শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:৩৫ pm
এম এম মামুন :
রাজশাহীর সারদায় ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষ মুহূর্তে এসে স্থগিত করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই রাজশাহীতে পৌঁছান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তবে শেষ পর্যন্ত কুচকাওয়াজ হয়নি। এ বিষয়ে কোনো কথাও বলেননি উপদেষ্টা।
রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন উপদেষ্টা। ব্রিফিংয়ে তিনি বাজারদর ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। এএসপিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিতের বিষয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ওটা ক্লিয়ার করা হইছে। ভালো থাকেন।’ এই বলেই ব্রিফিং শেষ করে চলে যান উপদেষ্টা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলামসহ অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে এএসপিদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণসহ কয়েকটি সফরসূচি নিয়ে রাজশাহী এসেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। গতকাল শনিবার রাতেই তিনি পুলিশ একাডেমি পৌঁছান এবং সেখানে রাত্রিযাপন করেন। আজ রোববার সকালের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করার কথা জানানো হয়। ‘অনিবার্য কারণবশত’ কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায়। অনিবার্য কারণ কী তা স্পষ্ট করা হয়নি। সাংবাদিকদের প্রশ্নও এড়িয়ে গেলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সাধারণত বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তারা সারদায় পুলিশ একাডেমিতে এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়। এরপর তাঁরা মাঠপর্যায়ে কাজের সুযোগ পান।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৪০ তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ব্যাচে অন্তত ৬২ জন ছাত্রলীগ নেতা নিয়োগ পান বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অতিথি হতে পুলিশ একাডেমির পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। শনিবার রাতে সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি।
আমন্ত্রণপত্রের ছবিতে লাল ক্রস এঁকে ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘দাওয়াতটা স্বজ্ঞানে প্রত্যাখ্যান করছি! কারণ, এক. এই ৬২ জন এএসপি হাসিনার আমলে নির্বাচিত হইছে। আর কত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিসিএস (পুলিশ)–এ নিয়োগ হতো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যক্তি আমার জায়গা থেকে তাই উক্ত প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার পক্ষপাতী নই। তাদের ব্যাপারে তদন্ত হয়েছে কি না!’
তিনি লেখেন, ‘কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই আওয়ামী লীগের দোসরদের এএসপি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ভাইদের মৃত্যুর মিছিল এখনো চলছেই। এমতাবস্থায় এই দোসরদের নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া মানে শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী করা। তাই আমি উক্ত অনুষ্ঠানের একজন আমন্ত্রিত অতিথি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে এই অনুষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করলাম। আমন্ত্রণপত্র বিতরণের পরও রাতেই কুচকাওয়াজ স্থগিতের বিষয়টি জানতে পেরে ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন সালাউদ্দিন আম্মার। তিনি লেখেন, ‘প্রোগ্রাম ক্যান্সেল করেছে পুলিশ একাডেমি সারদা। গত কিছুদিন ধরে চলা অনুষ্ঠান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল থেকেই রাজশাহীতে থাকার পরও মাত্র জানালো ক্যান্সেল করা হয়েছে। কিছু বুঝলেন? আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের আমরা কখনো গ্রহণ করবো না। তদন্ত হোক পরে যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ পাক। রা/অ