শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:২৯ am
এম এম মামুন :
রাজশাহীতে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি’র বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মোহনপুর উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোসা. শেখ হাবিবা বেগম। এছাঠাও সংবাদ সম্মেলনে মোহনপুর উপজেলা পরিষদের অপসারিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ হাবিবা বেগম এখনও আবাসন সুবিধা চান। পাশাপাশি দাবি করেছেন মাসিক সম্মানী ভাতাও।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি সরকারের কাছে এ দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ হাবিবা বেগম বলেন, গত ২৯ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে মোহনপুর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারপর থেকে তিনি মোহনপুর উপজেলা কোয়ার্টারে থাকেন। কিন্তু মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়শা সিদ্দিকা ও মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হরিদাস মন্ডলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করতে থাকেন। তার সাথে খারাপ আচারণ করতে থাকেন। এমনকি একটি মামলা সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানকে জলে-হাজতে পাঠানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসা-ওসি তাকে উপজেলা কোয়ার্টার থেকে চলে যেতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেন। তিনি কোয়ার্টার ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে নির্বাহী অফিসার আয়শা সিদ্দিকা তার অফিসে পিয়ন এবং গাড়ি চালককে দিয়ে তার সাথে খরাপ আচরণ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ হাবিবা বেগম তার সাথে এমন আচারণ ও অনিয়ম তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
নগরীর কাদিরগঞ্জে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাবিবা বেগম বলেন, তিনি উপজেলা কৃষকলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। গত ২৯ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে প্রথমবার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাবিবা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাতটি মিথ্যা মামলার আসামি হয়েছেন। সাতবার জেলে গিয়েছেন। এখনও দুটি মামলা বিচারাধীন। তাঁর স্বামী একজন চায়ের দোকানি। ৫ টাকা দামের চা বিক্রির টাকায় তিনি রাজনীতি করেন। এবার নির্বাচনে দল-মত নির্বিশেষে সবাই তাঁকে ভোট দেন। সর্বোচ্চ ৪২ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। দায়িত্ব নেওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই গত সোমবার (১৯ আগস্ট) দেশের সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে সরকার।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাঁর সমর্থন রয়েছে জানিয়ে শেখ হাবিবা বলেন, ‘মোহনপুর থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস পুড়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস, ভূমি অফিস ভাঙচুর হয়েছে। কিন্তু আমার ওপর হামলা হয়নি। আমি পালাইনি। কারণ, সবাই আমাকে ভালবাসে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি উপজেলা সদরে সরকারি কোয়ার্টারে উঠেছি। আমার ছোট্ট মেয়েটাকে মডেল স্কুলে ভর্তি করেছি। এ জন্য আমি এখনও সরকারি কোয়ার্টারে থাকতে চাই। আমাকে এই সুযোগটা দেওয়ার জন্য আমি প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি জানাই।’
পদ থেকে অপসারিত হলেও মাসিক সম্মানী ভাতা দেওয়ারও দাবি জানান শেখ হাবিবা। তিনি বলেন, ‘আমি এখনও পড়াশোনা করি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে চতুর্থ বর্ষ চলছে। আমার স্বামী মাসুদ রানা একজন চা দোকানি। চা বিক্রি করে সংসার চালান। আমি সম্মানী ভাতার টাকাটা পেলে সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকত। আমার কিছুই নেই। আমি সরকারের কাছে এটা চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাবিবার মা ঘাষিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের মহিলা ইউপি সদস্য মিনা বেগম উপস্থিত ছিলেন। দুই শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন শেখ হাবিবা।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকার সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ করা হয়েছে তার কোন সত্যতা নেই। চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ হওয়ায় তাকে কোয়ার্টারের মধ্যে বাসা ছাড়তে বলা হয়েছে।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরিদাস মন্ডল বলেন, কেউ যদি কার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন, তবে সেটা তো আর বন্ধ করা যাবেনা। সদ্য মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আমার এবং ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বনোয়াট। রা/অ