শুক্রবার, ০৪ অক্টোব ২০২৪, সময় : ০৪:৫৭ am
অনলাইন ডেস্ক: মাত্র ৬ হাজার টাকার জন্য ১৫ দিনের সন্তানকে বিক্রি করে দিলেন মা-বাবা। যদিও বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর পুলিশ ওই নবজাতককে নিজের মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। গতকাল শনিবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার মন্দরি গ্রামের রহিম উদ্দিনের স্ত্রী আকলিমা বেগম গত শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি হন। এসময় রোগীর অবস্থা দেখে চিকিৎসকরা জানান, ৫ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু নবজাতকের বাবা রহিম উদ্দিন টাকার অভাবে রক্তের ব্যবস্থা করতে না পারায় সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। বিষয়টি জানতে পারে একই ওয়ার্ডে রোগী নিয়ে আসা নবীগঞ্জ উপজেলার আছকির মিয়া। এসময় তিনি নবজাতক কিনতে আগ্রহী হলে মাত্র ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে নিজের ১৫ দিনের সন্তানকে বিক্রি করে দেন রহিম-আকলিমা দম্পতি।
নবজাতকের বাবা রহিম উদ্দিন জানান, ১৫ দিন আগে গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রী একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। এর আগেও তার দুই ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেননি। সস্প্রতি তার স্ত্রীর অবস্থার অবনতি হলে গত শুক্রবার হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকরা জানান তার স্ত্রীর জন্য ৫ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন। কিন্তু টাকার অভাবে রক্তের ব্যবস্থা করতে না পারায় স্ত্রীকে বাঁচাতে সন্তান বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।
নবজাতকের মা আকলিমা বেগম বলেন, টাকার জন্য নিজের চিকিৎসা করাতে পারছিলাম না। মা-বাবা, ভাই, বোনসহ আত্মীয় স্বজনের কাছে ঘুরেও টাকার ব্যবস্থা করতে পারিনি। যে কারণে সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।’
এদিকে, সাংবাদিকদের মাধ্যমে পুলিশ বিষয়টি জানতে পারে। পরে পুলিশ শিশুটিকে কিনে নেয়া লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে প্রকৃত মা বাবার কাছে ফিরিয়ে দেন।সন্তান কিনে নেয়া আছকির মিয়ার বোন শামছুন্নহার বেগম বলেন, আমার ভাই বিয়ে করেছে ১৮ বছর আগে। কিন্তু তাদের কোন সন্তান হয়নি। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি ও আমার ভাই হাসপাতালে আসলে শুনি একটি বাচ্চা বিক্রি হবে। পরে আমার ভাই বাচ্চাটি কিনে নেয়।
তবে বাচ্চা কিনে নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন আছকির মিয়ার স্ত্রী। তিনি বলেন, সন্তান না হওয়ায় আমরা শিশুটিকে দত্তক নিয়েছি। তবে বাচ্চার মায়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় এবং তারা খুব দরিদ্র হওয়ায় চিকিৎসার জন্য আমরা ৬ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছি।
যদিও সন্তান ফিরিয়ে দেয়ার পর ৬ হাজার টাকা ফেরত পেতে পুলিশের কাছে অনুরোধ জানান কিনে নেয়া পরিবারের এক সদস্য। এ ব্যাপারে সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক বলেন, বিষয়টি জানার পর পুলিশ বাচ্চাটিকে উদ্ধার করে প্রকৃত মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে কত টাকার বিনিময়ে বাচ্চা বিক্রি হয়েছে সেটি আমরা বলতে পারছি না। সূত্র : সোনালী সংবাদ, আজকের তানোর