সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৪১ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : দুই বছরের ব্যবধানে দুটি বিয়ে করলেন রাজশাহীর এক পৌরসভার মেয়র। দুই বিয়েকে কেন্দ্র করে প্রথম স্ত্রীকে দুইবার তালাকও দিয়েছেন। হত্যাচেষ্টার অভিযোগে প্রথম স্ত্রীকে পুলিশের হাতেও তুলে দিয়েছেন। ৪০ বছর সংসার করার পর এখন প্রথম স্ত্রী বলছেন, মেয়রের মাথায় বিয়ের ভূত ঢুকেছে।
এই মেয়রের নাম আবদুল মালেক মণ্ডল। তিনি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতিও তিনি। মেয়রের বক্তব্য অনুযায়ী, গত ২৩ এপ্রিল তিনি তৃতীয়বারের মত বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। তাঁর বয়স এখন ৫৬। আর তৃতীয় স্ত্রীর বয়স ২০।
এর আগে ২০১৯ সালে শারমিন সুলতানা নামে প্রতিবেশী আরেক কলেজছাত্রীকে বিয়ে করেন মেয়র। শারমিন আর মেয়রের বাড়ি পাশাপাশি। শারমিন মেয়রকে নানা বলে ডাকত। বিয়ের সময় মেয়র বলেছিলেন, শারমিনের বয়স ১৮।
তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিয়ের সময় শারমিনের বয়স ছিল ১৬-১৭ বছর। এসএসসির ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিল মেয়েটি। মেয়র আবদুল মালেকের পর পর দুটি এমন অসম বিয়ে নিয়ে তোলপাড় চলছে গোটা রাজশাহীতে।
এদিকে বিয়ের কিছুদিন পরই দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিনকে তালাক দেন মেয়র। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে বিয়ে করলেন নুপুর খাতুনকে। এর আগে দুইবার বিয়ে হয়েছিল নুপুরের। আগের স্বামীর সঙ্গে তালাক হওয়ার পর দেনমোহরের টাকা আদায়ের জন্য মেয়রের স্মরণাপন্ন হয়েছিলেন নুপুর। তখন পরিচয়, তারপর প্রেম। এরপর গোপনে বিয়ের কাজটাও সেরে ফেলেছেন মেয়র।
মেয়র মালেকের নামে খোলা একটি ফেসবুকে রোববার সন্ধ্যার দিকে তৃতীয় বিয়ের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। নববধূর সাজে থাকা নুপুরের সঙ্গে মেয়রের এই ছবির ক্যাপসনে লেখা হয়েছে- ‘পুরাতন সব কিছু বাদ দিয়ে তৃতীয় বিয়ে সম্পন্ন করলাম। সবার কাছে দোয়া কামনা করছি, যেন আমি ও আমার নতুন জীবনসঙ্গী সুখে থাকতে পারি।’ এই ছবি পোস্ট করার পর সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যান মেয়র। এর আগে শারমিনের সঙ্গে ছবিও ভাইরাল হয়েছিল ফেসবুকে।
তৃতীয় বিয়ের খবরের সত্যতা জানতে রোববার (২৫ এপ্রিল) রাতে মেয়র আবদুল মালেক মণ্ডলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলেই হেসে উঠলেন। বললেন, ‘বিয়ে করেছি। চুরি-ডাকাতি তো করিনি। আপনারা তো লিখবেন বুঝতে পারছি, সবকিছু শুনে একটু বিস্তারিতই লিখবেন।’ তারপর লম্বা সময় বিয়ের বিষয়ে কথা বলেন মেয়র।
তাঁর বক্তব্য- তাঁর প্রথম স্ত্রী কোহিনুর দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন সুলতানাকে জবাই করতে শুরু করেছিলেন। প্রাণভয়ে মেয়েটি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ রকম পরিস্থিতিতে তাঁরা দুজন মিলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাড়াছাড়ি করে নেন। তারপর থেকে তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলে সব সম্পত্তি লিখে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন। ১৭ এপ্রিল তাঁরা সম্পত্তি লিখে দেয়ার জন্য চাপ দেন। রাজি না হওয়ায় তাঁকে বেধড়ক পেটানো হয়। তিনি গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় বাড়িতেই ফেলে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ সময় তাঁকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে স্ত্রী কোহিনুর বেগম ও মেয়ে মেরিনা বেগমকে পুলিশ আটক করে। মেয়র তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পরদিন পুলিশ তাঁদের আদালতে তোলে। আর রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মেয়রের চিকিৎসা চলতে থাকে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তিনি খবর পান, তাঁর প্রথম স্ত্রী ও সন্তানেরা বাড়ির সোনাদানা, টাকা-পয়সা নিয়ে পালিয়েছেন। তাই হাসপাতালে থাকা অবস্থায় প্রথম স্ত্রীকে তালাকনামা পাঠান। এরপর চিকিৎসা শেষে তিনি বাড়ি যান। কিন্তু তাঁর সেবাযত্ন করার কেউ ছিল না। যারা তাঁর কাছে যাচ্ছিলেন, কোহিনুর তাঁদের হুমকি দিচ্ছিলেন। ফলে না খেয়ে তিনি মরতে বসেছিলেন। এ রকম পরিস্থিতিতে সবার সাথে পরামর্শ করে তৃতীয় বিয়ে করেছেন।
তবে ঘটনার ভিন্ন বর্ণনা দিচ্ছেন মেয়রের প্রথম স্ত্রী কোহিনুর বেগম। তিনি বলেন, শারমিনকে দ্বিতীয় বিয়ে করে তাঁকে তালাক দিয়েছিলেন মেয়র। পরে মেয়র আবার তাঁকে নেন। এতদিনের সংসারের কথা চিন্তা করে তিনি শারমিনকে মেনে নিয়েই সংসারে ফেরেন। এরপর বনিবনা না হওয়ায় মেয়রই মেয়েটিকে তাড়িয়ে দেন। আগে দেয়া দেনমোহরের তিন লাখ টাকাও কেড়ে নেন। শারমিনকে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে শারমিন অন্য ছেলেকে বিয়ে করে। মাস তিনেক আগে নুপুর তাঁদের বাড়ি আসেন আগের স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহরের টাকা আদায় করে দেয়ার জন্য। এখান থেকেই মেয়রের সঙ্গে তাঁর পরিচয়।
মেয়র তাঁর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন। নুপুর রাত-বিরাতে মেয়রকে ফোন করতে শুরু করেন। দু’মাস আগে নুপুর তাঁকে ফোন করে জানান, মেয়রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু বিষয়টি অস্বীকার করে যাচ্ছিলেন মেয়র। ১৭ এপ্রিল দুপুরে নুপুর মেয়রকে ফোন করেন। তখন কোহিনুর ফোনটি ধরেন। এই ফোন ধরা নিয়ে মেয়র কোহিনুরকে মারধর শুরু করেন। রেগে গিয়ে কোহিনুরও স্বামীকে মারধর করেন। কিন্তু বাড়িতে থাকলেও ছেলে-মেয়েরা বাবার গায়ে হাত তোলেননি।
কান্নায় ভেঙে পড়ে কোহিনুর বেগম বলেন, ‘৪০ বছর ধরে তিলে তিলে এই সংসার গড়ে তুলেছি। এখন মাথায় বিয়ের ভূত ঢুকে মেয়র সাহেব আমার নামে মামলা দিয়েছেন। পুলিশ আটক করার পর সারারাত আমরা মা-মেয়ে থানায় কাটিয়েছি। পরদিন পুলিশ কোর্টে তুললে জামিন নিয়েছি। আমার ছেলে এবং নাতিকেও আসামি করেছেন মেয়র। পুলিশের ভয়ে তাঁরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘শারমিনকে বিয়ে করার পর মেয়র সাহেব যখন তালাকনামা পাঠিয়েছিলেন তখন রাগ করে আমিও সই দিয়ে দিয়েছিলাম। পরে ফিরেও আসি। এবারও মেয়র সাহেব তালাকনামা পাঠিয়েছেন। পোস্ট অফিস থেকে আমাকে ফোন করেছিল। কিন্তু আমি তালাকনামা নিইনি।’
কোহিনুর বেগম জানিয়েছেন, রাজশাহী শহরে তিনি মেয়ে-জামাইয়ের বাসায় আছেন। আর মেয়র আবদুল মালেক মণ্ডল জানান, বাড়িতে তাঁর ছেলে-মেয়েরা কেউ নেই। তাঁরা কোথায় আছে তা তিনি জানেনও না। ফাঁকা বাড়িতে তিনি শুধু তাঁর তৃতীয় স্ত্রী নুপুর খাতুনকে নিয়ে আছেন। আজকের তানোর