রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:১৭ pm
মমিনুল ইসলাম মুন, বিশেষ প্রতিবেদক :
সারাদেশের ন্যায় রাজশাহীর তানোরে ঘূর্ণিঝড় ‘দানার’ কিছুটা প্রভাবে আমনের পাঁকা ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। পাশাপাশি শীতকালীন আগাম শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যতেও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীনে পড়েছেন কৃষকরা। আজ শনিবার ২৬ অক্টোবর সকালে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
কৃষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ২৩ অক্টোবর রাত থেকে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। আজ শনিবার সকালে এরির্পোট লেখা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলেনি। থেমে থেমে ঝড় ও বৃষ্টির মধ্যে কৃষকরা আমনখেতে গিয়ে দেখেন ধানগাছ মাটিতে পড়ে গেছে। এতে বৃস্টির পানি জমেছে। পঁচন ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে, বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় কি পরিমাণ আমনখেতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেই তথ্য কৃষি বিভাগ দিতে পারেনি।
তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির কৃষক আবুল হোসেন বলেন, তার ৫ বিঘা জমির পাঁকা ধান কেটে রেখেছিলেন শুকানোর জন্য। দুই দিন ধরে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে তার জমিতে পানি জমেছে। সেই সাথে নুয়ে পড়েছে ধানগাছ। এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছি। কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা পাওয়া ভাগ্যের বিষয় বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
অন্যদিকে আরেক কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, গত বছর আমন ধানের ভালো দাম পাননি। এজন্য এবারে হতাশায় ছিলেন তিনি। আগামী সপ্তাহ থেকে তার ১০ বিঘা জমির ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে বেশিরভাগ ধান গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে।
অপরদিকে শীতকালীন আগাম শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যতেও বৃস্টির পানি জমে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও অনেকে রবিশস্য রোপনের জন্য জমি চাষ করে বিপদে পড়েছেন। এ যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
কৃষক আয়ুব আলী ও আব্দুল বারী বলেন, ‘বৃস্টি ও ঝোড়ো হাওয়াতে ইতিমধ্যে চরম ক্ষতি হয়ে গেছে। তার ১ একর জমিতে আগে প্রায় ৫০ মণ ধান পাওয়া যেত, এখন সেখানে ৩০ মণ হবে কিনা সন্দেহ। এছাড়াও শিব নদীর পাড় ও নিচু এলাকায় আমনখেতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২২ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমি। এরমধ্যে হাইব্রিড ২৮ হেক্টর, উফশী জাত ২২ হাজার ১১৭ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের চাষ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬০ হাজার ২৯৮ মেট্রিক টন।
এব্যাপারে উপজেলার স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত স্বশিক্ষিত কৃষি বিজ্ঞানী নুর মোহাম্মাদ জানান, রোপা-আমন ধান রোপনে শুরুর দিকে কৃষকদের প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। বৃষ্টির পানি সময় মত পায়নি। সার নিয়ে ছিল অসহীয় সিন্ডিকেট। আর শেষ মুহুর্তে বৃষ্টি-ঝড়ো হাওয়ায় নুয়ে পড়েছে আমনের খেত। মনে হয় উৎপাদনে কিছুটা হ্রাস পাবে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘দানার’ প্রভাব নয়, নিচু এলাকায় বাতাসে আমন ধানের গাছ পড়ে গেছে। তেমন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি শিগগিরই এ দুর্যোগ কেটে যাবে। রা/অ