বৃহস্পতিবর, ২১ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০২:৫১ pm
এম এম মামুন :
রাজশাহীর মোহনপুর গার্লস ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক মন্ডল বিরুদ্ধে নিয়োগ ও বেতন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি করে বিলাসবহুল দুটি বাড়িসহ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীবৃন্দ স্বাক্ষর করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের জন্য উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসারকে আহবায়ক করে সমবায় অফিসার ও যুব উন্নয়ন অফিসারকে নির্বাচিত করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু অভিযোগটি তুলে নেওয়ার জন্য অভিযোগকারীর ওপর অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক মন্ডলসহ তার লোকজন চাপ সৃষ্টি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীরা বলেন, অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক মন্ডলসহ তার লোকজন অভিযোগটি তুলে নেওয়ার জন্য আমাদেরকে ব্যাপকভাবে সৃষ্টি করেছেন। অভিযোগকারীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ইতিপূর্বে প্রায় ৩ কোটি টাকা দুর্নীতির কারণে কলেজের গভনিং বডির সাবেক সভাপতি দীলিপ কুমার সরকার তপন চলতি বছরের ১১ মার্চ অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ করেন। এরপর ২১ মার্চ অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মালেক মন্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে মোহা. আসাদুজ্জামান আসাদ নির্বাচিত হওয়ার পর এমপির ভাই কামরুজ্জামানের প্রভাব খাটিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মো. একরামুল হককে সভাপতি করে অর্থের বিনিময়ে তিনি অধ্যক্ষ পদে ফিরে আসেন। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যক্ষ মো.আব্দুল মালেক মন্ডলের বিরুদ্ধে নিয়োগ ও বেতন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন কলেজের শিক্ষক কর্মচারীরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোহনপুর গার্লস ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ মো.আব্দুল মালেক মন্ডল ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত করেন। এছাড়াও গত ২০১৯ সালের উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল আলিম কাজী তার বন্ধুর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সরকারি করণের একটি ভূয়া চিঠি নিয়ে এসে সহকারী অধ্যাপক মো. শামসুদ্দিন মোল্লাকে আহবায়ক করে শিক্ষক কর্মচারীর কাছ থেকে ৫৭ লাখ টাকা উত্তোলন করে অধ্যক্ষ নিজেই আত্মসাত করেন। সহকারী অধ্যাপক ১৬ জনের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা, সিনিয়র প্রভাষক ১২ জনের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা, তৃতীয় শিক্ষক ৯ জনের কাছ থেকে ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকাসহ ১৫ বছরের টিউশন ফি ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথিদের উপহার ক্রয়ের বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করে সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাত করে রাজশাহী শহরের কয়েরদাড়ায় ৮০ লাখ টাকা দিয়ে ৪ কাটা জমি ক্রয় করেন। মোহনপুর উপজেলা বিদ্যুৎ পাওয়ার অফিসের পাশে ৫০ লাখ টাকা খরচ করে একতলা ফ্লাট বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও তার নিজ গ্রাম মুল্লিকপুরে ৭০ লাখ টাকা খরচ করে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়শা সিদ্দিকা বলেন, মোহনপুর গার্লস ডিগ্রি কলেজর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক কর্মচারীদের অভিযোগে প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোহনপুর গার্লস ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো.আব্দুল মালেক মন্ডলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। রা/অ