বৃহস্পতিবর, ২১ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৪৪ am
ডেস্ক রির্পোট :
বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত নাজির শাহীন ইকবালের বিরুদ্ধে যুগ্ম জজ (অর্থঋণ আদালত) মো. মনিরুজ্জামানের খাস কামরায় ঢুকে শার্টের কলার ধরে তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রোববার বেলা ১০টার দিকে এ ঘটনায় আদালতের বিক্ষুব্ধ জারিকারক ও সেরেস্তাদাররা সাবেক ছাত্র পরিচয় দানকারী ভারপ্রাপ্ত নাজির শাহীন ইকবালকে গণধোলাই দিয়েছেন। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. মনিরুজ্জামান এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ফোন বন্ধ থাকায় ভারপ্রাপ্ত নাজির শাহীন ইকবালের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সূত্র জানায়, বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ একেএম মোজাম্মেল হক চৌধুরী এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, সাবেক সরকারের অনিয়ম দুর্নীতিতে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠে। তাই তাদের অপসারণ ও পদত্যাগের দাবিতে বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ফুঁসে উঠেন। এছাড়া জেলা ও দায়রা জজ বগুড়ার প্রত্যাহার করা ‘বিতর্কিত’ জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামকে বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন।
এসবের প্রতিবাদে বিচার বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত ২২ আগস্ট সকাল থেকেই কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ মিছিল করেন। এর প্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব গোলাম রব্বানী শিগগিরই বিচার বিভাগের উচ্চ পদস্থ ওই দুই কর্মকর্তাকে বগুড়া থেকে প্রত্যাহারের আশ্বাস দেন।
এরপরও জেলা ও দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে (সিজিএম) প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করা হয়। বেলা ১০টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত নাজির শাহীন ইকবাল ৪-৫ জন সঙ্গীকে নিয়ে অনুমতি ছাড়াই যুগ্ম জজ (অর্থঋণ আদালত) মো. মনিরুজ্জামানের খাস কামরায় ঢোকেন। তিনি বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে যুগ্ম জজের শার্টের কলার ধরে টানাটানি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ সময় আদালতের জারিকারক ও সেরেস্তাদাররা ছুটে এসে যুগ্ম জজকে উদ্ধার এবং সাবেক ওই ছাত্র পরিচয়দানকারী ভারপ্রাপ্ত নাজির শাহীন ইকবালকে গণধোলাই দেন।
যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. মনিরুজ্জামান জানান, তিনি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন ও সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করে থাকেন। তার ধারণা, তাকে বিতর্কিত করতেই নানা অনিয়মে জড়িত জেলা ও দায়রা জজ এবং সিজিএমের উস্কানিতে ভারপ্রাপ্ত নাজিরকে ছাত্র নেতা শাহীন ইকবাল খাস কামরায় ঢুকে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। পরবর্তীতে সে ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করা হয়েছে। এছাড়া তিনি তাকে গণধোলাই থেকে রক্ষা করে নিরাপদে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছেন।
নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আদালতের বিচারক ও আইনজীবীরা জানান, ভারপ্রাপ্ত নাজির শাহীন ইকবাল নিজেকে ছাত্রনেতা দাবি করে আদালতপাড়ায় সবাইকে হুমকি-ধমকি দেন।
তারা আরও অভিযোগ করেন, বিভিন্ন আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণ ভালো নয়। তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। মানুষ সঠিকভাবে ও সময়ে বিচার পাচ্ছেন না। গত বৃহস্পতিবার থেকে তারা কর্মবিরতি শুরু করায় আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করে বলেন, শিগগিরই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত জেলা ও দায়রা জজ এবং সিজিএমকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তারা চলে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। তবে আদালতের জরুরি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। রা/অ