শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৩৪ am

সংবাদ শিরোনাম ::
তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ পুঠিয়ায় ভুয়া ডাক্তার ধরে প্রাননাশের হুমকির মুখে সাংবাদিকরা রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন তানোর থানায় দালালের দৌরাত্ন্য বৃদ্ধি, অসহায় মানুষ দুর্গাপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে আটক ৩ জনের কারাদণ্ড গ্রাহকের ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, বন্ধু মিতালীর চেয়ারম্যানসহ আটক ৪ রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে আ.লীগকে দূরে রাখতে ছাত্রনেতাদের চাপ অর্ন্তবর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ না হওয়ার আহ্বান বিএনপি নেতাদের তানোরে সরকারি কর্মকর্তা ও সুধীজনদের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সাম্প্রতিক সময়ে অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে সচেতন নাগরকবাসী
গোদাগাড়ীতে সংখ্যালঘুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে হালচাষ

গোদাগাড়ীতে সংখ্যালঘুর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে হালচাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোদাগাড়ী :
সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের দুটি পরিবারের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে হালচাষ করার ঘটনা ঘটেছে। এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় মাটিকাটা ইউনিয়নের হিজলগাছি গ্রামে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাত্র এক ঘণ্টা পরই বাড়ি দুটিতে হামলা করে লুটপাট চালায় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। লুট করা হয়েছে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, ঘরের টিন, ফলের গাছ এবং অর্ধশতাধিক কবুতর। পরদিন বাড়ি দুটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয় ওই দুটি পরিবারের বাড়ি। বাড়ি দুটি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে করা হয়েছে হালচাষ। এখানে যে বাড়ি ছিল সেটি এখন বোঝার উপায় নেই।

ভুক্তভোগী দুই ব্যক্তি হলেন- দুলাল ঘোষ এবং তার জামাতা কমল ঘোষ। ভিটেছাড়া হয়ে ৫ আগস্ট থেকেই কিছুটা দূরে ছেলের বাড়িতে থাকছেন বৃদ্ধ কৃষক দুলাল ঘোষ। আর স্ত্রীর বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন কমল ঘোষ। তারা এখনো চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। বাড়ি ভিটায় গেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন হামলাকারীরা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সবুজ ধানখেতের পাশে কাঠা দশেক জায়গা হালচাষ করা। জমির এক কোণে শুধু একটা আমগাছ। দেখে মনে হচ্ছে, হালচাষের পর এ জমি পতিত ফেলে রাখা হয়েছে। আট দিন আগে এখানেই ছিল দুলাল ঘোষ আর তার জামাতা কমল ঘোষের বাড়ি। এখন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের এ বাড়ি দুটির চিহ্নমাত্র নেই।

যোগাযোগ করা হলে দুলাল ঘোষ তার ভিটায় এসে বললেন, হামলাকারীরা হুমকি দিয়েছে, ভিটায় এলে লাশ ফেলে দেওয়া হবে। আমি জানের ভয়ে যায়নি। কান্নায় ভেঙে পড়ে দুলাল এ ঘটনার বিচার চান। নিজের বসতভিটা রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

দুলাল ঘোষ জানান, বাড়ির চারপাশে ছিল অন্তত ৩০টি ফলের গাছ। একটি আমগাছ ছাড়া সবই কেটে ফেলা হয়েছে। তবে জমিতে এখনো দাঁড়িয়ে আছে বিদ্যুতের একটি খুঁটি। সেই খুঁটির সঙ্গে টানানো তার দেখিয়ে দুলাল ঘোষ বললেন, কারেন্টের তারগুলা শুধু আছে। মিটারটাও খুলে নিয়ে গেছে। এছাড়া বাড়ির পাশের প্রায় দেড় বিঘা জমিতে ধান ছিল। সেগুলোও দখলে নিয়েছে হামলাকারীরা। এখন আমার থাকার জায়গা নেই। ছেলের বাড়িতে আছি। মেয়ে থাকে আরেক মেয়ের বাড়িতে।

দুলাল জানালেন, প্রায় ৩০ বছর আগে পৌনে দুই বিঘা খাসজমি তার দাদা সরকারের কাছ থেকে ১০০ বছরের জন্য পত্তন নেন। সরকার দুলালের দাদাকে জমি পত্তন দেওয়ার পর কিছু লোক ওই জমি নিজেদের বলে দাবি করেন। তখন গ্রামে সালিশ বসে। সালিশে কাগজপত্র দেখে জমি দুলালদেরই দেওয়া হয়।

প্রায় ১০ বছর আগে দুলাল জমির একটি অংশে বাড়ি করেন। বাকি অংশে ফসলের আবাদ করা হয়। কয়েক বছর আগে জামাতা কমল ঘোষকেও বাড়ি করতে দেন। এতদিন আর কখনো কোনো ঝামেলা হয়নি। হঠাৎ ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মাটিকাটা ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য জয়দুল ইসলাম ফেন্সু, তার দুই ছেলে নবাব ও জনি; ভাই শরিফুল ইসলাম ও লালমিয়া; ভগিনীপতি আসারুল ও সেলিম; বিএনপিকর্মী পলাশ, সুইট, সাল্লাম, জাকিরুল ও রিপনসহ ১৫-২০ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এরপর দুই বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, ঢেউটিন, ফ্রিজ ও টেলিভিশনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র লুট করে নেওয়া হয়।
পরদিন হামলাকারীরা তার সেমিপাকা বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়। গাছগুলো কেটে ফেলা হয়। বাড়ির ইটগুলো পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এছাড়া কমলের বাড়ির ঢেউটিনগুলো নিয়ে চলে যায় হামলাকারীরা। এমনকি বাড়িতে থাকা অর্ধশতাধিক কবুতরও হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সেগুলোও লুট করে নিয়ে যায়। প্রাণভয়ে দুলাল ও কমল তাদের বাড়ি রক্ষায় হামলাকারীদের সামনেই যেতে পারেননি। ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য ফেন্সু দীর্ঘদিন ধরেই এ জমি দখলের চেষ্টা করছিলেন বলে জানান দুলাল।

দুলালের জামাতা কমল ঘোষ গরুর দুধ সংগ্রহের কাজ করেন। বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর স্ত্রী শিবা রানীর বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে শিবা রানীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, হামলার সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ ছিল না। হামলাকারীরা আমার ১৫ বছরের মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিল। মেয়ের ইজ্জত রক্ষায় আমি তাকে নিয়ে এক কাপড়ে পালিয়ে এসেছি। বাড়ির আর কিছুই পাইনি।

হামলা, লুটপাট ও উচ্ছেদের পর শিবা রানী ও তার বাবা দুলাল ঘোষ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াতের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

দুলাল জানান, ইউএনও সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাঠিয়েছিলেন। সেনা সদস্যরা রিপন নামের এক হামলাকারীকে আটকও করেছিল। পরে একই জমিতে তাদের বাড়ি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে রিপনকে ছেড়ে দেওয়া হয়; কিন্তু পরে বাড়ি তো করে দেওয়া হয়নি, উল্টো এখন ভিটা ছেড়ে দিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন দুলাল ঘোষ।

গোদাগাড়ীর ইউএনও আবুল হায়াত বলেন, ঘটনাটি তিনি জানেন। অভিযোগ পেয়ে তিনিই সেনাবাহিনীর সদস্যদের পাঠিয়েছিলেন। এখনও সমস্যার সমাধান না হলে তিনি নিজে যাবেন। দুলাল ও কমলের বসতবাড়ি কেউ দখলে নিতে পারবে না। এ ব্যাপারে তিনি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। রা/অ

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.