শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:০২ pm
মাহমুদ আহমদ, ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট :
দেশের আকাশে আজ (১৩ এপ্রিল) পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান শুরু হচ্ছে আগামীকাল বুধবার ১৪ এপ্রিল থেকে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে আমরা আরেকটি রমজান মাসে প্রবেশ করার সৌভাগ্য লাভ করছি, আলহামদুলিল্লাহ।
রহমত, মাগফেরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে শুরু হয় রমজান। নিজেকে পরিশুদ্ধি করে পবিত্র করার বিশেষ এক মাস রমজান। সিয়াম সাধনার এক কঠিন অনুশীলনের মধ্য দিয়ে নিজেকে আবারও প্রস্তুত করার এ শুভ যাত্রায় বিশ্ব মুসিলম উম্মাহকে জানাই মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।
বিশ্বময় মহামারি করোনায় প্রতিনিয়ত মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহামারির এ সময়ে যাদেরকে আল্লাহতায়ালা এখনও সুস্থ রেখেছেন তাদের উচিত হবে আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা। মাহে রমজানের কোন অজুহাত না দেখিয়ে রোজা রাখা এবং রাতগুলোকে বিশেষ ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করা।
মুমিন বান্দারা পবিত্র এই মাসটির অপেক্ষায় দিন গুণতে থাকে। তারা শুধু ভাবে কবে থেকে শুরু হচ্ছে রমজান মাস। রমজান মাসের জন্য শাবান মাস থেকেই তারা নিজেকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করে তোলে। এছাড়া আল্লাহপাকের পবিত্র বান্দারা মাহে রমজান উপলক্ষ্যে একটি রুটিন তৈরি করে, যাতে পূর্বের রমজান থেকে এবারের রমজানে কি কি নেক আমল বেশি করবে তার ছক আঁকা থাকে।
যদিও এবার রমজান শুরু হচ্ছে প্রচণ্ড গরমে। এক তো প্রচণ্ড রোদ, নেই বৃষ্টি অপরদিকে মহামারি করোনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলে যেন এক বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। তাই অনেকে হয়তো ভাবছেন, এই অসনীয় গরমে আর এতো বড় দিনে কিভাবে রোজা রাখবো, রোজা রাখতে মনে হয় এবার অনেক কষ্ট হবে। এমনটি ভাবা মোটেও ঠিক হবে না। কেননা আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যেই যেহেতু এ রোজা, আর হৃদয় পবিত্র করে যদি রোজা রাখা শুরু করি তাহলে বান্দার আরামের জন্য তিনিই তার রহমতের বাতাস প্রবাহিত করবেন। দেখবেন রোজা রেখে অনেক প্রশান্তি পাচ্ছেন।
আসলে কষ্ট তাদের জন্যই যারা বাহ্যিক চাকচিক্যের মোহে আসক্ত। কিন্তু মুমিন মুত্তাকিদের জন্য এটা কোন কষ্টই না বরং রমজান এসেছে বলে তাদের হৃদয় আনন্দে উদ্বেলিত। এছাড়া আল্লাহপাক তার বান্দার জন্য এমন কোন নির্দেশ দেননি যা পালনে সাধ্যাতীত।
রমজানের রোজা রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন- ‘হে যারা ঈমান এনেছ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হলো, যেভাবে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের জন্য, যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পার।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।
তাই মন থেকে সব ধরনের দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে আল্লাহপাকের নির্দেশের ওপর আমল করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এই নিয়ত করতে হবে যে, গত রমজানে যদি একবার পবিত্র কুরআন খতম দিয়ে থাকি তাহলে এবার ইচ্ছা রাখব দুইবার খতম দেয়ার। গত রমজানের যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বাজামাত না পড়তে পারি এবার ইচ্ছা থাকবে নামাজগুলো বাজামাত আদায় করার। করোনা পরিস্থিতির কারণে আমরা এবারও নিজেদের ঘরের সবাইকে সাথে নিয়ে বাজামাত নামাজ আদায়ের চেষ্টা করব।
হাদিসে পবিত্র মাহে রমজানের রোজা রাখার গুরুত্বের ওপর বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত হয়েছে। যেমন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিশ্বাস এবং আন্তরিকতা আর উত্তম ফল লাভের বাসনায় রমজান মাসে রোজা রাখে, তার পূর্বের সর্বপ্রকার পাপ ক্ষমা করা হবে’ (বুখারি, মুসলিম)।
শুধু রোজা রাখলেই কি রমজান মাসের সার্থকতা? না, এটি মোটেও ঠিক না। রোজাও রাখতে হবে এবং বেশি বেশি নফল ইবাদতও করতে হবে। যেহেতু মহামারি করোনার প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে তাই ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় শাখা একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তিও জারি করে। যাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মসজিদগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারাবিসহ প্রতি ওয়াক্ত নামাজ সর্বোচ্চ ২০ জন অংশ নেয়ার জন্য। আমরা অবশ্যই সরকারি নির্দেশনার ওপর আমল করব। আমরা আমাদের পরিবারকে সাথে নিয়ে বাজামাত তারাবিসহ অন্যান্য নামাজ আদায় করব, ইনশাল্লাহ।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে সুস্থতার সাথে এবং তার ইবাদতে রত থেকে পবিত্র মাহে রমজানের দিনগুলো কাটানোর তৌফিক দান করুন।