রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:০১ am
ইমরান হোসাইন :
রাজশাহীর তানোরে অযৌক্তিক দাবি ও অবৈধ দখলদারিত্ব কায়েম করতে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা করা হয়েছে। উপজেলার সরনজাই উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সম্পাদক ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বাদি হয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলামকে বিবাদী করে তানোর থানার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলটি দায়ের করেছেন।
যার মামলা নম্বর -২৪/২০২৪, তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারী/২০২৪। এমন হয়রানি মূলক মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে উপজেলার অফিস পাড়ায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড়।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, একজন প্রধান শিক্ষকের খুঁটির জোর কোথায়? যিনি অযৌক্তিক দাবি আদায়ে সরকারের উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল তিনজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। অথচ স্কুলের ৪৫ বিঘা জমি ও দুটি দিঘির আয়-ব্যয়ের হিসাব তিনি কাউকে দেন না। যে কারণে স্থানীয়রা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুদুকে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
অভিভাবকরা বলেন, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে, অন্যরাও ঠুনকো অজুহাত ও অযৌক্তিক দাবি আদায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে উৎসাহী হবে। আর এমনটি হলে সরকারি কর্মকর্তাগণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে আগ্রহ হারাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সরনজাই বাজারের একটি মার্কেটের সামনে সরকারের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ থেকে পরিত্রাণের আশায় আশরাফুল ইসলাম বাদি হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এদিকে, ২০২৩ সালের ২০ জানুয়ারি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য নোটিশ প্রদান করেন। কিন্তু তারা নানান অজুহাতে কালক্ষেপণ করে আসছে। এখন উল্টো সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার সরনজাই ইউপির আরএস খতিয়ান নম্বর ১০২৬, দাগ নম্বর ৩১০৭ জমির পরিমাণ ২২ শতাংশের কাত ২ দশমিক ৬০ শতাংশ। ক্রয় সূত্রে উক্ত সম্পত্তির মালিক সরনজাই গ্রামের ওয়াজেদ আলীর পুত্র মুদিদোকানি আশরাফুল ইসলাম। তিনি বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় কুড়ি লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সেখানে চারটি পাঁকাঘর নির্মাণ করেছেন। তার ঘরের সামনে সরনজাই স্কুলের জায়গা দাবি করে জোরপুর্বক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছেন শফিকুল, রাজু ও তোফাজ্জুল।
অথচ আরএস খতিয়ান নম্বর ৯৭৭, দাগ নম্বর ১১৬৩। উক্ত দাগে মোট জমি ২১ শতাংশ এর মধ্যে ৩ দশমিক ৫০ শতক জমি রাস্তার জন্য অধিগ্রহণ করেছেন সরকার। যাহার এল.এ কেস নম্বর-২০/১৯৯৯-২০০০। এসব অধিগ্রহণকৃত জমি আশরাফুলের দোকানের সামনে।
এদিকে, সরনজাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরনজাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে অধিগ্রহণকৃত জমির ওপর জোরপুর্বক অবৈধ স্থাপনা (টিনের ঘর) নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। এতে আশরাফুলের চারটি ঘরে যাতায়াতের পথ বন্ধ হওয়ায় ঘরগুলো কার্যত বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে আশরাফুল পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অপরদিকে, এনজিও ঋণের কিস্তির চাপ, অন্যদিকে নিজের ঘর ফেলে ভাড়া ঘরে ব্যবসা করতে গিয়ে আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন- বিষয়টি তার জানা নেই, তবে এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে। এবিষয়ে উপজেলা ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার আমানত আলী বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অফিস থেকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আমলে নিচ্ছেন না।
এবিষয়ে মোবাইল ফোনে সরনজাই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, মামলার বিধিমত আচরণ আর যৌক্তিক দাবি আদায়ে ডিসি ছাড়াও ইউএনও সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। তবে, বিজ্ঞ আদালতে কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে মামলা করা হয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান। তবে এবিষয়ে রাজু, শফিকুল ও তোফাজ্জুল বলেন, তারা হেড মাস্টারের কাছে থেকে অধিগ্রহণকৃত জমিতে করা দোকান ভাড়া নিয়েছেন। এবিষয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নানের এ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী বলেন, রাজশাহীর দেওয়ানী আদালতে বাদী আব্দুল হান্নানের পক্ষে মামলাটি দাখিল করা হয়েছে। পরবর্তী ধার্য্য তারিখে শুনানী হবে।
এব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, কেউ কোন বিষয়ে আদালতে মামলা করলে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমেই মোকাবেলা করা হবে। তবে, তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি অবগত নন বলেন জানান তিনি। রা/অ