বুধবা, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৫৯ am
ডেস্ক রির্পোট :
কুরবানির ঈদ আরও দেড় মাস পর। কিন্তু এখনই অসাধু সিন্ডিকেট মসলাপণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেছে। এক মাস আগে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি রসুন ১৩০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ৩০০ টাকা কেজি দেশি আদার দাম ৪৫০ টাকা হয়েছে।
এলাচের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩০০ টাকা। আর বাজারে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টিতে দেশের শতাধিক ব্যবসায়ীর হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ‘মার্কেট প্রাইস’ বিক্রি উৎসবে ঈদের আড়াই মাস আগেই মসলা পণ্য কিনতে ঠকছেন প্রায় ১৭ কোটি ভোক্তা। মসলা পণ্যের বাজারে কারা অস্থিরতা সৃষ্টি করে তার একটি প্রতিবেদন গত বছর মন্ত্রণালয়ে যায়।
সেখানে ঢাকা, চট্টগ্রামের ও দু-একটি অঞ্চলের শতাধিক ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কারণে তারা যা খুশি তাই করছে।
সূত্র জানায়, রসুনের শীর্ষ আমদানিকারক ২০টি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের শীর্ষ আমদানিকারক একে ট্রেডিং, সুরমা টেপ, মক্কা এন্টারপ্রাইজ, জেনি এন্টারপ্রাইজ ও এনএন এন্টারপ্রাইজ। সবচেয়ে বেশি আদা আমদানি করা চার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে-বগুড়ার মিশু ট্রেডিং, ঢাকার ট্রেইটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং, বগুড়ার বিকে ট্রেডার্স ও ঢাকার ভাই ভাই বাণিজ্যালয়।
সবচেয়ে বেশি এলাচ আমদানি করে চট্টগ্রামের তিনটি প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি জিরা, দারচিনি, হলুদ, মরিচ ও জয়ত্রী আমদানি করা হয়। এসব পণ্যেরও নিয়ন্ত্রক ঘুরেফিরে ৩০ থেকে ৪০ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের মার্কেট প্রাইস বিক্রি উৎসবে মসলা পণ্যের দাম আরেক ধাপ বেড়ে যাচ্ছে। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি পণ্যের যৌক্তিক দাম যা হওয়ার কথা, বাজার নিয়ন্ত্রকরা দুই থেকে তিনগুণ এমনকি চারগুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন। ফলে বাজারে অন্য বিক্রেতারাও সেই দাম অনুসরণ করে পণ্য মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
চট্টগ্রামের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের বারবার বলার পরও তারা অভিযানকালে রসিদ দেখান না। অভিযানকালে এমনও বিষয় দেখা গেছে, এলাচ আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করলে প্রতি কেজি এলাচ ১৫ শতাংশ মুনাফাসহ বিক্রয়মূল্য হওয়ার কথা ১৬০০-১৭০০ টাকা। কিন্তু বাজারে ২২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।
এতে স্বাভাবিকভাবেই বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। বেশি দামে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা অজুহাত দেন, পণ্যটি এক বছর আগে আনা হয়েছে; গোডাউনে ছিল। এক বছর বিক্রি হয়নি। সেই হিসাব ধরে লাভ করতে দাম বাড়ানো হয়। এছাড়া ‘মার্কেট প্রাইস’ যে দামে থাকে সবাই সেই দামে বিক্রি করে। এটা ভোক্তাদের সঙ্গে তাদের এক ধরনের প্রতারণা। এমন পরিস্থিতিতে আমরা জড়িত ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনছি।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর খুচরা বাজারা ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদিন প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। যা ১ মাস আগেও ৬০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। যা ১ মাস আগে ১৩০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি শুকনামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ টাকা। যা এক মাস আগে ৩৭০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা; যা এক মাস আগে ৩২০-৩৩০ টাকা ছিল।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি আদা ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা এক মাস আগে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা; যা এক মাস আগে ২২০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি দারুচিনি ৬২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা এক মাস আগে ৫২০ টাকা ছিল। ছোট দানার এলাচের কেজি সর্বোচ্চ ৩৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা এক মাস আগে ৩৫০০ টাকা ছিল।
এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রতিবছর কুরবানির ঈদ আসার আগেই অসাধুরা মসলা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কারণ কুরবানির ঈদ ঘিরে এই পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। কয়েকবার অসাধুদের চিহ্নিত করলেও পদক্ষেপ নেওয়া হওয়নি। তাই এখনই পদক্ষেপ না নিলে ঈদের আগেই মূল্য ক্রেতার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।
কাওরান বাজারে মসলা বিক্রেতা মো. ইউনুস বলেন, কুরবানির ঈদ আসলেই আমদানিকারকরা মসলা পণ্যের দাম বাড়াতে থাকে। এবারও তাই হয়েছে। আমরা পাইকারি কিনে খুচরায় বিক্রি করি। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়লে খুচরায় দাম বাড়ে। তিনি বলেন, দেশে সব ধরনের মসলাপণ্য আমদানি নির্ভর। আর এই বাজার গুটিকয়েক ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করেন। কারা নিয়ন্ত্রণ করেন তা সরকারের সব বিভাগ জানে। তাই সেখানে অভিযান পরিচালনা করলে ক্রেতার স্বস্তি ফিরবে।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারকরা জানান, বাংলাদেশের অধিকাংশ মসলা পণ্যই আমদানি হয়। এক সময় ব্যবসায়ীরা ৮২-৮৪ টাকার ডলার দিয়ে পণ্য আমদানি করতেন। এখন ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১১২ টাকা। পণ্যের দামের ওপর শুল্ক নির্ধারণ হওয়ায় আমদানি খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। যার কারণে মসলা পণ্যের দাম অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি।
এছাড়া আমদানি কমে যাওয়ায় আসন্ন কুরবানির ঈদে দেশে মসলার দাম চড়া থাকতে পারে। কারণ যে পরিমাণ মসলার চাহিদা রয়েছে তার চেয়ে আমদানি অনেক কম। তাই আমদানি সংকট নিরসন ছাড়া দেশে মসলার বাজার স্থিতিশীলতায় ফেরার কোনো সুযোগ নেই। রা/অ