রবিবর, ২২ িসেম্র ২০২৪, সময় : ১১:৪৯ pm
ইমরান হোসাইন :
রাজশাহীর তানোরে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে সার ও বীজের দ্বিগুণ দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আলু চাষিরা। অপরদিকে শ্রমিক সংকট সিন্ডিকিটেও প্রতিবিঘায় আলু রোপণে ৪ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে চাষিদের। ফলে আলু রোপণ থেকে উত্তোলন পর্যন্ত এবারে প্রতিবিঘায় খরচ দাঁড়াবে ৮৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা বলে চাষিদের দাবি। এতো খরচের দিকে না থাকালেও শুরুতেই উভয় সংকটে পড়েছে চাষিরা।
আলু চাষিরা বলছেন, এবছর অন্য যেকোন বছরের চাইতে দিগুণ বেশি দামে আলু বীজ কিনতে হচ্ছে। সেই সাথে সার ক্রয়েও গুনতে হচ্ছে ৫০ কেজি ওজনের বস্তা প্রতি অতিরিক্ত সাড়ে তিনশ চারশ টাকা। অপরদিকে, আলু রোপনে শ্রমিকের মুল্যও বেড়ে গেছে। তারপরও পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। সংকটের কারণে এবছর প্রতি বিঘায় আলু রোপণে ৪ হাজার টাকা নিচ্ছে শ্রমিকরা। এভাবে গতবারের তুলনায় গড়ে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা শ্রমিকের মূল্য বেশি দিতে হচ্ছে।
তানোর পৌর এলাকার জিওল গ্রামের আলু চাষি মো. দুলাল হোসাইন বলেন, শ্রমিক সংকট আর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে সরকারি মূল্যের চেয়ে চড়া দামে বীজ ও সার ক্রয় করেছেন তিনি। তবে, প্রশাসনের উদাসিনতায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটে এতো বেপরোয়া বলে মনে করেন তিনি। তার প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে আলু রোপণের প্রস্তুতি চলছে। ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা টিএসপি সার ১৭৫০ টাকা, ডিএপি ১৫০০ টাকা, এমওপি ১৩৫০ টাকা ও ইউরিয়া সার ১৪০০ টাকা দরে বাধ্য হয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত টিএসপি ও ইউরিয়া সারের দাম ধরা হয়েছে ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ১৩৫০ টাকা, ডিএপি ১০৫০ টাকা ও এমওপি ১০০০ টাকা। তবে, সরকার নির্ধারিত দামের তোয়াক্কা না বেশি দামে সার বিক্রি করছেন ব্যবসায়ী ও ডিলাররা।
তিনি আরও জানান, সার ডিলারদের সাথে পাল্লা দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানীর স্থানীয় আলুবীজ ডিলাররা সিন্ডিকেট তৈরি করে সরকারি মূল্যের দ্বিগুণ বেশি দামে আলুবীজ বিক্রি করছেন। চলতি মৌসুমে সরকারি নিয়মে প্রতিকেজি আলুবীজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করে ব্রাক সীড, আমানসীড, হীরা সুপ্রিমসীড, স্মার্টসীড, এসিআই সীড, কিষাণ এগ্রোসীডসহ বিভিন্ন নামে আর বেনামের কোম্পানি ডিলাররা সিন্ডিকেট করে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বীজ আলু বিক্রি করছেন। ৪০ কেজি ওজনের এক বস্তা আলু বীজের দাম নিচ্ছেন ৭ হাজার টাকা। সেই হিসেব মতে প্রতিকেজি আলু বীজের দাম পড়ে ১৭৫ টাকা।
তবে, একই গ্রামের আলুচাষি ওমর হাজী বলেন তিনি চলতি মৌসুমে ১১৭ বিঘা জমিতে আলু রোপন করেছেন। তার কিছু নিজস্ব তৈরি বীজ ছিল। বাকি বীজ আমান কোন্ডস্টোর থেকে ৮২ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেছেন। তবে সব প্রকার সার ৫০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দরে ক্রয় করতে হয়েছে। এবারে সবকিছু সংকটের মধ্যেও তার প্রায় আলুক্ষেতে টপডেসিং চলছে। কিন্ত বীজ ও সার নিয়ে সিন্ডিকেট বিষয়ে কোন ব্যবসায়ী মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি নাম পরিচয় ব্যবহার ব্যাপারেও এড়িয়ে গেছেন।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে তানোর উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ হেক্টক জমিতে। যা গত বারের চেয়ে ২৯০ হেক্টর কম। তবে, এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলেও জানান কৃষি অফিসের সংশ্লিষ্টরা।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, রোপা আমন মাড়াই শেষ না হতেই কৃষকরা আলু রোপন শুরু করেছেন। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সার ও বীজ সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে তা আমাদের নজরে রয়েছে। তবে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবছর বেশি জমিতে আলু রোপনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আলু চাষিদের সকল প্রকার সহযোগীতা প্রদানের জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্তকর্তারা সারাক্ষণ মাঠে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। রা/অ