বৃহস্পতিবর, ২১ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:২৪ pm
এম এম মামুন :
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে। স্থানীয় আবুল কালাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকেলে রাজশাহীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ ও দ্রুত বিচার আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন।
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, গত ২২ জুন ঘটনার দিনই তাদের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করতে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাদের মামলা গ্রহণ করেনি। তিনি আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বাধ্য হয়ে ঘটনার পাঁচদিন পর আদালতে মামলা দায়ের করা হলো।
জানতে চাইলে রাজশাহীর বাঘা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম মামলা না নেওয়ার এমন অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী জিয়াউর রহমান বলেন, আদালতের বিচারক মো. হাদিউজ্জামান তাদের মামলার আবেদনটি গ্রহণ করে তা এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার জন্য বাঘা থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় আসামি হিসেবে বাঘা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি শাহিনুর রহমানসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
এর আগে গত ২২ জুন রাজশাহীর বাঘা উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। এর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল গুরুতর আহত হন। তাকে ওইদিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। এরপর ২৬ জুন বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির বাড়তি টাকা আদায়কে সমর্থন দেওয়া বা না দেওয়া এবং আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২০১৯ সাল থেকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহরিয়ার আলমের পছন্দ মাফিক স্থানীয় দলিল লেখক সমিতির এ কমিটি গঠিত হয়। অভিযোগ রয়েছে এ সংগঠনের নেতারা জমি কেনাবেচার সময় ক্রেতার কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতেন। এর প্রতিবাদে গত ২০ জুন দলিল লেখকদেরই একাংশ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। ওই কর্মসূচিতে একাত্মতা জানিয়ে বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু, পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাস আলী এবং পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম।
এরপর ২২ জুন দলিল লেখক সমিতির দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবিতে উপজেলার সচেতন নাগরিকের ব্যানারে লাভলু, আক্কাস ও মেরাজুলের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে একইদিন বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধনের ডাক দেয় বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ। পাল্টাপাল্টি এ কর্মসূচির জন্য দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকরা উপজেলা চত্বরে জড়ো হলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে দুপক্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। গুরুতর আহত বাবুল মারা যান। তিনি আক্কাসের বিরুদ্ধে আয়োজন করা মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।
এদিকে রাজশাহী বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের পর সেদিনই দলিল লেখক সমিতির পক্ষ থেকে থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর পাল্টা মামলা হিসেবে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। রা/অ