শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:১০ am
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত হলে অনেকেই ভেবেছিলেন তার রাজনৈতিক জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। তার প্রথম মেয়াদকালে মার্কিন প্রশাসন অস্থিরতা ও তীব্র নিন্দার সম্মুখীন হয়েছিল, এমনকি নিজ দল রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকেও। তবু তিনি আবারও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ট্রাম্প সম্পর্কে সাবেক উপদেষ্টা ব্রায়ান লানজার মন্তব্য, ‘তিনি পড়ে গেলে দ্বিগুণ উদ্যমে উঠে দাঁড়ান। তার প্রত্যাবর্তনে কারও অবাক হওয়ার কিছু নেই’। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে তার রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।
স্বল্পস্থায়ী নির্বাসন :
চার বছর আগে ট্রাম্পকে প্রায় এক পরাজিত ব্যক্তি বলে মনে হচ্ছিলেন। বাইডেন তাকে সহজেই পরাজিত করেন এবং কংগ্রেসে ভোট গণনার দিনে ট্রাম্পের আহ্বানে তার সমর্থকেরা মার্কিন ক্যাপিটলে তাণ্ডব চালায়। সহিংসতার সময় শতাধিক আইনপ্রণেতা এবং কর্মকর্তাদেরকে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নিতে হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের শিক্ষা সচিব বেটসি ডেভোস এবং পরিবহন সচিব ইলেন চাওর মতো অনেকেই এই ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেন। এমনকি তার ঘনিষ্ঠ মিত্র রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছিলেন, ‘আমাকে বাদ দিন, যথেষ্ট হয়েছে’।
নির্বাচনি ফলাফলের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের দাবির কারণে কর্পোরেট বিশ্ব থেকেও তার প্রতি সমর্থন কমে যায়। আমেরিকান এক্সপ্রেস, মাইক্রোসফট, নাইকি ও ওয়ালগ্রিন্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাচন চ্যালেঞ্জকারী রিপাবলিকানদের জন্য আর্থিক সমর্থন স্থগিত করে। বাইডেনের অভিষেকের দিন ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে না থেকে মিয়ামিতে নিজের ব্যক্তিগত ক্লাব মার-অ্যা-লাগোতে ফিরে যান। লেখক মেরিডিথ ম্যাকগ্রো ‘ট্রাম্প ইন এক্সাইল’ বইতে তার মনের অবস্থা সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি ক্ষুব্ধ, হতাশ এবং তার ভবিষ্যৎ রাজনীতির পরিকল্পনাহীন ছিলেন।’
রাজনীতিতে পুনরাগমন :
তবে হোয়াইট হাউজ ত্যাগের সময় সমর্থকদের উদ্দেশে এক মন্তব্যে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ‘আমরা নতুন রূপে ফিরে আসব’। ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান কেভিন ম্যাককার্থি তখন মার-অ্যা-লাগোতে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন এবং পরবর্তী বছরের কংগ্রেস নির্বাচনে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সময়ও রিপাবলিকান দলের নেতারা ট্রাম্পকে শায়েস্তা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাককার্থির ওই সফরের পর অনেকেই তাকে ক্ষমা করার পক্ষপাতী হন। ট্রাম্পের জন্য এটি পুনরায় দলের সঙ্গে সংযোগের একটি বড় সুযোগ তৈরি করে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কনজারভেটিভ পলিটিকাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি) বক্তৃতার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের যাত্রা এখনও শেষ হয়নি’। ট্রাম্প সমর্থকদের কাছে তা পুনরায় তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থার প্রকাশ ঘটায়। ওই ভাষণের পর থেকেই তিনি নতুন করে তহবিল সংগ্রহ শুরু করেন এবং তার বিশেষ ধরনের জনসমাবেশ আবার শুরু করেন।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের উত্থান-পতন :
২০২১ সালের শেষে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাইডেনের জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। মার্কিন অর্থনীতি, মূল্যস্ফীতি ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ফলে ট্রাম্পের রাজনীতিতে ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হয়। অনেক রিপাবলিকান নেতা মনোনয়নের জন্য ট্রাম্পের সমর্থন চেয়েছিলেন। কারণ তার সমর্থন প্রায় নিশ্চিত বিজয়ের সমান ছিল। কিন্তু ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফল ট্রাম্পের জন্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসে। রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ ফিরে পেলেও সিনেটে তাদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়।
প্রাইমারি ও আইনি জটিলতা :
২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করে ট্রাম্প আবার রাজনীতির আলোচনায় ফিরে আসেন। যদিও তার বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্ক ও জর্জিয়াসহ একাধিক মামলার আইনি জটিলতা ছিল। তিনি তার সমর্থকদের কাছে এটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে উপস্থাপন করেন। তার প্রাইমারির প্রচারণার সময় ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসকে পেছনে ফেলে নিজেকে দলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
ট্রাম্পের আইনি সমস্যাগুলো তাকে আবার জনপ্রিয়তা এনে দেয়। বিশেষ করে রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে যারা এটিকে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন তারা ট্রাম্পের পক্ষে জোরালো সমর্থন জানান। তার আইনি দল বিচারিক রায়কে চ্যালেঞ্জ করে এবং তিনি প্রচারণার কৌশল পরিবর্তন করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে যোগ দেন।
শেষ লগ্নে সমর্থনের স্রোত :
২০২৪ সালের গ্রীষ্মে রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ট্রাম্পের উপস্থিতি তার সমর্থকদের মাঝে নতুন করে উচ্ছ্বাসের সঞ্চার করে। কনফারেন্সে ইলন মাস্কসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ট্রাম্পের সমর্থন জানান। এতে করে তার নির্বাচনি প্রচারণায় অনুপ্রেরণা ছড়ায়। ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্কের পরও ট্রাম্প তার দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই অভাবনীয় প্রত্যাবর্তন রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়। তিনি কেবল ধ্বংস থেকে পুনর্জন্মই নয় বরং আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন