রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৩০ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ফ্ল্যাট নির্মাণের পর জমির মালিকের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের (পিটিসি) পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। বুধবার রাজশাহীর একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন জমির মালিকপক্ষ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জমির মালিক ইয়াসিন আলী ও বুশরা খান। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বুশরা খান। তাদের অভিযোগ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে এ বিষয়ে নালিশ দেওয়া হলে এসপি সালিশের সিদ্ধান্ত মেনে নেন। পরে তা অমান্য করে ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে হয়রানি ও মিথ্যা মামলার হুমকি দিচ্ছেন তিনি।
এমনকি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেও পুুলিশ সুপারের প্রভাবে তাদের পক্ষে পুলিশ আসে না। পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর বাড়ি রাজশাহী নগরের হেতেমখাঁ এলাকায়। তিনি বর্তমানে টাঙ্গাইল পিটিসিতে পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত।
সংবাদ সম্মেলনে বুশরা খান অভিযোগ করে বলেন, চুক্তি মোতাবেক রাজশাহী নগরের বালিয়াপুকুর দেবীসিংপাড়ায় তাদের জমিতে আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী ফ্ল্যাট নির্মাণ করেন। চুক্তি অনুযায়ী আব্দুর রহিম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে তার অংশ থেকে ১৫ শতাংশ মালিকপক্ষকে ছেড়ে দেবেন।
কিন্তু তিনি পুলিশ সুপারের পরিচয় দিয়ে বিভিন্নভাবে তাদের হয়রানি শুরু করেন। শুরুতে তারা জানতেন না যে তিনি পুলিশ। একপর্যায়ে তিনি নিজেই রাজশাহী সিটি করপোরেশনে একটি অভিযোগ করেন। তখন সিটি করপোরেশনের পাঁচজন কাউন্সিলর বিষয়টি তদন্ত করে উভয়পক্ষকে ১৪টি ফ্ল্যাট ও গ্যারেজের অংশ সমান করে ভাগ করে দেন।
গত ৩০ মার্চ সিটি করপোরেশন থেকে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এরপর ৪ এপ্রিল বিনা কারণে পুলিশ সুপার তাদের ছয়তলা তিনটি ফ্ল্যাটের ওপর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারা জারি করান এবং পুলিশের মাধ্যমে তাদের দখল করা ফ্ল্যাটে স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেন। আবার নিজেই ১৪৪ ধারার ভঙ্গ করে ছয়তলার একটি ফ্ল্যাট নওগাঁর কিছু লোক এনে ঢুকিয়েছেন। তারা তাদের চেনেন না।
সিটি করপোরেশনের সমঝোতা অনুযায়ী পুলিশ সুপারের কাছে তিনতলার একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করার যে মৌখিক কথা হয়েছিল তা বাতিল হয়ে যায়। তারপরও পুলিশ সুপারের লোকজন জোর করে গত ১৬ এপ্রিল ওই ফ্ল্যাটের দখল নিতে এসেছিলেন। তার লোকজন তাদের ওপরে চড়াও হন। এ বিষয়ে তারা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেও পুুলিশ সুপারের প্রভাবে তাদের পক্ষে পুলিশ আসে না। পরে পুলিশ সুপারের পক্ষেই পুলিশ তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে ওই ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বুশরা খান অভিযোগ করেন, তাকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে তারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। তারা পুলিশি হয়রানি থেকে নিস্তার পেতে এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য সংবাদিকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী বলেন, ১৪টি নয়, তিনি ১৭টি ফ্ল্যাট পাবেন। সিটি করপোরেশনের সালিশ তিনি মানবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কারণ এ বিষয়ে তিনি আদালতে মামলা করেছেন। মামলা চলমান থাকলে তা নিয়ে সালিশ হতে পারে না। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের সালিশ প্রভাবিত করার জন্য তারা কাউন্সিলর মাহাতাব হোসেন চৌধুরীকে ঢুকিয়েছে। এ বিষয়ে তার আপত্তি ছিল। তাছাড়া সালিশের সিদ্ধান্তে পাঁচজনের মধ্যে দুজন কাউন্সিলর সই করেননি।
তিনতলার ফ্ল্যাট দখলের বিষয়ে এসপি বলেন, তার সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটটি বিক্রির বিষয়ে মৌখিক চুক্তি হয়েছিল। তিনি ১৭ লাখ টাকার চেক দিয়েছিলেন। তারা (মালিকপক্ষ) চেক ফেরত দিয়ে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম আরও বলেন, ১৬ এপ্রিল জমির মালিকপক্ষই তার বোনের ওপরে হামলা করেছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। এসব অভিযোগে তিনি নগরের বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেছেন। এটা মিথ্যা মামলা নয়।
ছয়তলার ফ্ল্যাটে লোক ঢোকানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ওটা আমার নিজের ফ্ল্যাট। আমি তো লোক তুলবোই। রা/অ