বুধবা, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৫৭ am
বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের বেশ কয়েক বছরের পারফরম্যান্স অত্যন্ত হতাশাজনক। গত পাকিস্তান সফরে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জয় ছাড়া তিন সংস্করণেই উল্লেখযোগ্য কোনও সাফল্য নেই দলটার। সরকার পরিবর্তনের পর অনিবার্যভাবেই ক্রিকেট বোর্ডেও পরিবর্তন এসেছে। নতুন সভাপতি এসেছেন, পুরাতন বোর্ডের বাকি সদস্যরাও কমবেশি সবাই বিদায় নিয়েছেন। বিদ্যমান চুক্তি বাতিল করে মেয়াদ শেষের আগেই বিদায় করা হয়েছে কোচকেও, তার জায়গায় নতুন হেড কোচ দায়িত্ব নিয়েছেন।
গত ১৫ বছর ধরে বিসিবির সভাপতির পদ আঁকড়ে থেকে, লোকদেখানো নির্বাচনের মাধ্যমে বোর্ডের সদস্যদের মেয়াদ হালনাগাদ করা ছাড়া পূর্ববর্তী সভাপতি পেশাদারিত্বের তেমন কোনও নজির স্থাপন করতে পারেননি। বরং নিজের দায়িত্ব ও এখতিয়ারের বাইরে প্রায় প্রত্যেকটি বিষয়ে অযাচিতভাবে নাক গলিয়ে নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন, অনধিকার খবরদারি করে দলের মনোবল ধ্বংস করেছেন বারবার, যার ছাপ পড়েছে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে। একটি আন্তর্জাতিক মানের সংস্থা, যারা ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় এবং পেশাদারি একটি ক্রীড়াক্ষেত্রে, যে ক্ষেত্রটি সরাসরি আয়-সৃষ্টিকারী ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে দারুণভাবে সফল, তেমনি একটি ক্রীড়াক্ষেত্রের প্রশাসক হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি কতটা প্রস্তুত?
বিসিবি কোনও প্রফেশনাল মানের প্রতিষ্ঠান নয়, তার অজস্র প্রমাণ তারা নিজেরাই বারবার দিয়ে এসেছে। অথচ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে গেলে প্রফেশনাল মানের বোর্ড আবশ্যক। বিসিবি অনেক কমিটির সমন্বয়ে একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিটি কমিটিতে বিগত পনের বছর সাবেক ক্রিকেটাররাই ছিলেন। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে কতজন সাবেক ক্রিকেটার কমিটিগুলোতে অবস্থান করছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা অবশ্য নিশ্চিত নই। সে যাই হোক, সদ্য-সাবেক বোর্ডের কথা যদি বলি, যারা নিজেরা ক্রিকেট খেলেছেন, অধিকাংশ আবার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, তারা ক্রিকেটের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বুঝবেন- এমন একটা প্রত্যাশা থেকেই ক্রিকেট বোর্ডে ও তার বিভিন্ন কমিটিতে সাবেক ক্রিকেটারদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে তারা অতীতে ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটে’ যেমন মিডিওকার লেভেলের ছিলেন, ব্যাট বল তুলে রাখার পর বোর্ডের দেওয়া দায়িত্ব পালনেও মিডিওকারই থেকে গেছেন। ভালো ছাত্র মানেই ভালো শিক্ষক হবেন– এমন কোনও কথা নেই, তেমনি ভালো শিক্ষকেরা সবাই ভালো ছাত্র ছিলেন- এমনও না।
ভালো ক্রিকেটার হলেই ভালো ক্রিকেট প্রশাসক হবেন, সেই সম্ভাবনাও প্রায় নেই। মাঠে ক্রিকেট খেলা আর ক্রিকেট বোর্ডের দাপ্তরিক কাজ সামলানো এক কথা নয়। একজন ভালো ক্রিকেটার, ভালো টেকনিক জানা ক্রিকেটার খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর বড়জোর ভালো কোচ এবং/অথবা সিলেকটর হতে পারেন। কিন্তু ক্রিকেট প্রশাসন শুধু কোচিং আর প্লেয়ার সিলেকটিং নিয়েই চলে না, আরও অনেক কিছু এর সঙ্গে জড়িত।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের সাবেক ক্রিকেটাররা কোচ ও সিলেকটর হিসেবেও ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচকদের অধিকাংশই ঢাকার বাইরে গিয়ে জাতীয় লিগের খেলাগুলো পর্যন্ত দেখেন না – এমন একটা অভিযোগ ক্রিকেট সাংবাদিকরা করেন, কতটা সত্য জানি না। যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে শুধু ম্যাচ রিপোর্ট দেখে একজন খেলোয়াড়কে বিবেচনা করা কতটা যৌক্তিক, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। স্কোরকার্ডে বড় জোর রান আর উইকেট লেখা থাকে, কিন্তু ক্রিকেটারের স্কিল তাতে থাকে না। একটা ডেলিভারির জন্যই একজন বোলারকে দলে নেওয়া যেতে পারে, একটা ওভারের আগুনগোলা বোলিং সামলে টিকে থাকার জন্যই কোনও ব্যাটসম্যান দলে ডাক পেতে পারেন, সেই ওভারে কোনও রান না করেও। মাঠে না থাকলে নির্বাচক এসব দেখবেন কীভাবে? অন্য মাধ্যম থেকে উদাহরণ দিই। জয়া বচ্চন যখন ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডের সদস্য ছিলেন, তখন একবার বলেছিলেন, সে দেশে জুরির দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন, কারণ তাকে ওই সময়ের মধ্যে মুক্তি পাওয়া সব ছবি দেখতে হয়, কোনও শর্টলিস্ট প্রযোজ্য নয়। সব ভাষা মিলিয়ে এক বছরে যদি তিনশো ছবি মুক্তি পায়, তাহলে তিনশোই দেখতে হয়, কোনোটাই বাদ দেওয়া যায় না। …
ক্রিকেটের নির্বাচককেও হতে হবে এমনই। যেখানে যত খেলা হচ্ছে, তার সবই দেখতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচকের সংখ্যা বাড়াতে হবে, আলাদা কমিটি করতে হবে, যেখানে সহনির্বাচক রাখা যেতে পারে, কিন্তু ম্যাচ দেখা বাদ দেওয়া যাবে না একটাও। আমাদের নির্বাচকরা ঢাকায় অনুষ্ঠিত সব ম্যাচও দেখতে যান না। তারা বড়জোর মিরপুর স্টেডিয়াম পর্যন্তই যাওয়ার কষ্ট করেন, বিকেএসপি’তেও কালেভদ্রে পদধূলি দেন।
নির্বাচকদের অদক্ষতার আরেকটি নজির– একজন ক্রিকেটার খেলা চালিয়ে যাওয়া অবস্থাতেই তারা সাফ জানিয়ে দেন, ওই ক্রিকেটার তাদের বিবেচনায় নেই! মাঠে একজন ক্রিকেটার যত খারাপই করুন না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি নিজে অফিসিয়ালি অবসরের ঘোষণা দিচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচকমণ্ডলী তাকে বিবেচনার বাইরে রাখতে পারেন না। বিবেচনা করতে হবে। বিবেচনা করে তার ফর্ম, পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয় দেখে তাকে নির্বাচন না করতে পারেন, কিন্তু বিবেচনা করবেন না– এটা কোনও নির্বাচক বলতে পারেন না। সাম্প্রতিককালে কয়েকজন ক্রিকেটারের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে মিডিয়ায় শোনা গেছে, তাদের নাকি স্থায়ীভাবে বাদ দিয়ে দেওয়া হবে বা জাতীয় দলে ঢোকার পথ তাদের বন্ধ করে দেওয়া হবে– এমন কথা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন। এটাও সঠিক পদক্ষেপ নয়। যতক্ষণ একজন ক্রিকেটার খেলছেন, ততক্ষণ তার জন্য দলে ঢোকার পথ খোলা রাখতে হবে, কিছুতেই পথ বন্ধ করা যাবে না। এটা আইনে নেই। কোনও দেশের, কোনও খেলার আইনে নেই। চূড়ান্ত অপেশাদার লোকদের দিয়ে নির্বাচক কমিটি গঠন করা হলে এ ধরনের উদ্ভট, বিপজ্জনক, আত্মঘাতী এবং অপেশাদার পদক্ষেপই যে তারা নেবে, এমনটাই স্বাভাবিক।
কোচিংয়ের ক্ষেত্রে একটা বড় অভিযোগ শোনা যায়, আমাদের কোচদের ভাষা নাকি ক্রিকেটাররা বোঝেন না। কোচরা বিদেশি, তাই তারা ইংরেজিতে কথা বলেন। স্প্যানিশ বা ফ্রেঞ্চ বা পর্তুগিজ তো আর বলেন না। তাহলে কি এটাই সত্যি যে একজন বিদেশির মুখের কথা বোঝার মতো বেসিক ইংলিশও আমাদের ক্রিকেটাররা জানেন না? হতে পারে, বিদেশি কোচরা তাদের আঞ্চলিক উচ্চারণে কথা বলেন, যাতে অস্ট্রেলিয়ান বা আফ্রিকান টান থাকে। সেটাও খুব কঠিন হওয়ার কথা নয় যে একেবারে বোঝাই যাবে না। তাও যদি হয়, তো প্র্যাকটিস সেশনগুলোতে একজন দেশি সহকারী কোচ কি দোভাষী হিসেবে কাজ করেন না বা করতে পারেন না?
আমার ধারণা, এটা শব্দের অর্থ বোঝার ঘাটতি নয়, বরং বিভিন্ন টেকনিক্যাল টার্ম বুঝতে না পারার বা ধরতে না পারার জটিলতা। সে যাহোক না কেন, সেটা সমাধান করা এমন কিছু কঠিন হওয়ার কথা নয়। মুশকিল হচ্ছে, সমস্যাটাকে তখনই সমাধান করা যায়, যখন তাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বোর্ড বা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কমিটি যদি এই সমস্যাটাকে স্বীকারই না করেন, আমলেই না নেন, তাহলে এর জন্য তারা কিছুই করবেন না। তাদের তো অজুহাত আছেই, এত চড়া বেতন দিয়ে এত লম্বা কোচিং প্যানেল ঠিক করে দিয়েছি, তারপরও তারা শিখতে পারবে না কেন? দোষ তো খেলোয়াড়দের। তার মানে তারা ফিট নয়। অতএব– যাও, তোমরা বিদায় হও, অন্যদের জায়গা ছেড়ে দাও।
বিসিবির বিপণন কমিটিতে কারা আছেন, তা আমার জানা নেই। হতে পারে সেখানেও কোনও সাবেক ক্রিকেটারই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু অন্তত এই কমিটিতে সাবেক ক্রিকেটার নন, দরকার একজন দক্ষ করপোরেট এক্সিকিউটিভ, যিনি যেকোনও দেশি-বিদেশি করপোরেট থেকে নিয়ে একেবারে নিচের সারির ব্যবসায়ী- সবার সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবেন, দরকষাকষি করতে পারবেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বর্তমানে দায়িত্বে থাকা এবং এত দিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসা কোনও ব্যক্তিই এই দরকষাকষিটা করে দেখাতে পারেননি। সেই যে ১৯৯৮ সালে ঢাকার মাঠে হলো ‘নক-আউট’ মিনি বিশ্বকাপ (বর্তমান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি), যেখানে স্বাগতিক হয়েও ওয়ানডে স্ট্যাটাস থাকলেও, এমনকি, ফরম্যাটের গরমিল মেলাতে একটি দলের ঘাটতি পূরণের যুক্তিতে আমাদের খেলার অধিকার থাকলেও; আমাদের বিসিবি’র অদক্ষতা ও অযোগ্যতায় আমরা তাতে অংশ নিতে পারিনি; এখনও সেই জের চলছে। আমরা সফরে গিয়ে উদ্ভট সফরসূচি মেনে নিই, আমিরাতের আগুন গরম আবহাওয়ায় দুই-দুই চার ঘণ্টা বাস-জার্নি করে অন্য শহরে গিয়ে খেলতে নামি, তাও পরপর দুই দিন। আমরা কোনও যুক্তি ছাড়াই, অংশগ্রহণকারী অন্য দলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে ফিক্সচারের ‘ঘটি-বুঝ’ মেনে নিই। আমরা স্বাগতিক হয়েও সফরকারীদের আপত্তিতে ডিআরএস না নিয়ে, আম্পায়ারিংয়ের ভুলের কারণে শিরোপার ইঞ্চিখানেক কাছে গিয়ে ফিরে এসেছি- এমন নজিরও আছে।
আর আমাদের স্পন্সর! তারা তাদের ইচ্ছামতো আমাদের বিসিবিকে ঘোল খাওয়ায়, আর বিসিবি দুধের বদলে ঘোল পেয়েই খুশি। দুধকে প্রসেস করে কিন্তু ছানা এবং মাখন-ঘিও পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের স্পন্সররা বিসিবিকে ঘটিবুঝ দেন- আপনাদের দুধ টকে গেছে, এ দিয়ে ঘোল ছাড়া আর কিছুই হবে না। বিসিবিও সুবোধ বালকের মতো তাই মেনে নেন। আপনি কোনোদিন দেখেছেন, একই জার্সিতে এক স্পন্সরের লোগো তিন তিনটি জায়গায় বসানো হয়?
কোনোদিন দেখেছেন, একই টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া অন্য দলের জার্সির সঙ্গে হুবহু মিলিয়ে দিয়ে কাউকে নিজেদের জার্সি ডিজাইন করতে? কোনোদিন দেখেছেন, একটা বিশ্বমানের করপোরেট প্রতিষ্ঠান অন্তত বিশ বছর ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিচরণ করছে কোনও ব্র্যান্ড গাইডলাইন ছাড়া? বিসিবির মার্কেটিং কমিটি সম্ভবত জানেই না, তারা একটা ব্র্যান্ড এবং প্রত্যেক ব্র্যান্ডর একটা গাইডলাইন থাকে, যে গাইডলাইনের বাইরে ওই ব্র্যান্ড-সংশ্লিষ্ট কোনও কিছু করা যায় না। যেটা ওই ব্র্যান্ডের সংবিধান, ব্র্যান্ডের কোরআন-বাইবেল, যাকে অমান্য করার অধিকার কারও নেই।
বিসিবির শৃঙ্খলা কমিটি বলে একটা কমিটি থাকার কথা। এই কমিটির কাজ কী, তা আমি জানি না। চরম বিশঙ্খল একটা ভজঘট বাধিয়ে রাখা ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষায় এই কমিটি কী করে থাকে আদতে? সেই যে আমাদের সেরা ক্রিকেটারদের বড় একটা অংশ আইসিএল খেলতে চলে গেলো, কমিটি টেরও পায়নি। এরপর ব্যাটিং কেলেংকারিতে আরেক সেরা ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেলো, কমিটি কিছু করতে পারেনি। বিশ্বকাপ চলাকালীন দলের অধিনায়ক জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখেছেন, কমিটি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছে, কিছু বলেনি। জাতীয় দলের চুক্তিভুক্ত ক্রিকেটার পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বোর্ডের নামে বিষোদ্গার করেছে, কমিটি নীরব! দলের সেরা খেলোয়াড়, বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার ‘মৌখিক’ অনাপত্তি নিয়ে বিদেশে চলে যান খেলতে, কমিটি ঠেকাতে পারে না। এরকম অজস্র নমুনা আছে এই কমিটির ব্যর্থতার।
ক্রিকেট দলের মতো সুপার প্রফেশনাল একটা স্কোয়াডের যে কাউকে যেকোনও মেয়াদে খেলা থেকে বিরত রাখা বোর্ডের জন্য বিলাসিতা। তাই শৃঙ্খলা কমিটির কাজ আসলে অপরাধ করার পর শাস্তি বিধান করা নয়, বরং অপরাধ যাতে কেউ না করতে পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। সবসময় তার ক্রিকেটারদের আগলে রাখা, যাতে তারা ভুল করতে না পারে। ক্রিকেটাররা কেউ ক্রিমিনাল নয় যে অপরাধ করবে। বরং তারা কাঁচা বয়সের কারণে, অনভিজ্ঞতার কারণে, না বোঝার কারণে এবং কিছুটা বয়স-জনিত অপরিণামদর্শিতার কারণে প্রায়ই নানারকম শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজ করে ফেলতে পারেন। সেটা যাতে শাস্তিমূলক অপরাধের পর্যায়ে যেতে না পারে, তার জন্য সবসময় তাদের চোখে চোখে রাখা, তাদের মাঠের এবং মাঠের বাইরের কর্মকাণ্ড মনিটর করা- এটাই এই কমিটির কাজ হওয়া উচিত। আর এটা এমন কোনও কঠিন কাজও নয়। এত বড় বহর তো আর ক্রিকেটারদের নয়। হাতে গোনা পঁচিশ-ত্রিশজন ক্রিকেটার– তাদেরই যদি যত্ন নিতে না পারেন, তাহলে এই এত বড় কর্মযজ্ঞ সামলাবেন কী করে?
বিসিবির অ্যাসেট ভ্যালুয়েশন কারা করে, আমার জানা নেই। তাদের কোনও ক্রেডিট রেটিং ব্যবস্থা আছে কিনা, তাও জানা নেই। বিসিবি হয়তো মনে করে, তাদের ব্যাংকে জমা রাখা ৯০০ কোটি টাকার এফডিআর-ই তাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এরপর হয়তো আসবে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট-খ্যাত স্টেডিয়ামের মালিকানা, আরও কিছু এ ধরনের বস্তুগত সম্পত্তি, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় অ্যাসেট যে তার ক্রিকেটার, তার ক্রিকেট সংস্কৃতি ও ক্রিকেট ঐতিহ্য- সেটা মূল্যায়ন করার সামর্থ্য সম্ভবত বিসিবির নেই। তাই ক্রিকেটকে রক্ষা করার জন্য, ক্রিকেটারদের রক্ষা করার জন্য, ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করার জন্য বিসিবি আদৌ কিছু করে বলে আমার জানা নেই। আমার জানায় ঘাটতি থাকতে পারে, তবে সত্যিই এমন কোনও উদ্যোগ বা কর্মসূচি থেকে থাকলে সেটা আমাকে জানানোর জন্য, আমার মতো দেশের সব মানুষকে জানানোর জন্য, ক্রিকেটে আগ্রহ আছে এমন বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষকে জানানোর জন্য বিসিবি নিজে থেকে কী করেছে, সেটাও আমার জানা নেই। একজন কিশোর ছেলে ক্রিকেটার হওয়াকেই জীবনের লক্ষ্য কেন বানাবে? কেন সে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা ছেড়ে দিয়ে জাতীয় দলের সিলেকশন ক্যাম্পে চলে যাবে, যেভাবে শচীন গিয়েছিলেন? কেন তার বাবা-মা তাকে এইচএসসি পরীক্ষা না দিয়ে বিপিএল-এ খেলতে উৎসাহ দেবেন? আপনারা ২৬ বছর বয়সী ক্রিকেটারকে মুখের ওপর জানিয়ে দেবেন- তুমি আমাদের বিবেচনায় নেই, ২৯ বছর বয়সী ক্রিকেটারকে স্থায়ীভাবে বাদ দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা মিডিয়ায় ‘লিকআউট’ করে দেবেন, সেই ক্রিকেট সংস্কৃতির অংশ হওয়ার জন্য একটি কিশোর ছেলে তার সারা জীবনের জন্য ক্যারিয়ার স্যাক্রিফাইসের ঝুঁকি নেবে কোন সাহসে? সে জন্যই, ১৫ বছর আগে একজন সাকিব আল হাসান নিজ দক্ষতায় ওয়ার্ল্ড রেটিংয়ের শীর্ষে আসেন যদিও, কিন্তু সেই ১৫ বছরে আর একজনকেও ব্যাটিং বোলিং অলরাউন্ড কোনও ক্যাটাগরিতেই শীর্ষে ওঠার পথে সামান্যতম সহযোগিতা করতে পারে না বিসিবি। তাই ঘুরেফিরে সাকিব সাকিব এবং সাকিব।
বিসিবির সাকিব ছাড়া আর কিছু কি ছিল, নাকি আর কিছু আছে? সাকিবও কি আসলে বিসিবির নিজস্ব কোনও ব্র্যান্ড?
এরই মধ্যে বিসিবির দুটো ‘মাইনর’ টিম মেজর দুটো সাফল্য অর্জন করে ফেলেছে, যেটা নিয়ে বিসিবির কোনও উৎসাহ উদ্দীপনা নেই! প্রথমে নারী ক্রিকেট দল এশিয়া কাপ জিতে গেছে, তারপর অনূর্ধ্ব ১৯ দল তো বিশ্বকাপই জিতে বসেছে। অন্যরা যে যাই ভাবুক, বিসিবি নিজে সম্ভবত এই দুটো বিরাট সাফল্যকেই ‘ঝড়ে-বক’ ভেবেছিল। নচেৎ এই দুই দুটি মেজর ট্রফি নিয়ে বিসিবির কোনও হেলদোল দেখা যায়নি কেন? এবং দুটো দলই কিন্তু শিরোপা দুটির ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নাকানিচুবানি খেয়ে এসেছে! …
প্রকৃতপক্ষে, জাতীয় দল ছাড়া আর কাউকে নিয়ে কি বিসিবি আদৌ কিছু ভাবে? জাতীয় দলের পাশাপাশি নারী দল, এ দল, যুব দল, হাইপারফরম্যান্স স্কোয়াড- এগুলোও কি বিসিবির নিজস্ব দল নয়? কিন্তু বিসিবি ঘুরেফিরে এই জাতীয় দলেই আবদ্ধ। জাতীয় দলেরও পুরোটা নিয়ে নয়, কেবল স্কোয়াডই তাদের কাছে ফোকাস পায়, ১৩-১৪ জনের স্কোয়াডের বাইরে কাউকে বোর্ড গোনাতেই ধরে না, স্কোয়াডেরও প্লেয়িং ইলেভেন্থ ছাড়া আর কাউকে চোখে দেখতে পায় না। তাই দলের সঙ্গে থেকেও রুবেল এমনকি নেট-বোলারও হতে পারেননি গোটা একটা বছর – এমন হতাশাজনক ঘটনাও ঘটেছে!
ক্রিকেটার হতে হলে কোচিং করতে হয়, পারফরম্যান্সের প্রমাণ দিতে হয়। বয়সভিত্তিক দলগুলোতে পারফর্ম করতে হয়, তারপরই কেন্দ্রীয় চুক্তির জন্য বিবেচনায় আসা যায়। কোচ হতে গেলে কোচিংয়ের কোর্স করতে হয়, কয়েকটা লেভেল পাস করে আসতে হয়, তারপরই প্রফেশনাল কোচ হিসেবে বিবেচনায় আসা যায়। ক্রিকেট প্রশাসক হওয়ার জন্য, ক্রিকেট বোর্ডের কোনও কমিটিতে ঢোকার জন্য, বিসিবির কোনও না কোনও পর্যায়ের কোনও দায়িত্ব পালনের জন্য কী কী প্রশিক্ষণ নেওয়া আবশ্যক? কী কী সার্টিফিকেট থাকা আবশ্যক? কী কী অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক? কোন কোন প্রফেশনাল স্কিল, এক্সপেরিয়েন্স, নলেজ অ্যান্ড এক্সপার্টিজ ‘মাস্ট রিকোয়্যার্ড’?
এবং এই যে ক্রিকেট প্রশাসনের চরম অদক্ষতা ও ব্যর্থতা, তার প্রত্যক্ষ প্রভাব হলো আমাদের ক্রিকেট দলটার সামর্থ্য। জাতীয় দলের কথাই ধরা যাক।
আমাদের দলে ৫০-এর কাছাকাছি এভারেজের ব্যাটার আছেন কতজন? ১২০% +/- স্ট্রাইক রেট কতজন ব্যাটারের? ১৪৫ কি.মি./ঘণ্টা গতির বোলিংয়ের বিপক্ষে শট খেলতে পারা ব্যাটার কতজন? গুগলি, ফ্লিপার, দুসরা সামলাতে পারা ব্যাটার কতজন? বাউন্সার, ইয়োর্কার, রিভার্স সুইং সামলাতে পারার স্কিল ক’জনের আছে? হুক, পুল, রিভার্স সুইপ শট খেলতে পারেন ক’জন? ইম্প্রোভাইজড শটের চেয়ে বেসিক শট খেলতে সাবলীল ক’জন ব্যাটার?
আমাদের দলে ১৪৫+ গতিতে বোলিং করতে পারেন কতজন বোলার? পেসারদের বল ডানে-বামে কত ডিগ্রি সুইং করে? রিভার্স সুইং আদৌ কেউ করতে পারেন? শটপিচ বলগুলোতে কতদূর পর্যন্ত গতি তুলতে পারেন? ১৪০+ গতিতে ইয়োর্কার মারতে পারেন আমাদের কোন বোলার? ইন-কাটার, অফ-কাটার বিশেষজ্ঞ আছেন কেউ? বোলিং অ্যাকশন একই রেখে স্লোয়ার-কুইকার দিতে শিখেছেন পেসারদের কেউ?
আঙুলের অবস্থান লুকিয়ে রেখে বল ডেলিভারি দিতে পারেন ক’জন? না উপরে না নিচে– শটপিচ ডেলিভারিগুলো ঠিক কোমর বরাবর রাখতে পারেন– এমন আছেন কেউ? গুগলি, ফ্লিপার দিতে পারা লেগস্পিনার আছেন কেউ দেশে? দুসরা ডেলিভারি পারেন এমন কোনও অফ-স্পিনার আছেন? টপস্পিন করতে পারেন এমন কেউ? ফ্লাট উইকেটে বাঁহাতি স্পিনার বা রিস্ট স্পিনারদের বল কতটা টার্ন করে?
আমাদের দল সর্বশেষ টেস্টে খেলতে নেমেছে একসঙ্গে তিন তিন জন উইকেট কিপার ব্যাটার নিয়ে, যাদের মধ্যে একজন হলেন এই মুহূর্তে খেলতে থাকা ক্রিকেটারদের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো। তিনি এখনও প্রতি ম্যাচে এমন সব ক্যাচ মিস করেন, যেগুলো ১৭-১৮ বছর বয়সী অনভিজ্ঞ কিপাররাও হয়তো করবেন না।
তৃতীয় কিপার মাত্রই অভিষিক্ত, তাকে বাদ দিলে দ্বিতীয় জনও উইকেটকিপার হিসেবে প্রথমজনের মতো একই মানের অচল এবং গ্লাভস ছাড়া ফিল্ডিং করতে দিলে দুজনেরই একই দশা হয়।
মুশফিকের মতো লিটনও প্রতি ম্যাচে শর্ট পজিশনে ক্যাচ ফেলেন, যেগুলো খুবই সহজ ক্যাচ। অথচ, আপনি রাহুল দ্রাবিড়ের কথা মনে করে দেখুন। তিনি গ্লাভস ছাড়া যতটা সফল ক্যাচার ছিলেন, গ্লাভস পরেও ঠিক ততটাই সফল কিপার। সৌরভের টিম ইন্ডিয়ায় দ্রাবিড়কে জোর করে কিপিং করানো হতো, যাতে একজন বাড়তি বোলার বা ব্যাটার দলে নেওয়া যায়। দ্রাবিড় চাইতেন না কিপিং করতে। নানাভাবে আপত্তি জানাতেন, যার মধ্যে একটি হলো, কিপিং করার কারণে তার ব্যাটিং খারাপ হচ্ছে। সৌরভ তখন পরিসংখ্যান দেখাতেন, কিপার হিসেবে তার ব্যাটিং পারফরম্যান্স বরং কিপিং করার আগের দিনগুলোর চেয়ে ভালো।
এমনটা অন্যান্য দলেও দেখা গেছে, পুরোদস্তুর ব্যাটাররা উইকেট কিপিং করতে চান না, কারণ পুরো পঞ্চাশ ওভার উইকেটের পেছনে থাকার পর ব্যাটিংয়ে নামাটা তাদের জন্য কষ্টকর বলে মনে হয়।
মুশফিক বাংলাদেশ দলের সেই ব্যাটিং স্তম্ভ, যিনি কিপিং করতে না দিলে মাঠেই নামতে চান না! এর পেছনে এমন কোনও কারণ নেই যে উইকেট কিপিং তার প্যাশন, তিনি বিশ্বাস করেন অন্য কেউ তার মতো কিপিং করতে পারবে না বা দলে তার কিপিংয়ের বিকল্প নেই। বরং উল্টোটা। কিপিং ছাড়া অন্য কোনও পজিশনে ফিল্ডিং করতে তিনি কনফিডেন্ট নন। অধিনায়ক থাকা অবস্থায় কয়েকটি ম্যাচে তিনি অন্যকে কিপিং করাতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই ম্যাচগুলোতে তার ফিল্ডিং পজিশন ছিল লং-এ, বাউন্ডারি লাইনে। ক্যাপ্টেন এত দূরে থাকলে বোলারের সঙ্গে ক্লোজ-নিটে থাকবে কীভাবে– এই প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, আমার আসলে ক্যাচিং দুর্বল তো, তাই কোচ আমাকে ক্লোজ ফিল্ডিংয়ে থাকতে নিষেধ করেছেন। … অপর এক প্রশ্নের জবাবে কিপিং ছাড়তে না চাওয়ার কারণ হিসেবে বলেছিলেন, খালি-হাতে শক্ত বল ধরতে তার অসুবিধা হয়! দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ সদস্য, সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য শক্ত বল ধরতে ভয় পান, তাই গ্লাভস ছাড়তে চান না!
আমাদের দলের ওপেনিং ব্যাটাররা কেউ ম্যাচের টেম্পারমেন্ট বুঝে ব্যাট চালাতে পারেন না, তাই কিছু বুঝে ওঠার আগেই আউট হয়ে যান। উইকেটের চরিত্র কেমন, বল টার্ন করছে নাকি বাউন্স করছে, বোলারের প্রোফাইল কী, এসব কিছুই না বুঝে অপরিণামদর্শী শট খেলে দ্রুততম সময়ে ফিরে আসেন।
ওয়ানডাউন ব্যাটারকে একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হয়। যদি ওপেনিং জুটি বড় হয় এবং রানরেট ভালো রাখে, তাহলে সেই টেম্পো ধরে রাখা তাঁর দায়িত্ব। যদি ওপেনিং ফেইল করে, তাহলে শক্ত হাতে হাল ধরে বোলার-ফিল্ডারদের পরিকল্পনার বিপক্ষে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোই তাঁর প্রধান কাজ। অর্থাৎ স্রোত অনুকূলে থাকলে জোরে বৈঠা মারা, প্রতিকূলে থাকলে ভাটির টান ঠেকানো।
আমাদের তিন নম্বর ব্যাটার গত বিশ্বকাপ শুরুর আগে দেশের তো বটেই, বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে ফর্মে থাকা ব্যাটারদের একজন ছিলেন। তিনি বিশ্বকাপে গিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেননি! তার পর থেকে একটা ম্যাচেও তাঁকে আর্লি ব্রেক-থ্রু ঠেকাতে দেখা যায়নি, বরং প্রায় সব ম্যাচেই তিনি আউট হওয়া দ্বিতীয় বা তৃতীয় ব্যাটার!
এভাবে যদি পয়েন্ট ধরে ধরে বলা যায়, পাতার পর পাতা লেখা হয়ে যাবে, আমাদের দলের দুর্বলতার শেষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এসব খুঁজে লাভও নেই আসলে। কারণ, যাদের এসব খোঁজার কথা, খোঁজা উচিত, তারা তো খোঁজেন না। তারা নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন না যে এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠা দরকার। এগুলো তো আজ নতুন নয়। দিনের পর দিন ধরেই এই ঘাটতিগুলো পুষে যাচ্ছে আমাদের ক্রিকেট বোর্ড, আমাদের জাতীয় দল। দেশের মাটিতে নানান কৌশল করে কদাচিৎ দুর্দান্ত কিছু ম্যাচ জেতে তারা, আমরা ষোল কোটি দেশবাসী তাদের মাথায় তুলে নাচতে থাকি, আর বোর্ড থেকে নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্ট আত্মপ্রসাদে ভোগে- আমরা এবার সেমিফাইনাল খেলবো! আমরা এবার কাপটাই জিতে নেবো। এ যেন সেই বাহারি কার্পেট, যার কাজ আদতে ঘরের সৌন্দর্য বাড়ানো যতটা না, তার চেয়েও বেশি, মেঝের খানাখন্দ ঢেকে রাখা।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, ক্ষত ঢেকে রাখলে ক্ষতিই বাড়ে, ক্ষত কিন্তু সারে না একদমই। মুশকিল হচ্ছে, ক্ষতটাকে তারা ক্ষত হিসেবে মানতেই যদি না চান, তাহলে আর তা সারাবেন কীভাবে? যাদের সমস্যা, তারাই যদি এগুলোকে সমস্যা মনে না করেন, আমাদের মতো ক্রিকেট ভক্তদের আর কী করার থাকে?
মাঠে ক্রিকেটাররা কী খেলছে, তা নিয়ে হাহুতাশ করে লাভ নেই। মাঠ তো বড়জোর শো-রুম। শোরুমে সেই প্রোডাক্টই ডিসপ্লেতে আসে, যা তৈরি হয় কারখানায়। কারখানাটাই তো চলছে গোঁজামিল দিয়ে, শোরুমে আপনি ভালো প্রোডাক্ট আশা করছেন কেন? আগে কারখানা ঠিক করুন, কারখানার হিউম্যান রিসোর্স ঠিক করুন, বাকি সব ঠিক হয়ে যাবে। লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও উন্নয়ন গবেষক। [email protected]