইক্রোবাস শোডাউনে যাবার প্রশ্নই আসেনা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তিনিসহ শুধু আ.লীগ ও যুবলীগের ৫ জন নামধারী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
এব্যাপারে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ঘটনার প্রায় সপ্তা খানেক পর বাদির অভিযোগ পেয়ে থানায় মামলা রুজু করা করা হয়েছে। বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান ওসি। রা/অ