শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:১৯ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে অবশেষে ডোবায় পড়ে থাকা ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় তরুণীর লাশ। তিনি একজন নার্স। নাম ননিকা রাণী রায় (২৩)। পুলিশ সদস্য নিমাই চন্দ্র সরকার (৪৩) তাকে হত্যা করে ড্রামে ভরে ফেলে দেন। ননিকা ও বিবাহিত নিমাইয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিমাই নিজের নাম গোপন করেন বলে জানা গেছে।
নিহত ননিকা ঠাকুরগাঁও সদরের মিলনপুর এলাকার নিপেন চন্দ্র বর্মণের মেয়ে। নিমাই পাবনার আতাইকুলা উপজেলার চরডাঙ্গা গ্রামের মৃত হেমন্ত সরকারের ছেলে। তিনি বর্তমানে রেল পুলিশের (জিআরপি) রাজশাহী থানায় কর্মরত।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নিহত নার্সের প্রেমিক কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকার (৪৩) গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। রোববার সকালে রাজশাহীর পিবিআই সদস্যরা নার্স ননিকাকে খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারকে নাটোরের লালপুর উপজেলা সদরের তার বোন জামাইয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
পরে নিমাইয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রোববার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একটানা অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাস চালকসহ তার অপর সহযোগীদের গ্রেফতার করে পিবিআই। এছাড়া এ সময় জব্দ করা হয় লাশ বহনকারী মাইক্রোবাসটিও।
গ্রেফতারকৃত নিমাইয়ের সহযোগীরা হলেন- রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ আদারিপড়ার জয়নাল আবেদিনের ছেলে কবির আহম্মেদ (৩০), শ্রীরামপুর এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে সুমন আলী (৩৪) এবং মাইক্রোবাস চালক বিলশিমলা এলাকার সতিশ চন্দ্র রায়ের ছেলে নবমুসলিম আব্দুর রহমান (২৫) ওরফে সঞ্জয়। কবির ওষুধ ব্যবসায়ী। আর সুমন মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে চটপটির ব্যবসা করেন।
সোমবার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) রাজশাহী কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকার জানান, ছয় বছর আগে ননিকা রাণী রায়ের সঙ্গে সঙ্গে তার ট্রেনে পরিচয় হয়। এরপর একে অপরকে নিজেদের মোবাইল ফোন নম্বর দেন। শুরু হয় প্রেমের সম্পর্ক। ননিকা সে সময় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নার্সিং ইন্সটিটিউটে লেখাপড়া করতেন। তিনি সম্প্রতি লেখাপড়া শেষ করে রাজশাহী মহানগরীর একটি ক্লিনিকে কর্মরত ছিলেন।
অপরদিকে তার (নিমাইয়ের) স্ত্রীও নার্স। তাদের একটি সন্তানও রয়েছে। তিনি বগুড়ায় কর্মরত। তবে স্ত্রীর নিমাইয়ের সম্পর্ক ভালো না। স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ননিকার সঙ্গে অবাধে মেলামেশা করতেন তিনি। এক পর্যায়ে ননিকার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ননিকার পরিবারের সদস্যদের কাছে নিমাই নিজের নাম গোপন করে শুভ সরকার বলে পরিচয় দেন এবং নিজেকে অবিবাহিত বলে জানান।
পিবিআই রাজশাহীর এসআই জামাল উদ্দিন জানান, গত এক বছর থেকে ননিকা বিয়ের জন্য নিমাইকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু নিমাই বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছিলেন না। বার বার বিয়ের জন্য চাপ দেবার কারণে নিমাই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ কারণে গত ৬ এপ্রিল মহানগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় নাব্বী শাহাদত নামের এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নেন নিমাই। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ এপ্রিল শুক্রবার মহানগরীর উপকণ্ঠ সিটি হাটের কাছে একটি ডোবায় ড্রামের মধ্যে এক তরুণীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে শাহমখদুম থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় শাহ মখদুম থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পরবর্তীতে পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়। আজকের তানোর