শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৫৭ pm
এম এম মামুন :
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে এখন নানা সংকটে জর্জরিত। নানা উদ্যোগ নিলেও তা বাস্তবিকভাবে খুব বেশি সুফল বয়ে আনেনি। নানা সময়ে হোঁচট খেয়েছে। বন্ধ করতে হয়েছে ট্রেন এবং স্টেশন সেবাও। চালু হওয়ার পর নানা অজুহাতে এখন পর্যন্ত পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ২৩টি ট্রেন এবং ৫৪টি স্টেশন বন্ধ হয়েছে। যা নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ থাকলেও সেগুলো চালু করার বিষয়ে তেমন উদ্যোগ নেই।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিম রেলের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল আউয়াল এক প্রতিবদেন এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালকের (পরিবহন) কাছে ওই প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০০৬ সালের ১২ মে প্রথম কোচ, ইঞ্জিন ও জনবল সংকটে লালমনিরহাট-বুড়িমারি-লালমনিরহাট রুটের মিশ্র ৪৫১/৪৫২ লোকাল ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জ-ঢাকা রুটের সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যায়। সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে এই ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯ সালের ১ ডিসেম্বর পার্বতীপুর-বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রুটের একটি এবং লালমনিরহাট-পার্বতীপুর রুটের একটি লোকাল ট্রেন কোচ, ইঞ্জিন ও জনবল সংকটে বন্ধ করা হয়। একই কারণে ২০১০ সালের ১৬ মে বন্ধ হয় লালমনিরহাট-পার্বতীপুর ও লালমনিরহাট-বুড়িমারি রুটের আরও দুটি লোকাল ট্রেন। ২০১১ সালের ১৫ মার্চ পার্বতীপুর-বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রুটের একটি ও ২০১১ সালের ১ জুলাই লালমনিরহাট-পার্বতীপুর রুটের আরও দুটি লোকাল ট্রেন বন্ধ হয় একই কারণে।
ইঞ্জিন, কোচ ও জনবল সংকটে সর্বোচ্চ আটটি ট্রেন বন্ধ হয়েছে ২০১২ সালে। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটের একটি, গোয়ালন্দঘাট-রাজবাড়ী রুটের একটি, রাজবাড়ী-ঈশ্বরদী রুটের একটি, পার্বতীপুর-চিলাহাটি রুটের একটি, পার্বতীপুর-ঈশ্বরদী রুটের একটি ও ঈশ্বরদী-রাজবাড়ী রুটের একটি করে ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর ২০২০ সালের ২৪ মার্চ পার্বতীপুর-রমনাবাজার-তিস্তা-রমনাবাজার-পার্বতীপুর রুটের একটি লোকাল এবং পার্বতীপুর-বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রুটের পঞ্চগড় কমিউটার ট্রেন দুটি বন্ধ হয় মেরামতের জন্য। তারপর আর এই ট্রেন দুটি চালু হয়নি।
উত্তরবঙ্গ মেইল ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যায় ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট। সান্তাহার-বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রুটে চলাচল করত ট্রেনটি। মেরামতের জন্য ২০২৩ সালের ১৮ জুন বন্ধ হয়ে যায় লালমনিরহাট-পার্বতীপুর রুটের রংপুর কমিউটার। ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর নাশকতা এড়াতে ঈশ্বরদী-রাজশাহী-ঈশ্বরদী রুটের একটি লোকাল এবং আয় কম হওয়ার কারণে ২২ ডিসেম্বর পার্বতীপুর-রাজশাহী-পার্বতীপুর রুটের উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বন্ধ হয়। যাত্রী খাতে আয় কম হওয়ার কারণে চলতি বছরের ১৩ আগস্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাজবাড়ী-ঢাকা-রাজবাড়ী রুটের ভাঙা কমিউটার ট্রেন।
এ বিষয়ে পশ্চিম রেলওয়ের জিএম আব্দুল আওয়াল ভুঁইয়া বলেন, ‘বন্ধ স্টেশন ও ট্রেনের নির্দিষ্ট তথ্য এখন মনে নেই। তবে বন্ধ বেশ কয়েকটি স্টেশন চালু হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। আর ট্রেন কিছু বন্ধ হলেও নতুন ট্রেনও কিন্তু আমরা চালু করেছি।’
পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মামুনুল ইসলাম বলেন, যাত্রী সংকট, কোচ ও ইঞ্জিন সংকট কিংবা জনবল সংকটের কারণে ২০০৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেশকিছু লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়েছে ঠিক, তবে কিছু আন্তঃনগর বা অন্য ট্রেন চালুও হয়েছে নতুন করে। আমরা যাত্রীসেবার মান বাড়াতে আবারও সবকিছু নতুন করে শুরু করেছি। এ জন্যই নতুন ট্রেন চালু হওয়া কিংবা বন্ধ হয়ে যাওয়া ট্রেনের প্রতিবেদন করছি। রা/অ