শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:১৮ am

সংবাদ শিরোনাম ::
তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ পুঠিয়ায় ভুয়া ডাক্তার ধরে প্রাননাশের হুমকির মুখে সাংবাদিকরা রাজশাহী আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন তানোর থানায় দালালের দৌরাত্ন্য বৃদ্ধি, অসহায় মানুষ দুর্গাপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে আটক ৩ জনের কারাদণ্ড গ্রাহকের ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, বন্ধু মিতালীর চেয়ারম্যানসহ আটক ৪ রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে আ.লীগকে দূরে রাখতে ছাত্রনেতাদের চাপ অর্ন্তবর্তী সরকারকে নিরপেক্ষ না হওয়ার আহ্বান বিএনপি নেতাদের তানোরে সরকারি কর্মকর্তা ও সুধীজনদের সাথে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সাম্প্রতিক সময়ে অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে সচেতন নাগরকবাসী
পবায় ৫ টাকা কেজিতে ঢেঁড়স কিনে বিক্রি ২০ টাকায়, হতাশ চাষিরা

পবায় ৫ টাকা কেজিতে ঢেঁড়স কিনে বিক্রি ২০ টাকায়, হতাশ চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাজারে বিক্রি করে জমি থেকে ঢেঁড়স উত্তোলনের খরচও উঠছে না চাষিদের। হাটে-বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি যেই ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে পাঁচ টাকায়। সেই ঢেঁড়স ব্যবসায়ীরা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করছেন ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজিতে। একহাত বদলে প্রতি কেজি ঢেঁড়সের দাম বাড়ছে ১২ থেকে ১৫ টাকা। যার সবই পাচ্ছেন বিক্রেতারা। এমন অবস্থায় দাম না পেয়ে হতাশ চাষিরা।

চাষিদের অভিযোগ, চার হাজার টাকায় প্রতি কেজি ঢেঁড়সের বীজ কিনে জমিতে বপন করতে হয়েছে। এছাড়া কিটনাশক, সার, সেচসহ আরও বিভিন্ন খরচ হয় জমি থেকে ঢেঁড়স তোলা শুরু হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু সেই অনুপাতে বাজারে দাম পাওয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিনে বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাজশাহী পবা উপজেলার খড়খড়ি সবজির হাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। এই হাটে প্রতিদিন ঢেঁড়স বিক্রি করেন, বুধপাড়া, পশ্চিম বধুপাড়া, মৌলভী বুধপাড়া, কুখুন্ডি, পবার পাড়ীলা, মেহেরচন্ডী, রামচন্দ্রপুর, মল্লিকপুরসহ আশপাশের গ্রামের অন্তত ৩০-৪০ জন চাষি।

চাষি ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়স চাষ করলে একদিন পর পর আহরণ করতে হয়। না হলে এই সবজিটা খাওয়ার উপযোগী থাকে না। এই সবজি চাষে কৃষকের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে কারণ প্রায় প্রতিদিন অল্প হলেও বিক্রি করে টাকা পাওয়া যায়। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ঢেঁড়সের চাষ হয়েছে ১০০ হেক্টরের বেশি জমিতে। রাজশাহীতে কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে চাষ।

ঢেঁড়স চাষে চাষির যত খরচ ঢেঁড়স জমিতে দ্রুত বাড়ে। এই সবজিটি দিনের ব্যবধানে বাজারজাত করতে হয়। ফলে অন্য সব সবজির তুলনায় চাষিরা দ্রুত টাকা পায়। সেই আশায় প্রতি বছর রাজশাহীতে ঢেঁড়সের চাষ বাড়ে। তবে আবাদ বাড়লেও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে বাজারে বেড়েছে ঢেঁড়সের উৎপাদন খরচ।

পবার রামচন্দ্রপুরে এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়সের চাষ করেছেন মো. এমাজউদ্দিন। তার দাবি, কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর ঢেঁড়সের চাষে তার খচর বেশি হয়েছে। সেই হিসেবে তার উৎপাদিত ঢেঁড়সের দামও বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো তাকে বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি কেজি ৫ টাকা দরে।

তিনি বলেন, এবার ঢেঁড়সের বীজের কেজি ছিল ৪ হাজার ১০০ টাকা। আমি শান্তা জাতের একটি ঢেঁড়সের চাষ করেছি। জমি চাষ, সেচ, শ্রমিক খাটানো, কীটনাশক প্রয়োগ সব কিছুতেই টাকার কারবার। চাষের সময় মনে করেছিলাম ঢেঁড়স জমি থেকে তোলা শুরু হলে ঘর থেকে আর টাকা লাগবে না। কিন্তু সেটা তো হলো না। এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়সের চাষ করতে গেলে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ। এই খরচ চলে ঢেঁড়স উত্তোলনের আগ পর্যন্ত। কিন্তু এবার হাটে ঢেঁড়সের দাম নেই। এ বছর যারা ঢেঁড়স চাষ করছেন তাদের খরচের টাকাই উঠবে না।

অপর চাষি হাসান আলী বলেন, রমজান মাস থেকে ঢেঁড়সের দাম নেই। ১২ রমজানের দিকে ঢেঁড়স পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৫ কেজি (পাল্লা) ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। কিন্তু সেই ঢেঁড়সের বাজার এখন নেমেছে ২৫ টাকা পাল্লায়। অর্থাৎ ২০০ টাকা মণ দরে ঢেঁড়স কেনা-বেচা হচ্ছে। কিন্তু এই ঢেঁড়স আবার ভ্যান গাড়ি বা সবজি বিক্রেতার কাছে কিনতে গেলে প্রতি কেজির জন্য দিতে হচ্ছে ১৮ থেকে ২০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, রোববার ঢেঁড়স হাটে নিয়ে বিক্রি করতে পারিনি। চার-পাঁচ টাকার ওপরে কেউ দাম বলছে না। রাগ করে ঢেঁড়স বিক্রি করিনি। নিয়ে গিয়ে বড় ভাইয়ের গরুকে দিয়েছি। তার একদিন পরে ঢেঁড়স তুলে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছি। তাদেরও গরু আছে। এছাড়া হাটে বিক্রি করতে নিয়ে গেলে খাজনা ও মাপার জন্য আলাদা টাকা দিতে হয়।

সজিব নামের এক ঢেঁড়স বিক্রেতা বলেন, জমি থেকে ঢেঁড়স তুলতে যে নারী শ্রমিক লাগে তাদের পারিশ্রমিকও উঠছে না। তাদের প্রত্যেককে ৬০ থেকে ৭০ টাকা দিতে হয়। এক বিঘা জমির ঢেঁড়স তুলতে কমপক্ষে চারজন নারী শ্রমিক লাগে। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে দেড় থেকে দুই মণ ঢেঁড়স হচ্ছে। এই ঢেঁড়স বিক্রি করে শ্রমিকের টাকাই উঠছে না।

খুচরা ঢেঁড়স ক্রেতা শামসুল ইসলাম বলেন, চাষি ও ভোক্তা সবাই ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। চাষি হাজার হাজার টাকা খরচ করে ঢেঁড়স চাষ করছে। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে টাকা পাচ্ছে না। আবার সেই ঢেঁড়স ব্যবসায়ীরা চাষিদের থেকে কিনে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে কেজিতে কয়েকগুণ টাকা লুটে নিচ্ছে। আমরা এই হাটে না এলে বিষয়টা জানতে পারতাম না। চাষিদের ঢেঁড়স হাত বদলে ব্যবসায়ীরা কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছেন।

অপরদিকে রাজশাহীর সাহেব বাজারের মাস্টারপাড়ার চিত্র অনেকটাই কাছাকাছি। তবে তুলনামূলক পবার খড়খড়ি বাইপাসের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি দামে ঢেঁড়স বিক্রি করতে পারে চাষিরা। মাস্টারপাড়ায় ঢেঁড়স বিক্রেতা মানিক হোসেন বলেন, খড়খড়ি বাইপাসের তুলনায় অনেক ভালো এখানে। সবসময় খড়খড়ি বাইপাসের চেয়ে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেশি দাম থাকে। তাই অনেকেই এখানে ঢেঁড়স বিক্রি করতে আসেন।

ভ্যানে সবজি ব্যবসায়ী রাজিব আলী জানান, তারা সীমিত লাভে ঢেঁড়স বিক্রি করেন। শুধু ঢেঁড়স নয়, সব সবজিতেই একই অবস্থা। তবে তার দাবি দোকানের ব্যবসায়ীদের চেয়ে তারা কম দামে সবজি বিক্রি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি মৌসুমে রাজশাহী ঢেঁড়সের চাষ হয়েছে ১০০ হেক্টরের বেশি জমিতে। রাজশাহী কৃষি অফিসের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে চাষের। এখনো ঢেঁড়সের মৌসুম চলছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহনাজ পারভীন বলেন, আমরা পণ্যের দাম নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে চাষি নায্যমূল্য পায়। এছাড়া বিভিন্ন সভা সমাবেশের মাধ্যমে আমরা চাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি। যাতে করে চাষিরা কৃষি পণ্যের দাম ভালো পায়। রা/অ

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.