শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:২০ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, গোদাগাড়ী :
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে পলাতক আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কাড়ি কাড়ি মামলা হচ্ছে বিভিন্ন থানায়।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে ২৫ আগস্ট বাদী হয়ে থানায় ৪৫ জনের নামসহ ৫০০ থেকে ৬০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হামিদ বাবলু।
বাবলুর বাড়ি উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের ফরাদপুর গ্রামে। মামলাটির প্রধান আসামি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।
জানা যায়, কৃষকদল নেতার ওই মামলার অধিকাংশ আসামি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হলেও নামীয় ৪৫ জনের মধ্যে ৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী বলে অভিযোগ উঠেছে। মামলাটি নিয়ে বিপত্তির শুরু এখানেই। বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন এজাহার থেকে দলীয় ৫ নেতাকর্মীর নাম বাদ দিতে পুলিশের ওপর চাপ দিচ্ছেন।
কিন্তু পুলিশ বলছেন, মামলা রেকর্ড হয়ে যাওয়ার পর এজাহার সংশোধনের সুযোগ নেই। মামলাটির অধিকাংশ ধারা জামিন অযোগ্য। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে। বাদী ভুল করে থাকলে বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এজাহারে কারও নাম দিলে তার দায় পুলিশের নয়।
৩০ জুলাই এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা জানতে পারেন কৃষকদল নেতা তার মামলায় তাদের ৫ জন নেতাকর্মীকেও জড়িয়েছেন বাদী। শুরু হয় তোলপাড়। ফলে শনিবার এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলার বাদী কৃষকদল নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার ও আসামি হওয়া ৫ বিএনপি নেতাকর্মীর নাম বাদ দেওয়ার দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন।
গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সামনে শনিবার দুপুরের এই মানববন্ধনে শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগে জানা যায়, কৃষকদল নেতার মামলায় ২৪নং আসামি করা হয়েছে গোগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলামকে। ২৫নং আসামি করা হয়েছে ইউনিয়ন যুবদল নেতা বকুল হোসেনকে। ১৯নং আসামি করা হয়েছে ইউনিয়ন যুবদল নেতা আব্দুল বারীকে। ২০নং আসামি করা হয়েছে যুবদল নেতা শাহীনতে ও ৩৯নং আসামি করা হয়েছে ইউনিয়ন যুবদল নেতা সুমনকে। ঘটনাস্থল দেখানো হয়েছে গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের প্রধান গেটের সামনে।
এদিকে মামলার আসামি গোগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম অভিযোগে বলেন, ৩ আগস্ট সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে বাদী কৃষকদল নেতা আব্দুল হামিদ বাবলুর সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এ কারণে বাদী আমাদের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন মামলায়। বাদী মামলা বাণিজ্য করতেই এই কাজটি করেছেন। আমরা দল থেকে তার বহিষ্কার দাবি করছি।
নিজের দলের নেতাকর্মীদের মামলায় জড়ানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী উপজেলা কৃষকদলের যুগ্ম-আহবায়ক আব্দুল হামিদ বাবলু বলেন, যারা নিজেদের এখন বিএনপি নেতাকর্মী দাবি করছেন তারা দিনে বিএনপি করে আর রাতে আওয়ামী লীগ করে। তবে তাড়াহুড়া করে এজাহার দিতে গিয়ে হয়তো তাদের নামও মামলার আসামি হিসাবে চলে এসেছে। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে তদন্তে তাদের নাম বাদ দেওয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে গোগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক আহবায়ক আনসার আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক বজলুর রশিদ অভিযোগে বলেন, কৃষক দল নেতা আব্দুল হামিদ বাবলু মামলা বাণিজ্য শুরু করেছেন। গত ২৫ আগস্ট তিনি বাদী হয়ে যে মামলা করেছেন তাতে বিএনপিরই পাঁচজন নেতাকর্মীর নাম দিয়েছেন। এটা ব্যক্তি আক্রোশ থেকে তিনি করেছেন। এর ফলে ছাত্র জনতার ওপর হামলার এসব মামলার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
এই দুই বিএনপি নেতা আরও বলেন, আমরা বাদী আব্দুল হামিদ বাবলুকে দল থেকে বহিষ্কারসহ তার মামলার আসামি হওয়া পাঁচ বিএনপি নেতাকর্মীর নাম বাদ দেওয়ার জন্য মানববন্ধন করেছি। প্রয়োজনে আরও বড় আন্দোলন করা হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, মামলা যেহেতু রেকর্ড হয়ে গেছে সুতরাং এজাহার থেকে কারও নাম এই মুহূর্তে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। তদন্তে দোষী প্রমাণিত না হলে তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে। রা/অ