শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৫৭ pm
কারো আড়ালে তার নামে নিন্দা করছেন কিংবা কারো দোষ খুঁজছেন? কেউ যখন কারো দোষ খোঁজে তখন আরেকজন তারও দোষ খোঁজে! কে সে? আল্লাহ! আপনি যার দোষ খুঁজছেন তার দোষ পেতেও পারেন আবার নাও পেতে পারেন! আপনার দোষ আল্লাহ খুঁজছে তার মানে তিনি ব্যর্থ হবেন? নিঃসন্দেহে তিনি আপনার দোষ পাবেনই! কারো পেছনে তার নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, কটু কথা রটানো- এসব গিবত। জানেন, গিবতের শাস্তি কী? দুনিয়াতেই গিবতকারীকে অপমানিত হতে হবে! বাইরের লোকের কাছে অপমানিত হওয়ার ভয়ে যে লোক ঘরে থাকে সে ঘরের লোকের দ্বারাই অপমানিত হবে! গিবতের শাস্তি সাংঘাতিক! আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া নিশ্চয়ই রুচিকর ব্যাপার নয়! ভাবতেই তো সাংঘাতিক রকমের জঘন্য লাগছে!
কী সুন্দর সিস্টেম! আপনি যদি কারো ভুল গোপন রাখেন, দোষ প্রকাশ না করে তাকে একাকী নিয়ে গোপনে শোধরাতে সহায়তা করেন তবে আল্লাহও আপনার দোষ ত্রুটি গোপন রাখেন। কারো দোষ প্রকাশ হয়ে যাওয়া কত ভয়ানক লজ্জার তা যারা ভুক্তভোগী হয়েছে তারাই কেবল জানে। আপনি যার দোষ খোঁজেন সে যদি আপনার স্বামী/স্ত্রী হয়, ২৪ ঘন্টার সঙ্গী হয় কিংবা পরম বন্ধুও হয় তবুও আপনি তার সবকিছু জানবেন না! তার মনে কী চলছো তা বোঝার সাধ্য বাইরের কারোরই নাই! সে যদি বলে তবুও তা সঠিক বলছে কিনা তা যাচাইয়ের কোন মানদন্ড আপনার কাছে নাই! অথচ যিনি সর্বদর্শী তিনি যদি কারো দোষ খোঁজেন তবে আঁধারে কিংবা আলোতে, গোপনে কিংবা সম্মুখে যা যা করছে শুধু তাই নয় বরং যা যা ভাবছে তাও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
কারো অনুপস্থিতিতে তার নামে বাজার বসানো, কুৎসা রটনা করা কিংবা দোষের তালাশ দেওয়া এসব মানব চরিত্রের অন্ধকার দিককে নির্দেশ করে। কারো নামে তাঁর আড়ালে বলতে হলে সত্য প্রশংসা করা উচিত। কারো আড়ালে তার বাস্তব দোষের চর্চাও গিবত। কারো দোষ প্রকাশ করে তাকে লোকের সামনে ছোট করা- এসব প্রকাশকের হীনমন্যতার নির্দেশক। যিনি কারো দোষ খুঁজে বেড়ান, আল্লাহ তার প্রতিপক্ষ হয়ে যান। স্রষ্টাই নিজেই যে সৃষ্টির সাথে শত্রুতা ঘোষণা দিয়েছেন তারা সম্মানিত হবে কিংবা উন্নতি করবে-এমন আশায় নিরাশার দ্বন্দ্ব! যারা লোকের পেছনে তার নামে মজমা বসায়, অহেতুক বিষয় নিয়ে বচসা করে কিংবা পায়ে পায়ে দোষ ধরে তারা মানুষ হিসেবে ভালোমানুষ কিংবা কাছের মানুষ- সেটা শয়তানের বিশ্বাসেও থাকা ঠিক নয়; মানুষের বিশ্বাসে তো বাদ কি বাত!
অকর্মারাই পরচর্চা আর পরনিন্দার আসর বসাতে পারে। তাদের হাশর যে কত ভয়াবহ হবে তা আন্দাজ করতে পারলে তারা দুনিয়াতে বসে জিহ্বাকে নিজের হাত দিয়ে টেনে ছিঁড়ে রাখতো। যার কাজ আছে, যার বিবেক এখনো ক্রিয়াশীল সে পরের নামে গীত গাওয়ার সময় পাবে কখন? ভীরু-কাপুরুষ এবং অক্ষমদের অস্ত্রই হচ্ছে কারো পাছে কথা বলা! অযোগ্যদের ধর্মই হচ্ছে কারো দোষ প্রকাশ্যে এনে তাকে হেয় করা! অথচ এহেন হীন কাজ সংঘটনের সাথে সাথেই রাজাধিরাজ কুকর্মের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন! যে অন্যকে অপমানিত করেছে, সবার সামনে পর্যুদস্ত করেছে কিংবা অহেতুক সম্মানহানি ঘটিয়েছে তাকে পথেঘাটে নানাভাবে বিপর্যস্ত-বিধ্বস্ত করতে শুরু করেন। যিনি বেহিসাব ভালোবাসতে পারেন তিনি অকৃতজ্ঞকে, দাম্ভিক-অহংকারীকে দুনিয়ার সব লাঞ্ছনা-গঞ্জনার মধে নিক্ষেপ করতে পারেন এবং করেন। যারা পরের নামে কুৎসা রটায়, যারা ব্যথা দেওয়ার উদ্দেশ্যে খোঁটায় কিংবা যারা কারো দোষ ছড়িয়ে অন্যের কাছে ভালো সাজে তাদের কেউ ব্যক্তিজীবনে সুখে আছে, সামাজিকভাবে সম্মানিত হয়েছে এবং জীবনের দৌড়ে সাফল্য পেয়েছে এমন দৃষ্টান্ত অন্তত আমার সামনে নাই; আপনার আশেপাশেও থাকার কথা নয়।
কারো সাথে দেখা হলে, কারো সাথে কথা হলে কিংবা কারো নামে শুনতে গেলে তার পজিটিভ বিষয়গুলোই খোঁজা, জানা এবং শোনা দরকার। কারো খারাপ দিকের কথা শুনে কারো যদি মানসিক শান্তি মেলে তবে সে মনে অসুখ বাসা বেঁধেছে। কারো দোষ খোঁজার জন্য কেউ যদি কয়েক মুহুর্তও ব্যয় করে তবে সেই সময়টুকু এই জীবন থেকে অপচয়ের অপবাদেই গেলো। নিশ্চয়ই জীবনের কাছে এর জন্য কৈফিয়ত দিতে হবে। যারা অপরের ত্রুটি পেয়ে সুখ পায়, অন্যের নামে আড়ালে সমালোচনা করে তৃপ্তি পায় তারা কি কোথাও ভালো আছে? থাকার কথা নয়। যাদের মন ও মগজে পচন ধরেছে তারা অনৈতিক জীবনযাপনে প্রশান্তি খোঁজে। যাদের চিন্তা সংক্রমিত হয়ে়ছে মনোবৈকল্য দ্বারা তারাই ধীরে ধীরে জীবনের কানাগলিতে হারিয়ে যায়। প্রকৃত সুখ তো নিজেকে জানার মাঝে।
সমালোচনা যদি করতেই হয় তবে সেটা আত্মসমালোচনা হওয়া উচিত। নিজের দোষগুলো আবিস্কার করে তা শুধরে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু আমাদের থাকা উচিত। পরের কুৎসায় সময় অপচয় করলে একসময় নিজেই নিজেকে ভৎসনা দিতে হবে। অপরের দোষ খুঁজতে খুঁজতে জীবনের আলপথে সন্ধ্যা নামালে বাকিপথ দিক-দিশাহীন অন্ধকারেই বেদিশা পাড়ি দিতে হবে। কারো নামে তার অজ্ঞাতে কথা বলে তো কোনোই ফায়দা নাই বরং এতে ঘৃণা ঘনীভূত হয়ে ছড়ায়। শোধরানোর উদ্দেশ্য থাকলে বরং তাকে নিভৃতে ডেকে ভুল ধরিয়ে দেওয়া উচিত। এই একজীবনে একবার মানুষ হওয়া যায় কিন্তু অমানুষ হওয়া যায় বারবার! কারো পশ্চাতে নিন্দা ছড়ালে নিন্দুকের জীবন এবং গোটা ভবিষ্যত আলোর পশ্চাতেই যায়।
এই অবক্ষয়ের কালেও যারা ভালো তারা আত্মসমালোচনায় নিজেকে নিজেই গড়ে। মানুষের মত মানুষ হতে নিজেকে যোগ্য করে গড়তে হয়। এই অল্পদিনের জীবন- সেখানে অপরের অন্ধকার নিয়ে গবেষণার সময় কোথায়? চিন্তায় মানুষ হয়ে উঠতে পারলেই সে বড় মানুষ হয়। সমাজে আলোর ছাপ ফেলে, দূর থেকে লোকে তাকে ভালো মানুষ কয়। লেখক : রাজু আহমেদ, প্রাবন্ধিক।