বুধবা, ২৫ িসেম্র ২০২৪, সময় : ১১:০৫ pm
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে চলতি বছরের ১১ নভেম্বর থেকে। ওই দিন প্রথমবার পানামা পতাকাবাহী জাহাজ ‘ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য নিয়ে পৌঁছায়। এর আগে, পাকিস্তান থেকে পণ্য আসত বিভিন্ন বন্দর ঘুরে। এবার সরাসরি আসছে পণ্যবাহী জাহাজ। ফলে পাকিস্তান থেকে সরাসরি জাহাজ আসা নিয়ে শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা।
পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ চলতি বছরের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১.৪০ শতাংশ বেশি। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে করাচির সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বেড়েছে। আমদানির বাইরে রপ্তানি নিয়েও ভাবতে হবে ভবিষ্যতে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজস্ব বোর্ডের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অন্তর্র্বতী সরকার পাকিস্তানের আমদানি পণ্য খালাসে জটিলতা নিরসন করে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসার সুবিধার্থে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর থেকে বাধ্যতামূলক শতভাগ ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন (কায়িক পরীক্ষা) শর্ত প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এই শর্ত প্রত্যাহারের ফলে এখন অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বিবেচনায় যেভাবে পরীক্ষা করা হয়, পাকিস্তান থেকে আমদানির ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানানো হয়।
এনবিআরের এমন নির্দেশনার প্রায় দেড় মাস পর পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে গত ১১ নভেম্বর প্রথমবার পানামা পতাকাবাহী জাহাজ ‘ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ চট্টগ্রামে পৌঁছায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই থেকে ডিসেম্বরের ২২ তারিখ) সাড়ে পাঁচ মাসে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১৪ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। ওই হিসেবে আমদানি বেড়েছে তিন কোটি ৮৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য। শতকরা হিসাবে ২১.৪০ শতাংশ।
এবার সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে পোশাকশিল্পের কাঁচামাল, পেঁয়াজ, আলু, পরিশোধিত চিনি, ডলোমাইট, কাচশিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য।
গত অর্থবছরে (২০২৩-২৪) পাকিস্তান থেকে মোট আমদানি পণ্যের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ টন। এসব পণ্যের আমদানিমূল্য ছিল ৬২ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার, যা দেশের মোট আমদানির ১ শতাংশ। আমদানি বাড়লেও রপ্তানিতে যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় পাকিস্তানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি শূন্যের কোটায়।
পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে কনটেইনারবাহী পণ্য কলম্বো, সিঙ্গাপুর, দুবাইসহ বিভিন্ন বন্দর ঘুরে চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে সময় লাগত ২০-২২ দিন। কিন্তু পাকিস্তানের করাচি থেকে চট্টগ্রাম রুটে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ায় এখন সময় লাগছে মাত্র ১১-১২ দিন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, নতুন জাহাজ সার্ভিসের মাধ্যমে দুই দফায় করাচি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে ১১২৬ টিইইউএস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক কনটেইনার) পণ্য। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, যেভাবে কার্গো জেনারেট হচ্ছে, আমদানিকারকরা যদি উৎসাহী হয়, যদি আরো কার্গো আমদানি করতে চায়, তাহলে জাহাজ সার্ভিস বাড়বে। এখন জাহাজ নিয়মিতভাবে আসছে। প্রতি এক মাস পর পর জাহাজ আসছে। এই রুটে আরো নতুন শিপিং লাইন যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফার) ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন কালের কণ্ঠকে বলেন, আগেও পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে। এখন মূলত রোজা সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোই আমদানিকারকরা নিয়ে আসছেন। আগে দুবাই, সিঙ্গাপুর, কলম্বোসহ বিভিন্ন বন্দর ঘুরে চট্টগ্রাম বন্দরে আসত। আর ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে জট তৈরি হলে পণ্য পৌঁছাতে প্রায় এক মাসও সময় লেগে যেত।
এখন পাকিস্তান থেকে সরাসরি জাহাজ আসায় সময়টা এক-তৃতীয়াংশ কমবে। তিনি বলেন, সরাসরি এই রুটে পণ্য পরিবহন চালু হওযায় এখন পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হবেন। এখন করাচি-চট্টগ্রাম রুটে জাহাজ চলাচল করছে একটি। আগামীতে আরো অনেক জাহাজ চলাচল করবে। সূত্র : কালের কণ্ঠ