রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:২৭ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী নগরের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সিটি করপোরেশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এসে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েছেন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. জিয়াউল হক। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে অতিথি হিসেবে তিনি সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন। এতে রাজশাহীর গণমাধ্যমকর্মীরা ছাড়াও সুধীজন ও কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান (লিটন) লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। এ সময় মেয়রের পাশে বসা ছিলেন আরডিএ চেয়ারম্যান। নগরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিপণিবিতান আরডিএ মার্কেট নিয়ে প্রথমেই সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে জানতে চান।
আরডিএ চেয়ারম্যানকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘অনেক সময় প্রতিবেদনের প্রয়োজনে আরডিএ কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আরডিএ কার্যালয়ে গেলে বা ফোন করলে জবাব আসে, ওপরের দপ্তরের নিষেধ আছে। কেন সবাই বলেন, চেয়ারম্যান সাহেবের নিষেধ আছে? আপনিও কেন দেখা করেন না? জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা আমার কাছে মনে হয় ব্যক্তিগত প্রশ্ন।’ তখন অন্য সাংবাদিকে একসঙ্গে বলতে থাকেন, এটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন নয়। ব্যক্তিগত বিষয় আপনাদের থাকতে পারে, সাংবাদিকদের নয়।
এ সময় আরডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাংবাদিকেরা দেখা পান না, এ কথা বোধ হয় সঠিক নয়। প্রতিদিনই চার-পাঁচজন সাংবাদিক আমার কাছে আসেন।’ তখন সাংবাদিকেরা জানতে চান, তাঁরা আসলে কারা, তাঁদের পরিচয় জানতে চাই।… এ সময় মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলতে থাকেন, ‘এটা সিটি করপোরেশনের প্রেস কনফারেন্স। আপনারা এ বিষয়ে কথা বলেন। আপনারা প্রশ্ন করেন। প্রেস কনফারেন্স শেষ করেন।’ এরপরও সাংবাদিকেরা কথা বলতে থাকেন।
পরে আরডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আপনি বা অন্যরা যাননি। কিন্তু আমি বলেছি, প্রতিদিনই আমার কাছে পাঁচ বা ছয়জন সাংবাদিক ভাই আসেন। আপনারা এলে এটা দেখাতে পারব। আমি একজন সিভিল সার্ভেন্ট। আমি কিন্তু জনপ্রতিনিধি নই। জনপ্রতিনিধিরা আপনার সঙ্গে যেভাবে কথা বলতে পারেন, আমি কিন্তু সরকারি কর্মচারী হিসেবে সেভাবে কথার বলার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত নই।’
তখন একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘আপনি আরডিএর চেয়ারম্যান। সেখানকার প্রশ্নের উত্তর আপনাকেই দিতে হবে।… আপনি দুর্নীতি না করলেও আপনার অধস্তন একেবারে পিয়ন, দারোয়ান পর্যন্ত যাঁরা দুর্নীতি করছেন, তাঁদের ব্যাপারে কে কথা বলবে?’ জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি কিন্তু বলিনি, আমি জবাব দেব না।
আপনাদের যেকোনো তথ্যের জন্য ওয়েলকাম। আমি টিভি ক্যামেরার সামনে কথা বলার রেসট্রিকশন দিচ্ছি। একজন সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে আমি কথা বলতে পারি না। আজকে বলছি, কারণ এখানে মেয়র মহোদয় আছেন। ক্যামেরার সামনে কথা বলা ছাড়া আপনারা যেকোনো তথ্যের জন্য আসতে পারেন। আমি আপনাকে তথ্য দেব।’
তখন সাংবাদিকেরা সমস্বরে কথা বলতে থাকলে জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইক্রোফোন চালু করে বলতে থাকেন, ‘এ বিষয়ে আপনারা পরে আলোচনা করে নিয়েন। আমরা একেবারে শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি।’ তখন তথ্য অধিকার নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন মেয়র। হট্টগোলে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল না। এভাবেই সংবাদ সম্মেলনটি শেষ করেন মেয়র।
হট্টগোলের আগে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র জানান, ২ হাজার ৯৩১ কোটির টাকা ব্যয়ে ‘রাজশাহী মহানগরের সমন্বিত নগর অবকাঠামোর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রগতি ৬০ শতাংশের বেশি। নাগরিকদের চলাচল ও দুর্ঘটনা রোধে ১০টি পদচারী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২৩৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং, ২৬০ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সিমেন্ট-কংক্রিট সড়ক, ৩৫০ দশমিক ৫ কিলোমিটার নর্দমা, ৪০ দশমিক ২২ কিলোমিটার ফুটপাত ও ২৪ হাজার ৯৯ দশমিক ৫০ মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬টি জলাশয়ের উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ হয়েছে। ২৯টি ঈদগাহ, ৫২টি গোরস্থান ও একটি শ্মশান ঘাটের উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এ সময় অপতথ্যে বিভ্রান্ত না হয়ে চলমান উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নে নগরবাসীসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন মেয়র। এ ছাড়া পুকুর ভরাট বন্ধে প্রশাসনসহ সবার তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান। এ বিষয়ে জনমত গঠনেরও তাগিদ দেন তিনি। রা/অ