মঙ্গবার, ০৩ িসেম্র ২০২৪, সময় : ১১:৪০ pm
ওবাইদুর রহমান সুজন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর তানোরে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাতার টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রতারক চক্র। গত কয়েক দিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কয়েক’শ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। বিষয়টি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই ভুক্তভোগীরা ভিড় করছেন তানোর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, এ ধরণের প্রতারণা রোধে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ‘নগদ’ মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ভাতার টাকা দিচ্ছে সরকার। সেই টাকা বাড়িতে বসে মোবাইলে পাচ্ছে তানোর উপজেলার উপকারভোগীরা।
এরআগে ভাতার টাকা তুলতে উপকারভোগীদের ব্যাংকে যেতে হতো। তবে ডিজিটালাইজেশন হওয়ার পরে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় একটি চক্র উপকারভোগীদের কাছ থেকে ভাতার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রথমে ফোন করে অ্যাকাউন্টের পিন নাম্বার চাইলেও এখন ওটিপির মাধ্যমে নিমেষে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে প্রতারক চক্রটি। গত কয়েকদিনে তানোর উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষ এই প্রতারণার শিকার হয়েছে।
ভুক্তভোগী উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী বকুল বলেন, প্রতিবন্ধী হিসেবে প্রতিমাসে ৮৫০ টাকা করে ৩ মাস পরপর ২৫৫০ টাকা ভাতা পেতেন তিনি। এবার টাকা তুলতে গিয়ে শুনেন তার মোবাইল ব্যাংকিং এর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। একথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। অভাবের সংসারে ভাতার টাকায় দিয়ে তিনি ঔষুধপত্র কিনতেন। এখন কিভাবে তিনি ওষুধ কিনবেন এ নিয়ে চিন্তার ভাজ তার কপালে। তিনি মোবাইল ব্যবহার করতে পারেন না আর তার পরিবারের কেউ প্রতারক চক্রকে ওটিপি দিয়েছেন কিনা তিনি তাও জানেন না।
উপজেলার বাতাসপুর গ্রামের আরেক ভুক্তভোগী মুনছুর আলী বলেন, কয়েকদিন আগে কেউ একজন ফোন দিয়ে নিজেকে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তার ভাতার টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হবে এ কথা জানান। এজন্য তার মোবাইলে একটি কোড যাবে যা তাকে দেওয়ার জন্য বলে। তিনি সরল মনে বিশ্বাস করে ওটিপি দেওয়ার পর তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চলে যায়। তিনি শুধু নন তার গ্রামের অন্তত ৭ জন এরকম প্রতারণার শিকার হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার গ্রামের বাসিন্দা রুবিনা বেগম বলেন, আমি মোবাইলের কিছুই বুঝিনা। কিছুদিন আগে ভাতার টাকা বাড়িয়ে দেবে বলে একটা ফোন আসে যা আমার মেয়ে রিসিভ করে। পরবর্তীতে ফোনে একটি কোড আসে যা ওদেরকে দেওয়ার পরে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা হয়ে যায়। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে তিনি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জানাবেন বলে জানান।
তানোর উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, গত কয়েকদিনে প্রতারকচক্র কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন এ রকম বেশ কয়েকজন মানুষ আমাদের অফিসে এসেছেন। আমরা তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে কেউ ভাতা ভোগীদের ফোন করে কখনো পিন কোড অথবা ওটিপি চাইবে না। প্রতারণার রোধে এ বিষয়ে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।
বেশ কয়েকজন ভাতাভোগী বলেন, এমন ঘটনা বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোন প্রতিকার মিলছে না।
এব্যাপারে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, তানোর উপজেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৭৮৯২ জন ভাতা পাচ্ছেন। তার মধ্যে বয়স্ক ৩৮০৫ জন, বিধবা ১৯০৫ জন, প্রতিবন্ধী ৪৬৫৪ জন এবং অনগ্রসর হিসেবে ৩১ জন ভাতা পাচ্ছেন। বয়স্করা প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ১৮০০ টাকা, বিধবারা ১৬৫০ টাকা, প্রতিবন্ধীরা ২৫৫০ টাকা এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ১৬৫০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। রা/অ