শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:০৫ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, গোদাগাড়ী :
ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর ইতোমধ্যে প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গেছে। সেই ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। আগামী ৮ মের এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর পাশাপাশি মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপি ও জামায়াত নেতারাও। সবাই এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি জানান দিতে।
ক্ষতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে যারা চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে গণসংযোগসহ প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা হলেন, বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, গোদাগাড়ী পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক সুনন্দন দাস রতন এবং উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও দেওপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দীন সোহেল।
এছাড়াও আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে মাঠে নামেছেন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুল সরকার, পৌরসভা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক, পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অপরদিকে, এ সরকারের অধীনে সকল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার মধ্যে ভোটের মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ বিরোধী জোটের প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যেই চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে ভোটের মাঠে প্রচারে নেমেছেন তারা। যাদের মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী হচ্ছেন জেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান মার্কনী। তিনি রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা।
এছাড়াও জামায়াতে ইসলাম থেকে চেয়ারম্যান পদে ভোট করার ঘোষণা দিয়ে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহী জেলা পশ্চিম জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাজশাহী জেলা পশ্চিম জামায়াতে সহ-সেক্রেটারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জামান। তিনি ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিএনপি জামায়াত এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণায় অনড় থাকলেও ভেতর ভেতর বিএনপি জামায়াতেরে নেতাকর্মীরা নিজেদের সিদ্ধান্তে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় হওয়ায় কিছুটা চিন্তায় পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। অপরদিকে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা মনে করছে নির্বাচন যদি সুষ্ঠ হয় তাহলে তাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবেনা বলে দাবি করছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দিনরাত ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, রবিউল আলম ও বেলাল উদ্দীন সোহেলকে মাঠে বেশী সক্রিয় দেখা যাচ্ছে।
বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে পরিষদের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, রাস্তাঘাট, ব্রীজ কালভার্টসহ সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এসব উন্নয়নের সহযোগিতা করেছেন বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। আগামী দিনে এই উন্নয়ন চলমান ও বাকি কাজ সমাপ্ত করার করা বলছেন।
অপরদিকে, গোদাগাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রবিউল আলম ভোটারদের নিকট স্বচ্ছ, জবাবদিহি ও স্মার্ট উপজেলা পরিষদ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, নানান প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় বসে গিয়ে চেয়ার ছেড়ে জনগণের কাছে আর আসতে চাই না ও জবাবদিধি করতে চাই না। এছাড়াও নানান রকম উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে উন্নয়ন তো দূরের কথা নিজে বড় মাপের ব্যবসায়ী হয়ে উঠে ও পকেট ভাড়ী করে। সরকারি উন্নয়নের বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার না করে রাষ্ট্রের ক্ষতি ও জনগনের উন্নয়নের বাধাগ্রস্থ করে। আমি এসকল কিছুর উর্ধ্বে থেকে সত্যিকার অর্থে যেমন উন্নয়ন করা প্রয়োজন সেটি করে দেখাতে চাই। নির্বাচতি হয়ে যাওয়ার পরও জনগনের নিকট এসে দেখা সাক্ষাত ও জবাব দিহিতার কথাও জানান তিনি।
অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী বেলাল উদ্দীন সোহেল ভোটারদের নিকট গিয়ে সকল লোভ ও ক্ষমতার অর্থবৃত্তায়নের দুরে থেকে একান্ত দেশ, মাটি ও মানুষের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়নের জন্য গোদাগাড়ী উপজেলাকে সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে স্মার্ট উপজেলা পরিষদ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান চেয়ার্যম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর জনগনের সাথে আর যোগাযোগ রাখেনি। আমি সরকারের বরাদ্দের ১০০ ভাগ সুষ্ঠ বন্টন করে জনগণের কাঙ্খিত উন্নয়ন ঘটাতে চাই। নিজের পকেটে ভরে একটি টাকাও নিয়ে যেতে চাই না এবং জনসেবার নামে ব্যবসা করতে চাই না। বর্তমান উপজেলা পরিষদে সরকারি যা বরাদ্দ আসে সেগুলো সঠিক বন্টন না করে টাকার বিনিময়ে বরাদ্দকৃত সকল কিছু বিক্রি করে দেওয়া হয়। এতে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাই এসকল কিছু থেকে পরিত্রাণ পেতে জনগণ আমাকেই ভোট দিবে বলে মনে করেন।
এদিকে, জেলা বিএনপির সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক সাজেদুর রহমান খান বলেন, মনে করেছিলাম কোন নির্বাচন করবো না। বারবার নির্বাচনের মাঠ থেকে বিএনপি সরে থাকায় বিএনপির তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। আমি ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মী ও ভোটারদের সাথে দেখা সাক্ষাত ও ইফতারিতে অংশগ্রহণ করছি। এছাড়াও আওয়ামী লীগকে আর ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেওয়া যাবে না। নির্বাচনে হার জিতে থাকবেই সেটা বড় বিষয় নয়, আমার মূল উদ্দেশ্যে বিএনপি কর্মীদের পাশে থেকে তাদের মনোবল বাড়ানো।
তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি বা জেলা বিএনপির নেতারা কে কি ভাবলো সেটা দেখলে হবে না। আমরা এই রাজশাহী অঞ্চলে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছি। এভাবে নির্বাচন থেকে সরে থাকলে নেতাকর্মীরা হারিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে বিএনপির সাধারণ কর্মী ও সমর্থকদের ভোটের মাঠে নামার কথা জানান দিয়েছে বলে জানান বিএনপির এই নেতা।
চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজশাহী জেলা পশ্চিম জামায়তের আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক বলেন, কেন্দ্রীয় ভাবে নির্বাচনের কোন নির্দেশনা আমাদের দেওয়া হয়নি। যেহেতু এটা স্থানীয় নির্বাচন তাই স্থানীয় ভাবেই আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আমরা মাঠ পর্যায়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছি। বর্তমানে মাঠে প্রচার প্রচারণা চালাতে কোন ধরনের সমস্যা না মনে হলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার পর পরিস্থিতি কেমন তৈরী হয় তা দেখার বিষয়। তবে ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীরা শঙ্কিত আছেন যে এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ট ভাবে হয়নি সেই ক্ষেত্রে এই নির্বাচন সুষ্ঠ হয়তো হবে না তাই মাঠে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও সারা পেলেও জয়ী না হতে দেওয়ার শঙ্কা দেখা যাচ্ছে। আমরা আরো পর্যবেক্ষন করছি দেখা যাক সর্বশেষ কি অবস্থা দাঁড়ায়।
ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ও রাজশাহী জেলা পশ্চিম জামায়াতে সহ-সেক্রেটারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, ভোটে অংশ গ্রহণের বিষয়টি দলের কেন্দ্র থেকে কোন নির্দেশনা প্রদান করা হয়নি। এটি স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় স্থানীয় সংগঠন অর্থাৎ জেলা কমিটি ভোট করার চিন্তা ভাবনা করছেন। ২০১৪ সালে ভোট করে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলাম। এবার যদি ভোট ভোটের মত হয় তাহলে আমাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেই এই নেতা। রা/অ