শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:০৭ am
সম্পর্কে খারাপ দিনগুলোর পরে আবার যখন ভালো দিন আসে তখন সেই ভালো দিনগুলো অতীতের আনন্দময় দিনগুলোর মত আবেগ বহন করে না। কেমন যেনো টান কাটা পড়ে, মায়া কমে যায়। আঘাত করে তাকে আবার বুকে নিলে, বকা দিয়ে তাকে আবার আদর করলে পূর্বেকার দিনের মত অনুভূতি ফেরে না। সম্পর্ক তখন সাধারণের সাথে গুলিয়ে যায়। একবার হোঁচট খেলে, একবার বিশ্বাস ভাঙলে কিংবা একবার রূঢ় হলে সেই সম্পর্ক আর আগের রূপে ফেরে না।
এতে কোথাও খাঁদ পড়ে, কোথাও ক্ষত সৃষ্টি হয়। দূরে যাওয়া মানুষটা ফিরলেও সেই আগেকার রূপে সম্পর্ক আর ফেরে না। একটু ফাঁটল থেকেই যায়। এরপরে প্রত্যেকবারের খারাপ আচরণে, উপেক্ষা-অবহেলায় পূর্বের বারের চেয়ে তার পরেরবারে অনুভূতি বদলাতে থাকে। আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ঘটে। একসময় কিছুতেই কিছু আসে যায় না; না থাকায়, না যাওয়ায়। কারো কারো সম্পর্কটা শেষমেশ এখানে এসে দাঁড়ায়। তখন উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি, খোঁজ নেওয়া কিংবা না নেওয়া, কাছে ডাকা কিংবা দূরে ঠেলা- আলাদা করে ম্যাটার করে না। অভ্যাস বদলে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
জনের সমস্যা সময় নিয়ে নিজেরা মিটিয়ে ফেলা ভালো। তৃতীয় কারো কাছে নালিশ করে মিলমিশ হলে শেষমেশ দূরত্বটা আর ঘুচতে চায় না। মান-অভিমান, রাগ- অভিযোগ সম্পর্কের গোপনীয়তা। এই গোপন সৌন্দর্য যখন বাইরের মানুষ জানে তখন অস্তিত্বের সংকট তৈরি হয়। ক্ষত ঘুচে যাওয়ার পরেও, ফাটল মিলে যাওয়ার বাদেও অভিযুক্তের মনে হাতে থাকে- বিশ্বাস কোথায়? নিরাপত্তা কার কাছে! তখন লজ্জায় ক্ষোভ তৈরি করে। দ্#ু৩৯;জন মানুষ পরস্পরের প্রতিযোগীতে বদলে গেলে সম্পর্ক বিসম্বাদে জড়িয়ে যায়।
প্রাণহীন বস্তুও পাশাপাশি থাকলে সংঘর্ষ হতে পারে। দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের কারণ সবসময় নিজেদের হতে হবে- এমন কোন কথা নাই। বাতাসেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সন্দেহ ঠেলতে পারে যুদ্ধের ময়দানে। কাজেই ভুলবোঝাবুঝি হবে, মান-অভিমান বাড়বে আবার একবাহু আরেকবাহুকে কাছে টেনে নেবে। সম্পর্কের এই টক-ঝাল-মিষ্টি গল্প যদি দুনিয়াবাসীকে দরবার করে জানানো হয় তবে সমস্যা কমে না বরং বাড়ে। সেখানে তিক্ততার সৃষ্টি হয়, বিচ্ছেদ ঘনায়। কে আপনার উপকার চাইছে, আর কে কামনা করছে ক্ষতি- তা আপনি বাহির দেখে, কেবল কথা শুনে আন্দাজ করতে পারবেন না। মুখোশের আড়ালে অমানুষও থাকতে পারে। তখন আপনার ক্ষতির খতিয়ান লম্বা হবে।
একবারে বাধ্য না হলে ৩৯ জনের মধ্য তৃতীয়জন ডাকবেন না। একটু ঝগড়া হয়েছে, কথা বন্ধা আছে দ্#ু৩৯;দন্ড কিংবা মুখ দেখাদেখি বন্ধ আছে একবেলা- আরও কিছুক্ষণ নিজেকে অন্যভাবে ব্যস্ত রাখুন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখালে, কথার তীর আবার ফিরিয়ে দিলে কিংবা দেখে নিতেই হবে এমন হুমকি দিলে- আউল বাজে। এই ফাউল কাজ সম্পর্কের রঙ-রস নষ্ট করে বিদঘুটে পরিস্থিতির উদ্রেক করে। সুতরাং একটুখানি ধৈর্য এবং বাকিটুকুন সহ্য করতেই হবে। মিষ্টি ফলের আশা করলে তেতো বীজ বপন করা থেকে বিরত থাকুন।
সম্পর্কে সময় গুরুত্বপূর্ণ। দাম্পত্যে বুড়ো হয়ে গেলেও, সঙ্গী পুরাতন হয়ে গেলেও সময় দিন- তাকে আপন হিসেবে পাবেন। বাইরের প্রলোভন জড়ানো কথায় মিথ্যাচার। যা আপনার হয়েছে, আপন পেয়েছেন তা যত্নে-জড়িয়ে থাকুন। ভালো থাকা পোক্ত হবে। পরের আপন হতে গিয়ে আপনের পর হবেন না। নিজের শেষ ঠিকানা এবং গন্তব্য ভালোমতো জানুন। কারো কাছ থেকে সহানুভূতি পাচ্ছেন কিংবা সহানুভূতি পাওয়ার আশায় নিজেদের গোপনীয়ত বাজারে তুলবেন না। পস্তাবেন। ভালো দিনের উল্টোপাশে খারাপ দিনের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ লেপ্টে থাকে। আপনি ভবিষ্যতে কোন দিনে থাকবেন তা আপনার অতীতের দিনগুলো ঠিক করে দেবে।
যার ভুল তার কাছে অভিযোগ করুন, বোঝান। ধরিয়ে দিন এবং শিখিয়ে নিন। নালিশ বাজারজাত করবেন না। ভালো থাকা জরুরি। সেজন্য সেধে লাগতে যাবেন না বরং কেউ লাগতে এলে তাকেও নিবৃত করবেন। ভালো থাকার জন্য একটু নত হলে,
খানিক ছাড় দিলে কিংবা একটু মেনে গেলে তাতে কী ক্ষতি হয়? আপনি তো দূরের কাউকে, পর কাউকে কিংবা অনাত্মীয় কাউকে জিতিয়ে দিচ্ছেন না। যে জিতে গেলে আপনিও উল্লাস করতে পারেন সে যাতে উৎসবের আমেজে থাকে- ব্যবস্থা করুন। ঘরের গুরুত্ব সবার আগে। ভুলও মানুষের সৌন্দর্য। সঙ্গীর ভুল শুধরে দিন। খুঁত ধরে রাখা, অভিযোগ জিইয়ে রাখা কিংবা একচুল ছাড় না দেওয়ার মানসিকতা- আপনার ভালো থাকার পথে অন্তরায় হবে। যে ভুলে শান্তি নষ্ট হয়, জীবন বৃথা যায়- ভুলের সে পথে বুদ্ধিমানের পদচিহ্ন আঁকা ঠিক নয়। রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক : সূত্র : [email protected]