শনিবর, ২৮ িসেম্র ২০২৪, সময় : ০১:৫৫ pm
ডেস্ক রির্পোট :
দীর্ঘদিন ধরে অস্বস্তিতে ভুগতে থাকা সবজির বাজারে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে। শীতের মৌসুম শুরু হয়ে গেলেও বাজারে কমছিল না সবজির দাম। এতে বেশখানিকটা চাপের মধ্যেই ছিলেন ভোক্তারা। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য তা ছিল ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’। তবে এই সপ্তাহে এসে অনেকটাই কমেছে সবজির দাম। একইসঙ্গে কমেছে সব ধরনের আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দামও। তবে এসব পণ্যের দাম কমলেও বেড়েছে মুরগির মাংসের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, নতুন বছরের আগমনকে কেন্দ্র করে মাংসের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
অন্যদিকে দাম বাড়ানোর প্রায় তিন সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি সয়াবিন তেলের বাজার। তেলের কোম্পানিগুলোকে অর্ডার দিয়েও তেল পাচ্ছেন না অভিযোগ করে বিক্রেতারা বলছেন, তাদের ঘোরানো হচ্ছে। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচাবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এই চিত্র।
সবজির দাম কমেছে অনেকটাই :
শীতকালীন সবজি আসা শুরু করেছিল আরও কয়েক সপ্তাহ আগেই। তবে নতুন সবজির আগমনেও সেভাবে কমছিল না দাম। তবে এই সপ্তাহে এসে বাজারে সব ধরনের সবজির দামই কমেছে। এতে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে জনমনে।
আজকে বাজারে টমেটো ১০০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৫০ টাকা, দেশি গাজর ৬০ টাকা, শিম ৫০-৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৭০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, উচ্ছে ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, লাল মুলা ৪০ টাকা, শালগম ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁয়াজকলি ৬০ টাকা, গাছসহ পেঁয়াজ ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০ টাকা, চাল কুমড়া ৮০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৩০ টাকা, প্রতি হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা করে।
এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আজ প্রতিকেজিতে টক টমেটোর দাম কমেছে ২০-৩০ টাকা, কাঁচা টমেটোর দাম কমেছে ২০ টাকা, শিমের দাম কমেছে ২০ টাকা, লম্বা বেগুনের দাম কমেছে ১০ টাকা, সাদা গোল বেগুনের দাম কমেছে ১০ টাকা, কালো গোল বেগুনের দাম কমেছে ১০ টাকা, শসার দাম কমেছে ৫-২০ টাকা, উচ্ছের দাম কমেছে ৩০ টাকা, করলার দাম কমেছে ২০ টাকা, লাল মুলার দাম কমেছে ২০ টাকা, ঢেঁড়সের দাম কমেছে ২০ টাকা, পটোলের দাম কমেছে ১০ টাকা, চিচিঙ্গার দাম কমেছে ১০ টাকা, ধুন্দলের দাম কমেছে ২০ টাকা, ঝিঙার দাম কমেছে ২০ টাকা, কচুরমুখীর দাম কমেছে ২০ টাকা, কাঁচা মরিচের দাম কমেছে ২০ টাকা। তবে প্রতি কেজিতে ধনেপাতার দাম বেড়েছে ৪০-৬০ টাকা এবং হালিতে কাঁচা কলার দাম বেড়েছে ৫ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
সবজি বিক্রেতারা বলছেন, এখন বাজারে সবজি বেশি আসছে বলেই দাম অনেকটাই কমেছে। আর এই অবস্থা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সবজির দাম শিগগিরই আর বাড়বে না।
এদিকে বাজার করতে আসা ক্রেতারা সবজির দাম কমাতে স্বস্তি প্রকাশ করেছে। আল-আমিন নামের এক ক্রেতা বলেন, অনেক দিন পরে মনে হয় কম দামে সবজি পাচ্ছি। এর থেকে যেন আর দাম না বাড়ে। আর কমলে তো আরও ভালো।
আরেক ক্রেতা মো. সুজন বলেন, দাম কমাতে ধনী-গরিব সবারই উপকার। যত দাম কমবে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ততই উপকার হবে। তাই সরকারের এদিকে নজর দেওয়া উচিত।
আলু-পেঁয়াজের দামও কমেছে :
আজ বাজারে নতুন আলু, নতুন পেঁয়াজ, পুরাতন আলু, ভারতীয় পেঁয়াজ ও চায়না রসুনের দাম কমেছে। গত সপ্তাহেও আলু পেঁয়াজের দাম ছিল কমতির দিকেই। আজকে কমলো আরেক ধাপ।
আজকের বাজারে প্রতি কেজি ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এর মধ্যে ছোট ও বড় সাইজের পেঁয়াজ একই দামে বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকা, নতুন দেশি পেঁয়াজে ৫০-৬০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে প্রতিকেজি।
এদিকে আজকে বাজারে প্রতিকেজি নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, নতুন লাল আলু ৫৫ টাকায়। আর পুরাতন লাল আলু ৫০ টাকা, সাদা আলু ৫০ টাকা, নতুন বগুড়ার আলু ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আজকে দেশি রসুন ২৪০ টাকা, চায়না রসুন ২২০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের সঙ্গে তুলনায় করলে দেখা যায়, নতুন দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ২০-৩০ টাকা করে এবং ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কমেছে ২০ টাকা করে। এছাড়া পুরাতন দেশি পেঁয়াজের ও ক্রস জাতের পেঁয়াজের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। এদিকে আজকে মানভেদে প্রতিকেজি নতুন দেশি আলু, পুরাতন সাদা ও লাল আলুর দাম কমেছে ১০ টাকা করে। আর নতুন বগুড়ার আলুর দাম কমেছে ২০ টাকা করে। এছাড়া প্রতি কেজিতে চায়না আদার দাম কমেছে ২০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
আলু পেঁয়াজের বিক্রেতা আবু বক্কর বলেন, নতুন আলু পেঁয়াজ বাজারে ক্রমাগত আসতে থাকায় এগুলোর দাম কমেছে। তবে আলু পেঁয়াজ আরও যখন পরিপক্ব হবে তখন দাম বাড়লেও বাড়তে পারে।
নতুন বছরের আগমনকে কেন্দ্র করে বাড়ছে মুরগির মাংসের দাম :
নতুন বছরকে স্বাগতম জানাতে মানুষ ৩১ ডিসেম্বর রাতটিকে বিভিন্নরকমভাবে উদযাপন করে থাকেন। চলে পার্টি ও খাওয়া-দাওয়া। আর এই সময়েই সাধারণত বেড়ে যায় মুরগির মাংসের দাম। কেননা তখন মুরগির মাংসের চাহিদা থাকে বেশি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি; নতুন বছরের আগমনকে কেন্দ্র করে বাড়ছে মুরগির মাংসের দাম।
আজকে বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া আজ ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১০ টাকা, কক মুরগি ৩৪৩-৩৫০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩০ টাকা এবং সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকায়।
এক্ষেত্রে দেখা যায়, আজ প্রতিকেজিতে ব্রয়লার (দেড় কেজির বেশি ওজনের) মুরগি দাম বেড়েছে ১০ টাকা, কক মুরগির (এক কেজির বেশি ওজনের) দাম বেড়েছে ২৩ টাকা। এছাড়া গরুর মাংস, খাসির মাংস, দেশি মুরগি ও লেয়ার মুরগির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। তবে আজ প্রতি ডজনে ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিমের দাম কমে ৫ টাকা করে।
জোবায়ের চিকেন হাউজের বিক্রেতা বলেন, ‘নতুন বছর আসতেছে। এখন মুরগির দাম একটু বেশিই থাকবে। কারণ এখন চাহিদা বেশি। এটা আবার জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে কমে যাবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চিকেন হাউজের বিক্রেতা মো. সুলতান বলেন, ‘থার্টি ফার্স্টের জন্য ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বাড়ে। তবে কক মুরগির দাম আগের মতোই। আগামী মাসের ১০ তারিখের পর দাম কমে যাবে।
এছাড়া আজ বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী ইলিশ মাছ ৬৫০-২৮০০ টাকা, রুই মাছ ৪০০-৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৩৫০-৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৬০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, শিং মাছ ৪৫০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-৭০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৮০০-১২০০ টাকা, কাজলী মাছ ১০০০-১৪০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০ টাকা, চিতল মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, সরপুঁটি মাছ ২০০-৪০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ৮০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদিপণ্যের দাম অপরিবর্তিত :
আজকে বাজারের মুদি দোকানের পণ্যের দাম অপরিবর্তিত। তবে বুটের ডাল ও ডাবলির দাম কমেছে যথাক্রমে ১০ ও ৫ টাকা। আজকের বাজারে ছোট মসুর ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, বুটের ডাল ১৩৫ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৯০ টাকা, ডাবলি ৭০ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকা, প্যাকেট পোলাও চাল ১৫০ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্বাভাবিক হয়নি সয়াবিনের বাজার :
দাম বাড়ানোর পরেও এখনও স্বাভাবিক হয়নি সয়াবিন তেলের বাজার। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১২৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নিউ সনিয়া জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা নয়ন মাঝি বলেন, ‘আমরা অর্ডার দিয়েও তেল পাচ্ছি না। আজকে দিবে, কালকে দিবে বলে দিচ্ছে না। আমরা বিক্রি করতে পারছি না, ক্রেতারাও এসে ফিরে যাচ্ছেন। এরকম হলে কীভাবে চলবে?’
সেলিম জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। আমাদের কাছে আছে শুধু সূর্যমুখী তেল আর রাইস ব্র্যান (চালের কুড়া) তেল। এগুলো সবাই খায় না। এখন দেখছি যারা খোলা তেল বিক্রি করে, তারা প্রতিকেজি সয়াবিন তেল ১৮২ টাকায় বিক্রি করছে। অথচ সরকার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকায় বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে। যা অবস্থা দেখছি, কেউই কিছু মানছেন না।’ সূত্র : বাংলাট্রিবিউন