শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:২১ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে নগর ভবন, পুলিশ সদর দপ্তর, মেয়রের বাড়ি, মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি, পত্রিকা অফিসসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট ও আগুন দিয়েছে জনতা। সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সব ঘটনা ঘটে।
একইভাবে ভাংচুর ও আগুন দিয়ে জ্বলিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়, দলের প্রেসিয়িাম সদস্য এইচ এম খায়রুজ্জামন লিটনের ব্যক্তিগত কার্যালয়সহ দলের নেতাদের আরও অনেক স্থাপনা।
প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজশাহী নগরের সড়কজুড়ে ছড়িয়ে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। নারী-পুরুষ, শিশু সবাইকে রাস্তায় নেমে পতাকা নিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়। রাজশাহী নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় অসংখ্য মানুষ রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছেন। সেখানে মাইকে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি নিয়ে কোনো একজনকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও বাজানো হচ্ছে বিজয়ের গান।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজশাহী নগর ভবনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। নগর ভবনের পাঁচতলা পর্যন্ত আগুনে পুড়ে যায়। এ সময় নগর ভবনে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। নগর ভবন থেকে ল্যাপটপ, চেয়ার, টেবিল, এসি, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। নগরভবনে দুইটি ব্যাংকের শাখা রয়েছে। ব্যাংকের শাখায়ও আগুন দেওয়া হয় এবং লুটপাট করা হয়েছে। নগর ভবনের পশ্চিম পাশে আরবান ক্লিনিক ভবনে এটিএম বুথে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয় সিটি করপোরেশনের ১৫টি কাউন্সিলরের কার্যালয় এবং কয়েকজন কাউন্সিলরের বাড়িতে। এ ছাড়া রাজশাহী জেলা পরিষদ ভবন ও সেখানে থাকা সোনালী ব্যাংকে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
রাজশাহী নগরের সিঅ্যান্ডবির মোড়ে অবস্থিত মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরেও আগুন লাগানো হয়। ভবনের নিচে কয়েকটি গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এর পর ভবনে ঢুকে লুটপাট চালানো হয়েছে। পুলিশের এই সদর দপ্তরের ভবনের এসি ও সিলিং ফ্যান পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়াও আগুন দেওয়া হয় মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে। সেখানে পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে লক্ষ্মীপুর পুলিশ বক্স।
রাজশাহী নগরের উপশহর এলাকায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট চালানোর পর অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাড়ির সব মালামাল লুট করে নিয়ে লোকজন। এছাড়াও রানীবাজার এলাকায় মেয়র লিটনের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। নিচে রাখা গাড়িও পুড়ে যায়। এই ভবনে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। এই প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লুটপাট করতে দেখা যায়।
আনন্দমিছিলে যাওয়ার সময় লোকজন নগরের কুমারপাড়া এলাকায় অবস্থিত রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের মালিকানাধীন সরকার টাওয়ারে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এখানে ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। একই এলাকায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেন। পরে বুলড্রেজার নিয়ে এসে ভবন ভাঙা হয়। বুলড্রেজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় রাজশাহী কলেজের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। ভাঙচুর করা হয় সাহেববাজার জিরোপেয়েন্টে ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যালয়।
এছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলাম বেন্টুর বাড়িতে হামলা ভাঙচুরসহ তার প্রতিষ্ঠান লবঙ্গ ফাস্টফুট ও চাইনিজ (সাগরপাড়া), লবঙ্গ কনভেনশন (মোল্লাপাড়া) এবং ব্যক্তিগত চেম্বারে (কোট স্টেশন মোড়ে) ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়।
রাজশাহী নগরের কুমারপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের ব্যক্তিগত কার্যালয়েও ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ভবনের সামনে কয়েকটা মোটরসাইকেল রাখা ছিল, তা-ও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
নগরের সাগরপাড়া ও গোরহাঙ্গা রেলগেট এলাকায় অবস্থিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দুইটি কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। একজন লোককে একটি জেনারেটর টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এছাড়াও সরকারি নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা পদ্মাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম ও বাংলার জনপদ, সিল্কসিটি নিউজ, দৈনিক সানশাইন, দৈনিক সোনার দেশ ও রাজশাহী প্রেসক্লাবে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। পদ্মাটাইমস অফিসের জানালার গ্রিল পর্যন্ত খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে, সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বাদশা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এ ছাড়া জেলা পুঠিয়া উপজেলার বিড়ালদহে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আবদুল ওয়াদুদের বাসায় আগুন দেওয়া হয়। এছাড়াও আগুন দেওয়া হয় রাজশাহী-৪ আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদের বাড়ি, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান আসাদের রাজনৈতিক
এ সব বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র জামিরুল ইসলামসহ কর্মকর্তাদের একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমি এই রাজনীতি পছন্দ করি না। সবাইকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। রা/অ