বৃহস্পতিবর, ০৫ িসেম্র ২০২৪, সময় : ০৮:১৯ am
ডেস্ক রির্পোট :
গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরে মাদক বাণিজ্য করে কেউ কেউ হচ্ছেন কোটিপতি। আর সেবন করে কেউ কেউ হচ্ছেন ঘর-বাড়ি ও সংসার ছাড়া। ভিটেমাটি বিক্রি করে কেউ কেউ পথেও বসেছেন। অকালে জীবন বিনষ্ট করেছেন অনেকে। মাদক ব্যবসায় জড়িত সিন্ডিকেটের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। মাদক কারবারের প্রতিবাদ জানালেই নানাভাবে হয়রানি করা হয়। গত কয়েক বছরে মাদক সেবন করে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সারাদেশের এমন দৃশ্য বললে ভুল হয় না।
কাশিমপুর নয়াপাড়ায় মাদক বাণিজ্যের ২০টি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ১০-১২ জনের মাধ্যমে মাদক বিক্রি করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাচ্ছেন। অবাধে মাদক বিক্রি করে তারা বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন থানায় মাদকের মামলায় গ্রেফতার হয়ে তারা কিছু দিন জেল খেটে আবার মাদকের কারবারে নেমে পড়েন। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানও তাদের থামাতে পারছে না। মাদক বাণিজ্যের প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা ও সাজানো মামলা দেওয়া হয়।
কারবারিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ-মাদক কারবার করে তারা একাধিক বাড়ির মালিক হয়েছেন। মাদক কারবারি নয়াপাড়ার লিপি বেগম আগে অন্যের বাসায় কাজ করতেন। তার এক শতাংশ জমিও ছিল না। ১০ বছরের ব্যবধানে তিনি কোটি টাকার মালিক। ছয়তলা বাড়িসহ কয়েকটা টিনশেড বাড়ির মালিক তিনি। লিপির স্বামী ফরিদ পুলিশের সোর্স পরিচয় দেন এবং দামি মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়ান। মাদক কারবারি বাদশা তিনতলা বাড়ির মালিক; সমলা তিনতলা ও তার ভাই বাতেন দোতলা বাড়ির মালিক। যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ডালিয়া বেগম মাদকের সবচেয়ে বড় ডিলার। ৩-৪ বছর আগে তিনি অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করতেন। তার স্বামী ওয়াসিম রিকশাভ্যান চালাতেন। এখন তারা পাঁচটি বাড়ির মালিক।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাশিমপুর নয়াপাড়া গ্রামের রওশন মার্কেটসংলগ্ন কাঁঠালতলা মহল্লায় মাদক ব্যবসা করে ২০ জন। সিটি করপোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও কাশিমপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান তুলা অন্যতম মাদক কারবারি। ৫ আগস্টের পর তিনি পালিয়ে বেড়ালেও তার সহযোগীরা বীরদর্পে চলাফেরা করছে। অন্য কারবারিরা হলেন-তুলার সহযোগী ও একই ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আমির হোসেন, নয়াপাড়ার লিপি বেগম, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ডালিয়া বেগম, ডালিয়ার বোন শিপন, ডালিয়ার ভাই রহুজুদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর, হাছেন আলীর ছেলে আশু, মনির উদ্দিনের ছেলে জীবন, তার মা মরিয়ম বেগম, আবদুল কসাইয়ের ছেলে রিপন, সবুজ ও শিল্পী। রিপন, সবুজ, লিপি ও শিল্পী চারজনই মাদকের বড় ডিলার। রহমত আলীর ছেলে জাকির, জাকিরের স্ত্রী সমর্ত বানু, নরুর ছেলে আলমগীর হোসেন, বাবুল মিয়ার ছেলে বাবলি, হোসেন আলীর ছেলে খোরশেদ প্রমুখ।
মাদক কারবারিদের মধ্যে লিপি বেগম, ডালিয়া বেগম ও ওয়াসিমের সঙ্গে কথা বললে তারা বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং ফোন কেটে দেন। মোবাইল ফোনে কথা বলতে তারা অস্বীকার করেন।
লিপির চাচাতো বোন কাশিমপুর নয়াপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী শেফালী আক্তার গুলু বলেন, মাদক কারবারিদের কাছে এলাকাবাসী জিম্মি। তার তিন ভাই আইনাল হক, মনির হোসেন ও গোলজার হোসেন মাদক খেয়ে অকালে মারা গেছেন। হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল সবই খেতেন। ভাইদের মৃত্যুর পর তিনি মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এ কারণে মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেটে পরিণত হন। কয়েক মাস আগে তিনি, ছেলে ও ছোট বোন মাদক কারবারিদের আক্রোশের শিকার হন। দোকানে হেরোইন রেখে ফাঁসাতে চেয়েছেন। জুলাইয়ের শেষে ছেলে সোহানকে কুপিয়েছে। ছোট বোন লিপি আক্তার ও তার ওপরও হামলা হয়েছে। এখনো মামলা নেয়নি পুলিশ।
জানা গেছে, ৯-১০ বছরের ব্যবধানে গুলুর তিনভাই ছাড়াও মরিয়মের সাবেক জামাই মনির হোসেন, জসিম ওরফে জসি, সবুজ, নুরুল ইসলাম, খোরশেদ, শাহজাহান, আসকর আলী ও ইছু মিয়া মাদক সেবনে মারা গেছেন।
স্থানীয় অরচার্ড পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কমার্স কলেজের প্রধান শিক্ষক দুলাল হোসেন বলেন, মাঝে মধ্যে মাদক পল্লীতে অভিযান চালানো হয়। কয়েক দিন বন্ধ থাকে। আবার শুরু হয়। এভাবে ১৫-১৬ বছর ধরে চলে আসছে। মাদক ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী। প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। দলবেঁধে হামলা করা হয়। ভোটের আগে জনপ্রতিনিধিরা মাদক নির্মূলের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে তারা চুপ থাকেন।
এলাকার বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, তার ছেলে আওলাদ সিএনজি চালাতেন। সিগারেটও খেতেন না। দেড় বছর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে। দেড় মাস ধরে জেলে। তারা জামিনের চেষ্টা করেন না।
এ ব্যাপারে কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সব সময় চলমান। এলাকায় বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে মাদক উদ্ধার ও মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদক নির্মূলের জন্য কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয়রা এগিয়ে এলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে। সূত্র : যুগান্তর