মঙ্গবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৫৩ pm
এম এম মামুন :
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সংগঠনের অনেক নেতারা ভোল্ট পাল্টাতে শুরু করেছেন। অনেকেই এখন আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপির ছাতার নিচে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ বা সহযোগি সংগঠনের সাথে থাকলেও এই সকল নেতারা বিএনপিপন্থী বলে প্রচার করছেন।
তেমনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) কর্মচারি সংসদ ও শ্রমিক লীগের পদস্থ দুই নেতার ভোল্ট পাল্টানোর ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন এই দুই নেতা রাকাবে আওয়ামী লীগপন্থী সংগঠন ও রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এই দুই নেতা খোলস পাল্টিয়ে নিজেদের বিএনপিপন্থী দাবি করেছেন। নিজেদের বিএনপিপন্থী দাবি করলেও এখনো তরা আওয়ামীপন্থী সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা গেছে, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে দুটি সংগঠন রয়েছে। এরমধ্যে আওয়ামীপন্থী কর্মচারি সংসদ ও কর্মচারি পরিষদ বিএনপিপন্থী। গত ১৫ বছর বিএনপিপন্থী কর্মচারি পরিষদ ছিল নিস্ক্রিয়। আর আওয়ামীপন্থী কর্মচারি সংসদ ছিল সক্রিয়। গত ১৫ বছর বিএনপিপন্থী সংগঠনটিকে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হয়নি। বরং আওয়ামীপন্থী কর্মচারি সংসদের নেতাদের চাপের মুখে বিএনপিপন্থীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাধ্যতামূলক যোগ দিতে হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল রাকাবে আওয়ামীপন্থী কর্মচারি সংসদের ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতি নির্বাচিত হন হাসিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেন। এরপর ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের সম্মেলনের পর গত ২০২৪ সালের ১৩ এপ্রিল মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সাক্ষরিত পত্রে হাসিবুল ইসলামকে রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের শিক্ষা সাহিত্য ও গবেষনা সম্পাদক ও ফরিদ হোসেনকে সহ-সম্পাদকের পদ দেয়া হয়। শ্রমিক লীগের নেতাদের ভাষ্যমতে, এই পদ পেতে হাসিবুল ও ফরিদকে মোটা অংকের টাকা ও অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হয়েছে। মূলত কমিটি পুর্নাঙ্গ করার সময় এক একটি পদের বিপরিতে তিন থেকে চারজন পদ প্রত্যাশি ছিল। এতো নেতার ভিড়ে মহানগর শ্রমিক লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে নেন হাসিবুল ইসলাম ও ফরিদ হোসেন।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকার পতনের পর আওয়ামলীগসহ সহযোগি সংগঠনের সব নেতা পালিয়ে যান। রাকাবের এই দুই শ্রমিক লীগ নেতাও পলাতক ছিলেন। কয়েক সপ্তাহ পর তারা অফিস শুরু করেন। বিষটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলে কর্তৃপক্ষ হাসিবুল ইসলামকে মোহনপুর ও ফরিদ হোসেনকে বাঘায় বদলী করে। যদিও ফরিদ বাঘা থেকে পুনরায় বদলী হয়ে রাজশাহীর কাজিহাতা রাকাবের শাখায় আসেন।
শ্রমিক লীগ নেতা হাসিবুল ইসলাম ও ফরিদ হোসেনের ভাষ্যমতে, তারা যুবদলের রাজনীতির সাথে সংপৃক্ত। রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের নেতারা তাদের না জানিয়ে জোর করে পদ দিয়েছেন। ২০২৩ সালের ১৩ এপ্রিল তাদের শ্রমিক লীগের পদ দেয়ার পর তারা স্বেচ্ছায় ২০ এপ্রিল পদত্যাগ করেছেন। তারা পদত্যাগের কথা বললেও ৫ আগস্টের আগে শ্রমিক লীগ ছাড়াও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মহানগর শ্রমিক লীগের ব্যানারে তারা উপস্থিত হয়েছেন। এমন কি শ্রমিক লীগের ব্যানারে রাকাব ও বিকেবি একভুত করার বিপক্ষে তারা বিক্ষোভ করেছেন। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তারা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন। মজার বিষয় হলো এই দুই নেতা নিজেদের বিএনপিপন্থী দাবি করলেও এখনো তারা রাকাবের আওয়ামীপন্থী সংগঠন কর্মচারি সংসদের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, শ্রমিক লীগ নেতা হাসিবুল ইসলাম ও ফরিদ হোসেন গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর মহানগর শ্রমিক লীগের দপ্তর সম্পাদকের কাছে গিয়ে পদত্যাগ করবেন বলে বিষয়টি জানান। এসময় তাদের জানানো হয়, পদত্যাগ করলে সংগঠনের সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নানের কাছে করতে হবে। সভাপতি পলাতক রয়েছে সেটিও জানানো হয়। পরে তারা দুজনই ২০ এপ্রিল ব্যাক ডেটে মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি, সম্পাদকের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। কর্মচারি সংসদের সভাপতি সম্পাদক হলেও তারা সংগঠনের প্যাডেও পদত্যাগপত্র লেখা হয়নি, সাদা কাগজে পদত্যাগপত্র লেখা হয়েছে। আর রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের নেতারা বলছেন, তাদের পদত্যাগের বিষয়টি ভুয়া। পদত্যাগের বিষয়টি ৫ আগস্টের আগে প্রচার করা না হলেও এখন কেনো করা হচ্ছে এমন প্রশ্ন শ্রমিক লীগের নেতৃবৃন্দের।
বিষয়টি নিয়ে রাকাবের কর্মচারি সংসদের সভাপতি ও রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের শিক্ষা সাহিত্য ও গবেষনা সম্পাদক হাসিবুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাকে জোর করে শ্রমিক লীগ নেতারা পদ দিয়েছে। পদের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যার কারণে আমি পদ পাওয়ার পর পদত্যাগ করেছি।
বিষয়টি নিয়ে রাকাবের কর্মচারি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর শ্রমিক লীগের সহ-সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমাকে জোর করে মহানগর শ্রমিক লীগের পদ দেয়া হয়েছে। পরে সেখান থেকে আমি পদত্যাগ করেছি। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নাম উল্লেখ করে বলেন তারা আমার খালাতো ভাই হন। আমি যুবদল করতাম।
এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন বলেন, হাসিবুল ও ফরিদ ২০ এপ্রিল পদত্যাগপত্র জমা দেয়নি। তারা ৫ আগস্টের পর পদত্যাগ করবেন বলে অফিসে গিয়েছেন শুনেছি। তারা চাইলেই পদত্যাগ করতে পারেন না। আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের পদ দেয়া হয়েছে। তারা এখন বিএনপিপন্থী সাজার চেষ্টা করছেন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে রাকাব কর্মচারি পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদিন বলেন, গত ১৫ বছর এই পরিষদের যারা সামান্য সদস্য ছিল তাদের উপর নির্যাতনের শেষ ছিল না। এতোদিন যারা আওয়ামীপন্থী কর্মচারি সংসদের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারাই এখন বিএনপির কিছু হাইব্রিড নেতাদের সাথে মিশে কর্মচারি পরিষদ হাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন। আওয়ামীপন্থী কর্মচারি সংসদ ও মহানগর শ্রমিক লীগের পদস্থ নেতারা বিএনপি সেজে বসেছেন। তবে তাদের উদ্দেশ্য সফল হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রা/অ