সমবার, ২১ অক্টোব ২০২৪, সময় : ০৯:৩৮ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
গোদাগাড়ীতে নরোত্তম ঠাকুরের তিরোভাব তিথির ৪৯০তম মহোৎসব রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভ-সমাবেশ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন ইভটিজিংয়ের অভিযোগে দুর্গাপুরে যুবলীগ নেতাকে গণধোলাই তানোরে এলজিইডির সদ্য নির্মিত রাস্তায় ভাঙ্গন, নির্বিকার কর্তৃপক্ষ কালাই ক্ষেত থেকে অটো চালকের মরদেহ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩ নাচোলে আ.লীগের সেক্রেটারী আব্দুল কাদেরসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা নাচোলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জামায়াতের মতবিনিময় আসহাবে কাহাফের ঘটনা সম্পর্কে জেনে নিন : দুধরচকী রাজশাহীতে বিশ্ব শেফ দিবস উদযাপিত জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বগুড়ার কৃতি সন্তান শাইন, বিভাগীয় শাখার অভিনন্দন বাঘায় মাদক কারবারীর সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকের ওপর হামলা তানোরে ওয়ার্ড বিএনপি’র মতবিনিময় সভা দেশ ছাড়ার আগে যা বলতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা এএসপিদের কুচকাওয়াজ স্থগিতে মুখ খুলেননি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দায়িত্ব পালন করেছে আনসারা : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিএমডিএকে কৃষকের স্বার্থে কাজ করতে হবে : কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সারদায় এএসপিদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত রংপুরে আ.লীগ নেতা হত্যায় ৫০০ আসামি করে মামলা, ছাত্রজনতার আল্টিমেটাম
গোদাগাড়ীতে নরোত্তম ঠাকুরের তিরোভাব তিথির ৪৯০তম মহোৎসব

গোদাগাড়ীতে নরোত্তম ঠাকুরের তিরোভাব তিথির ৪৯০তম মহোৎসব

সেলিম সানোয়ার পলাশ :
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শুভ অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হলো তিন দিনব্যাপি বৈষ্ণব ধর্মের মহাপুরুষ ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি উপলক্ষে ৪৯০তম মহোৎসব। নরোত্তম ঠাকুরের তিরোভাব তিথি উপলক্ষে প্রতিবছর লক্ষ্মী পূর্ণিমার পাঁচদিন পর পঞ্চমী তিথিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খেতুর গ্রামে ঐতিহ্যবাহী গৌরাঙ্গবাড়ি মন্দিরে (খেতুরীধামে) নেমেছে ভক্তদের ঢল।

দুই দিন আগে হতেই দেশের দূর দূরান্ত হতে ভক্তরা এসে আপন আপন থাকর জায়গা করে নিয়েছে। গোরাঙ্গবাড়ীর নির্ধারিত জায়গায় ছাড়াও রাস্তার দুইপাশে বিভিন্ন পসরার দোকান সাজিয়ে জমে উঠেছে খেতুরীধামে মহোৎসব। সারা দুনিয়ায় বৈষব ধর্মের অনুসারীদের পাঁচটি ধাম রয়েছে। এরমধ্যে চারটিই ভারতবর্ষে। বাংলাদেশের একমাত্র ধাম এই খেতুরে। তাই বাংলাদেশের সনাতন বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীদের কাছে এর গুরুত্ব অনেক। দেশের আর কোথাও বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীদের এত বড় জমায়েত হয় না।

সোমবার (২১ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপি এই মহোৎসব। সোমবার সন্ধ্যায় শুভ অধিবাসের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) অরুনোদয় থেকে অষ্টপ্রহরব্যাপী চলবে নাম সংকীর্ত্তন। বুধবার (২৩ অক্টোবর) ভোগ মহোৎসব, দধিমঙ্গল ও মহান্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে শেষ হবে অনুষ্ঠান।

স্থানীয় বাসিন্দা সমাজসেবক এহসানুল কবির টুকু জানান, উৎসব চলাকালে প্রেমতলী থেকে বসন্তপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শুধু ভক্তদের ভিড় থাকে। ওই তিন দিন মাইকে ২৪ ঘণ্টা কীর্ত্তন চলে। আশপাশে সব মুসলমানদের বাড়ি, কিন্তু কখনও কোনো সমস্যা হয় না। বরং মুসলমানরাও এ অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। বাড়ির উঠানে ভক্তদের থাকতে দেন। নির্দ্বিধায় বাড়ির শৌচাগার ব্যবহার করতে দেন। খেতুরীধামের আশপাশে মেলা বসবে বলে মানুষ একটু আগাম ধান চাষ শুরু করে। ধান কেটে নিয়ে জমি ফাঁকা রাখে।

গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্ট বোর্ড পরিচালনা কমিটির সম্পাদক শ্যামাপদ সান্যাল বলেন, ‘খেতুরীধামের উৎসব নিয়ে এ এলাকার মানুষ যথেষ্ট আন্তরিক। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। কখনও এখানে বিশৃঙ্খলা হয়নি। শুধু প্রশাসন দিয়ে সবকিছু হয় না। স্থানীয়রাও সহযোগিতা করেন। ভক্তদের থাকার জন্য অনেকে নিজের ঘর ছেড়ে দেন। এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে! এখানে যে মেলা বসে সেটা শুধু সনাতন বা বৈষ্ণব ধর্মের মানুষের নয়, সব ধর্মের মানুষই আসে।’

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, ‘উৎসব ঘিরে প্রতিবছর বসন্তপুর থেকে প্রেমতলী পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। সেনাবাহিনী,পর্যাপ্ত পুলিশ, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক আছে। এবার পুলিশের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে এক হাজার জন করা হয়েছে। এ উৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। এখানে নরোত্তম ভক্তরা এসে মুসলিমদের বাড়িতে থাকে পর্যন্ত। এবারও এই সম্প্রীতি বজায় থাকবে।’

নরোত্তম ঠাকুর মহাশয় এর সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে জানা যায়, ১৫৩১ খ্রীষ্টাব্দে ঠাকুর নরোত্তম দাস তৎকালীন গড়েরহাট পরগণার অন্তর্গত ও বর্তমান গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মাতীরস্থ গোপালপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা জমিদার কৃষ্ণনন্দ দাস, মা নারায়নী রাণী। গোপালপুরে শৈশব অতিবাহিত করে ঠাকুর নরোত্তম দাস বৃন্দাবন অভিমুখে যাত্রা করেন। সেখানে নিখিল বৈষ্ণবকুল চূড়ামণি লোকনাথ গোস্বামীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে দীক্ষা লাভ করেন।

পরে তিনি গোদাগাড়ীর খেতুরী গ্রামে আসেন। খেতুর মন্দিরে স্থাপনা গড়ে তোলেন এবং সেখানে উৎসব আয়োজনের ব্যবস্থা করেন। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে তার কাছে দীক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেন।

১৬১১ খ্রীষ্টাব্দের কার্তিকী কৃষ্ণা পঞ্চমী তিথিতে ঠাকুর নরোত্তম দাস নিত্তলীলায় প্রবেশের মানসে গঙ্গাস্নানের বাসনা প্রকাশ করেন। শিষ্যগণ তাকে গঙ্গাজলে নিয়ে গেলে নিজের দেহকে অর্ধনিমজ্জিত করে প্রিয় শিষ্য গঙ্গানারায়ণ ও রামকৃষ্ণকে আদেশ করেন দেহ মার্জন করতে। গুরু আজ্ঞায় নরোত্তমের ওই দুই শিষ্য দেহ মার্জন করতে থাকলে পুরো দেহ সাদা দুধের মতো তরল পদার্থে পরিণত হয়ে গঙ্গাজলে মিলিত হয়ে যায়। সে অনুযায়ী ঠাকুর নরোত্তম দাস পৃথিবীতে ৮০ বছর স্থায়ী ছিলেন।

এরপর থেকেই যুগ পরস্পরায় দুর্গাপূজার পর বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারীরা অহিংসার এই মহান সাধক ঠাকুর নরোত্তম দাসের কৃপা লাভের আশায় খেতুরী ধামে বার্ষিক মিলিত হয়ে থাকেন। রা/অ

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.