রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৪২ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে গত বছরের মতো এবারও কুরবানির পশুর চামড়ার দামে খুব বেশি হেরফের হয়নি। তবে গত কয়েক বছর ধরে যেভাবে কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে খাল নর্দমায় ফেলে দিতে হয়েছিল এবার পরিস্থিতি ততটা খারাপ হয়নি। তবুও দামে খুশি নন বিক্রেতারা। যদিও ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে পানির দামে।
এক বা দুই লাখ টাকার একটি বড় গরুর চামড়া এবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে একেকটি ছাগলের চামড়ার বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত দামে।
এদিকে দেশের মূল্যবান সম্পদ পশুর চামড়ার কেনা-বেচায় এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলছে গত কয়েক বছর ধরেই। পাঁচ বছর আগেও যেখানে একটি গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। এখন সেখানে এবার বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়। আগে একটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত। এবার সেই চামড়া ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কোথাও কোথাও বিনা টাকাতেই চামড়া গছিয়ে দিয়েছেন মালিকরা। কারণ চামড়া বাড়িতে রাখার জিনিসও নয়।
রাজশাহী নগরীর কাজলা মহল্লার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, তারা এসব চামড়া কিনে আড়তে দেন। গত কয়েক বছর ধরে ছাগলের চামড়া নেয় না গুদামের ব্যাপারীরা। ফলে এবার তারা ছাগলের একটা চামড়াও কেনেননি।
তিনি আরও জানান এবার গরুর চামড়ার দামটা গতবারের তুলনায় প্রতিটিতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি হয়েছে। এবার তারা বড় গরুর চামড়া ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন। গতবার বড় গরুর প্রতিটি চামড়ার দাম ছিল ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।
অন্যদিকে ঈদের দিনই রাজশাহীর বিভিন্ন মহল্লা ও এলাকায় চামড়া বেচাকেনা হয়। পাড়া মহল্লা থেকে যারা চামড়া সংগ্রহ করেন তারা মৌসুমি ব্যবসায়ী। নগরীর রেলগেট এলাকায় রয়েছে চামড়ার মজুদের অনেকগুলি গুদাম। গুদামের ব্যাপারীরা খুচরা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন। ব্যাপারীরা কাঁচা চামড়া কিনে লবণ লাগিয়ে কয়েকদিন রাখেন নিজেদের গুদামে। পরে সেগুলি বোঝা আকারে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। এবারও রাজশাহীর গুদামে চামড়া বিক্রি করতে এসে বিপাকে পড়েন কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী।
রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী শওকত মোল্লা বললেন, আমরা আশেপাশের মহল্লায় ঘুরে ঘুরে ৩শ গরুর চামড়া কিনেছি। এগুলি আড়তে দিয়েছি। এখনো টাকা পায়নি। আড়তে ছাগলের চামড়ার চাহিদা না থাকায় সেগুলি কিনি নাই। শওকত মোল্লাহ বলেন, গ্রাম মহল্লায় অনেকেই টাকা ছাড়াই ছাগলের চামড়া দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমরা নিই নি। কারণ এগুলি আড়তে বিক্রি করা যায় না। অকারণে বোঝা বয়ে লাভ নেই। আড়তে চাহিদা না থাকায় গ্রাম মহল্লায় ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ঈদের পরের দিন সকালে ৫০ টা গরুর চামড়া নিয়ে রেলগেট আড়তে বিক্রির জন্য আসেন পবার হড়গ্রাম এলাকার সাহেব আলী। তিনি মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী। প্রতিটি চামড়ার দাম হাঁকেন ১ হাজার টাকা করে। কিন্তু আড়তে দাম বলেন ৪৫০ টাকা করে। তবে সাহেব আলী চামড়া বিক্রি না করে ফেরত নিয়ে চলে যান।
রেলগেট আড়তের ব্যবসায়ী নুর হোসেন বলেন, এবার গত কয়েক বছরের তুলনায় গরুর চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। তিনি বড় গরুর চামড়া ৮০০ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন এবার। তবে ছাগলের চামড়া কেনেননি।
এদিকে চামড়া গরুর চামড়া কেনা-বেচা হলেও বিক্রেতারা পুরোটাই দিয়েছেন বাকিতে।
রাজশাহীর মোহনপুরের আলাই বিদিরপুর গ্রামের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মঈন আলী বলেন, আমরা কিছু চামড়া কিনেছি তবে এখনো দাম পরিশোধ করিনি। আমরাও আড়তে চামড়া দিয়েছি তবে টাকা পাইনি। আড়ৎদাররা এসব চামড়া ট্যানারিতে বিক্রি করে টাকা পেলে আমরাও পাব। তখন আমরা চামড়া মালিকদেরকে দাম পরিশোধ করব। চামড়া এভাবেই বাকিতে বিক্রি হয়।
রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এবার এক হাজার টাকাতেও গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে এবার যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর আমরা ৩০০ টাকাতেও গরুর চামড়া কিনেছি। সে তুলনায় এবার দাম ভালই বলতে হবে। রা/অ