শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৫৩ pm
ভ্রাম্যমান প্রতিবেদক :
রাজশাহীর তানোর উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নে বিসিআইসির সার ডিলার বিকাশের বিরুদ্ধে সার পাচার ও বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে হট্টগোল ও মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় উত্তেজিত কৃষকরা বিকাশের ম্যানেজার বিধানকে গণধোলাই দিয়েছেন বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছেন। এসময় উত্তেজিত কৃষকদের জনরোষ থেকে বাঁচতে ডিলার বিকাশ বিকেলে সার বিতরণ করবেন বলে সটকে পড়েন। আজ ২২ নভেম্বর শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় এমন ঘটনা ঘটে। এছাড়াও কৃষি অফিসের বিএস সুমনকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। কারণ তিনি বসে থেকে সার বিতরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন গত বৃহস্পতিবার। কিন্তু তার কোন পাত্তাই নেই। ফলে কৃষি অফিস ও ডিলারের সিন্ডিকেটের কাছে চরম জিম্মি হয়ে পড়েছেন আলু চাষিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তানোর উপজেলার কামারগাঁ বাজারে মৌসুমি ট্রেডার্স নামের বিসিআইসির সার বিকাশ কুমার দাশ। তিনি বিগত হাসিনা সরকারের সময় থেকে দাপটের সাথে সার পাচার করে থাকেন। ওই সময় সার পাচারে স্থানীয় প্রভাবশালীরা সহায়তা করে থাকত। গত বৃহস্পতিবারে বিকাশের দোকানে সার আসে। এমন খবরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সার নেয়ার জন্য কৃষকরা জড়ো হয় তার দোকানে। কিন্তু বিকাশ দোকান না খুলে কৃষি অফিসে খাতা স্বাক্ষরের নাম করে দোকান বন্ধ রাখেন। সন্ধ্যার আগে দোকান খুললেও সার বিতরণ করেননি। উত্তেজিত কৃষকদের শান্ত করতে অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সুবাস ও (বিএস) উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমনের কথামত মেমো কাটেন। শুক্রবার সকাল থেকে রাতের মেমোতে সার দেয়া শুরু করেন ডিলার বিকাশ। এরই এক পর্যায়ে প্রায় ১২/১৪ বস্তা টিএসপি ও পটাশ (এমওপি) সার মোহনপুর উপজেলার কৃষককে বাড়তি দামে দিয়ে দেন। তারা সার নিয়ে যাওয়ার সময় কামারগাঁ ব্রীজের কাছে উত্তেজিত কৃষকরা আটকে দেন। এদিকে সার আটকানোর খবরে ডিলার বিকাশের দোকানের কর্মচারী বিধান বের হলে তাকে গণধোলাই দিয়ে দোকানের গেটে লাথি মারা শুরু করে কৃষকরা। তবে স্থানীয় বেশকিছু ব্যবসায়ীদের হস্তক্ষেপে কিছুটা শান্ত হয় উত্তেজিত জনতা।
কৃষকদের ভাষ্যমতে, আমরা ভোর থেকে উপেক্ষা করছি। কিন্তু এক বস্তাও সার পাচ্ছি না। অথচ যারা পরে আসছে তারা সার নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার পার্শ্ববর্তী মোহনপুর উপজেলায় পাচার করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার থেকে সার নিতে এসে পাচ্ছে না কৃষক। অথচ যারা প্রজেক্ট করছে তারা ঠিকই সার পাচ্ছে। আবার যাদের দলীয় পরিচয় বা নেতা তারাও সার পাচ্ছে। শুধু আমাদের মত প্রান্তিক কৃষকরা কোনভাবেই সার পাচ্ছে না। বিএস সুমন অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তার পছন্দের কৃষককে সার দিতে মরিয়া হয়ে পড়েন। গত সোমবার রাতে খুব বেশি হলে ৪০/৫০টি সার বিক্রির মেমো দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন বলছে দেড়শ থেকে ২০০টির মতোমেমো হয়েছে। নেতাদের তদবির ও কৃষি উপজেলা অফিসের গাফিলতির কারণে সার পাচ্ছি না।
এব্যাপারে ডিলার বিকাশ কুমার দাশ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে মেমো না কাটার জন্য এডিশোনাল কৃষি অফিসার সুবাশকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি আমার কথায় কর্নপাত করেননি। রাতে মেমো না কাটলে মারপিট হট্টগোল হত না। আবার বরাদ্দও কম দিয়েছে। সকাল থেকে বিতরণ করার কারণে টিএসপি ও এমওপি সার শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু ডিএপি ও ইউরিয়া সার রয়েছে। তাও সামান্য পরিমানে। এটা বিতরণ করতে লাগলে পুনরায় মারপিট শুরু হবে। কারণ চাহিদার তুলনায় একেবারে কম। উপজেলায় সাত জন বিসিআইসির সার ডিলার রয়েছে।
আমি মাত্র ১৫ মেট্রিকটন টিএসপি ও ২৫ মেট্রিকটন এমওপি সার পেয়েছি। অথচ তালন্দ ইউপির ডিলার সুমনেকে ৩০ মেট্রিকটন ডিএসপি ও ৪২ মেট্রিকটন এমওপি, কলমা ইউপির সুলতানকে ৪৫ মেট্রিকটন টিএসপি ও ৭০ মেট্রিকটন এমওপি, বাধাইড় ইউপির নাবিলা ট্রেডার্সকে ৫৫ মেট্রিকটন টিএসপি ৯৫ মেট্রিকটন এমওপি, তানোর পৌরসভার মোল্লা ট্রেডার্সকে ১৭ মেট্রিকটন টিএসপি, ২৮ মেট্রিকটন এমওপি, চাঁন্দুড়িয়া ইউপির ডিলারকে ১৩ মেট্রিকটন টিএসপি, ২৫ মেট্রিকটন এমওপি, পাঁচন্দর ইউপির প্রাইম ট্রেডার্সকে ২৯ মেট্রিকটন টিএসপি, ৪৬ মেট্রিকটন এমওপি এবং মুন্ডুমালা পৌরসভার নাইস ট্রেডার্সকে ১৮ মেট্রিকটন টিএসপি ও ৩৫ মেট্রিকটন এমওপি সার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বেশি দামে মোহনপুর উপজেলার কৃষকের কাছে সার পাচার করছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, অনেক কৃষক কামারগাঁ ইউপিতে আলু চাষাবাদ করে। আজকের মারপিট হট্রগোল ও সিসি ক্যামেরা ভাংচুরের জন্য অতিরিক্ত কৃষি অফিসার সুবাস ও বিএস সুমনের জন্য এসব ঘটনা ঘটেছে। তারা রাতে মেমো না কাটলে কিছুই হত না। গত বৃহস্পতিবারে অফিসে খাতা স্বাক্ষর করতে না গেলে বিতরণ করলেও পরিবেশ ভালো থাকত। যত মরন আমাদের মত ব্যবসায়ীদের। তারা ঠিকই বাড়িতে ঘুমিয়ে আছে।
এবিষয়ে বিএস সুমন জানান, ওই সময় অনেক কৃষক জমা হয়েছিল এজন্য মেমো কাটা হয়েছিল। সার পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘটনাস্থলেই আছি বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি। এডিশোনাল কৃষি অফিসার সুবাসের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, সরকারি নিয়মে সার জমিতে দিলে কোন সংকট হবে না।
কিন্তু এউপজেলার কৃষকরা অতিরিক্ত সার ব্যবহার করে থাকে। এজন্য সংকট হয়। আপনি রাতে কেন মেমো কেটেছেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন, কৃষকের সুবিধার জন্য মেমো কাটা হয়েছিল। মেমো কাটা নিয়েই তো মারপিট হয়েছে এদায় কে নিবে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি দেখছি বলে দায় সারেন। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহর মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ হয়নি। তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খায়রুল ইসলাম বলেন, তিনি কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে জানান ইউএনও। রা/অ