শুক্রবার, ২০ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৪১ am

সংবাদ শিরোনাম ::
ঢাবিতে সব ধরনের রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিখোঁজের সাতবছর পর ছেলেকে ফিরে পেলেন উচ্ছ্বসিত মা তানোরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ বাংলাদেশ ও ভারত ভিসা জটিলতায় চার যৌথ সিনেমা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক
আবারও সক্রিয় আলজাজিরার ষড়যন্ত্র মিশন

আবারও সক্রিয় আলজাজিরার ষড়যন্ত্র মিশন

নির্জলা মিথ্যাচার, বানোয়াট সংবাদ পরিবেশন তথা হলুদ সাংবাদিকতার জন্য কুখ্যাত হিসেবে সুপরিচিত আলজাজিরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণায়। আলজাজিরার শতকোটি টাকার সিনেমা ‘অল্য দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ পুরোপুরি ফ্লপ হয়েছে। ফ্লপ হওয়ারই কথা। বাস্তবতাবিবর্জিত ও ফ্যান্টাসিকেও হার মানানো এই সিনেমার নায়ক-কলাকুশলী সবাই দণ্ডিত কিংবা বিচারাধীন। সিনেমার নির্দেশদাতা পরিচালকও

দণ্ডিত। এই সিনেমার অর্থ জোগানদাতা তথা প্রযোজকরাও হয় নিজে দণ্ডিত, না হয় পরিবারের কোনো সদস্য দণ্ডিত। ব্লকবাস্টার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বানানো সিনেমাটি পুরো ফ্লপ হয়েছে। তাই এ সিনেমার বেশ কয়েকটি সিক্যুয়াল বানানোর প্রজেক্টও আপাতত বন্ধ বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। তাই নতুন মিশনে সক্রিয় আলজাজিরা। এবারের মিশন ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর ঠেকানো। এবার ভাসানচর নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণায় নেমেছে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন আলজাজিরা। গত ১৯ এপ্রিল ভাসানচরে প্রত্যাবাসন করা রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রচার করে চ্যানেলটি।

আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রাণ সংস্থাগুলো ওই দ্বীপের ঝুঁকির ব্যাপারে সতর্ক করেছে। তবে বাস্তব চিত্র হলো, কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গারা সেখানে আগের তুলনায় অনেক ভালো পরিবেশে রয়েছে। ভাসানচরে প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে দেশি-বিদেশি অনেক গণমাধ্যমে সেখানকার ইতিবাচক তথ্য তুলে ধরা হলেও আলজাজিরা তাদের প্রতিবেদনে অনেক তথ্য গোপন করে মিথ্যাচার করেছে। শুধু প্রত্যাবাসিত রোহিঙ্গারাই নয়, জাতিসংঘের টেকনিক্যাল টিম এবং ১০টি দেশের কূটনৈতিক দলও ভাসানচর পরিদর্শন করে তাদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ভাসানচর নিয়ে আলজাজিরার নেতিবাচক সংবাদ প্রচার নতুন ষড়যন্ত্রের অংশ।

এর আগেও বিভিন্ন সময় ভুয়া তথ্য দিয়েছে এবং বাংলাদেশবিরোধী উসকানিমূলক সংবাদ প্রচার করেছে আলজাজিরা।

২০০৯ সালের পর থেকেই বাংলাদেশের নানা ঘটনা নিয়ে অপপ্রচার করে চলেছে আলজাজিরা। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি ও মানবতাবিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে আলজাজিরা। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়েও ব্যঙ্গ করেছে আলজাজিরা। ‘বাংলাদেশ পার্টি চিফ টু হ্যাং ফর ওয়ার ক্রাইমস’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে ৩০ লাখ মানুষের শহীদ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলা হয়, ইতিহাসবিদদের হিসাবে মুক্তিযুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ মানুষ মারা গেছে। আলজাজিরার প্রতিবেদন কেন শত্রুতামূলক ও নির্জলা মিথ্যা তা অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসবে।

এক. ভাসানচরই বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ নয়। ভোলা, সন্দ্বীপ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সেন্ট মার্টিনস, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ, হাতিয়া, সুবর্ণচর, নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম দ্বীপাঞ্চল। এই সব কটি দ্বীপেই বাংলাদেশের নাগরিকরা যুগ যুগ ধরে বাস করে আসছে। ভাসানচরের কাছেই রয়েছে নোয়াখালীর হাতিয়া ও ভোলার মনপুরা উপজেলা। ব্রিটিশ পরামর্শক সংস্থার নির্মাণসংক্রান্ত পরামর্শ ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পরিকল্পিত এই আবাসনে উন্নত মানের রাস্তাঘাট, স্কুল, মসজিদ, সাইক্লোন শেল্টার, উঁচু বাঁধ, অগ্নি প্রতিরোধব্যবস্থা, নিরবচ্ছিন্ন নিজস্ব বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, চিকিৎসাসেবা, বাজার ও বিপণনের ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ফোরজি নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি স্থাপনসহ আধুনিক নাগরিক জীবনের সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এর পরও রোহিঙ্গাদের জন্য আলজাজিরার মায়াকান্না ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কী?

দুই. দ্বীপটিতে আজ অবধি কোনো সাইক্লোন হয়নি। ১৯৯৭ সালে দ্বীপের সবচেয়ে কাছাকাছি সাইক্লোন এসেছিল। এটি দ্বীপ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে ছিল। তবে জলোচ্ছ্বাসে পানি উঠেছিল। ১৭৬ বছরে বাংলাদেশের উপকূলে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় পর্যালোচনা করে আবাসন ঘিরে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিন স্তরের নিরাপত্তাবলয় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বেড়িবাঁধ। ভবিষ্যতে যাতে পানি না ওঠে এ জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে ৯ ফুট উঁচু করে। প্রশস্ত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল তৈরি করা হয়েছে, যা ঘূর্ণিঝড়কালীন সমুদ্রের ঢেউয়ের প্রকোপ থেকে দ্বীপের ভূমি রক্ষা করবে। বাড়িগুলো মাটির চার ফুট ওপরে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে তৈরি। ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হলে আশ্রয় নেওয়ার জন্য ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এমনভাবে স্টিল, কংক্রিট ও কম্পোজিট স্ট্রাকচারে তৈরি, যা ২৬০ কিলোমিটার গতির ঘূর্ণিঝড় সহ্য করতে সক্ষম। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় প্রতিটি শেল্টার স্টেশনে এক হাজার করে ১২০টি সেন্টারে এক লাখ ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া প্রতিটি সাইক্লোন শেল্টারের নিচতলায় আশ্রয় নিতে পারবে ২০০ করে গবাদি পশু।

তিন. বাংলাদেশে যত সাইক্লোন হয়েছে তার বেশির ভাগ আঘাত হেনেছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় অঞ্চলে। এ অঞ্চলের মানুষ কি ঝড়ের ঝুঁকির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস বন্ধ করে দিয়েছে? তার মানে ভাসানচর মূল বিষয় নয়, আসল কথা হলো যেকোনো ছলছুতায় বাংলাদেশবিরোধিতা।

চার. ভাসানচরের ১২০টি গুচ্ছগ্রামে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও এ পর্যন্ত চার দফায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা স্থানান্তর করা হয়েছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো হত্যা, ধর্ষণ, মানবপাচার, অস্ত্রপাচার ও ইয়াবাপাচারের ভয়ংকর আখড়ায় পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তরা এ দেশের মানুষকেও হত্যা করছে। আনসার ক্যাম্পে আক্রমণ করে ক্যাম্পপ্রধানকে হত্যা করেছে। ১১টি অস্ত্র লুট করে নিয়েছে। পাসপোর্ট, এনআইডি জালিয়াতি করে, এমনকি বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের কারণে কর্মসংস্থান ও জীবিকা হারিয়ে ক্রমেই ফুঁসে উঠছে স্থানীয় অধিবাসীরা। এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে যেকোনো সময়। রোহিঙ্গা শিবির ঘিরে উগ্রবাদের শঙ্কার বিষয়ে এবং তাদেরকে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অপব্যবহারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হচ্ছে বারবার। এক লাখ রোহিঙ্গার নিরাপত্তার জন্য আলজাজিরার কৃত্রিম দরদ উথলে উঠলেও বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের নিরাপত্তা যে মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছে সে বিষয়ে আলজাজিরা নীরব। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আলজাজিরার শত্রুতা প্রমাণের জন্য এটিই যথেষ্ট নয়?

পাঁচ. তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ-৩ নামের যে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা রোহিঙ্গাদের স্থায়ী নিবাসের জন্য নয়। রোহিঙ্গারা যত দ্রুত মিয়ানমারে ফিরে যাবে, তারপর বাংলাদেশের ভূমিহীন দুস্থ মানুষের থাকার জন্য দ্বীপটি ব্যবহার করা হবে।

ছয়. ভাসানচরকে বাংলাদেশ সরকার থানা ঘোষণা করে এটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক ইউনিটে পরিণত করেছে। ভাসানচরে শুধু রোহিঙ্গারাই নয়, রোহিঙ্গাদের দেখভাল করার জন্য পুলিশ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, স্বাস্থ্যকর্মীসহ বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নৌবাহিনীর সদস্য ও এনজিওকর্মীরা ভাসানচরে থাকবেন। শত শত বাংলাদেশি নাগরিক ভাসানচরে থাকতে পারলে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কেন এমন কৃত্রিম দরদ? আন্তর্জাতিক আইনের একটি প্রতিষ্ঠিত রীতি হলো, কোনো দেশ তার নাগরিকদের প্রতি যে মানদণ্ডের সুরক্ষা দেবে কূটনীতিক ও বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া বিদেশি সাধারণ নাগরিকদের এর চেয়ে বেশি সুরক্ষা দিতে দায়বদ্ধ নয়। আলজাজিরা ভুলে গেছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শরণার্থী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি এবং রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ শরণার্থীর মর্যাদাও দেয়নি। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আইনগত অবস্থান বাস্তুচ্যুত, এর বেশি নয়। আলজাজিরার এ ধরনের অপপ্রচার কোনো রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের শামিল, যা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ।

লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.