বৃহস্পতিবর, ৩১ অক্টোব ২০২৪, সময় : ০১:১৮ am
ক্রীড়া ডেস্ক, আজকের তানোর : কী দুর্দান্ত এক ম্যাচ। মচমচে, টক-ঝাল-মিষ্টি মেশানো। উত্তেজনা, স্নায়ুক্ষয়ী টেনশন-সবই ছিল। এমন ম্যাচে আবাহনীকে ৩-১ গোলে হারিয়ে টানা তৃতীয়বার ফেডারেশন কাপের ফাইনালে বসুন্ধরা। ফেডারেশন কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল এক অর্থে যেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাময় হয়ে রইল।
বসুন্ধরা ও আবাহনীর দুই ব্রাজিলীয় ও এক আর্জেন্টাইন ম্যাচের চার গোল করেছেন-বসুন্ধরার ব্রাজিলীয় জোনাথন দুটি ও আর্জেন্টাইন রাউল অস্কার একটি এবং আবাহনীর ব্রাজিলীয় ফ্রান্সেসকো। ঢাকার মাঠে লাতিন ঘরানার ছোঁয়া বৃহস্পতিবার দেখা গেল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।
ম্যাচের প্রথম গোল আবাহনীর। ব্রাজিলীয় ফ্রান্সেসকো ৩১ মিনিটে লিড এনে দেন আকাশি নীল-হলুদ শিবিরকে। মিনিট বিশেক পর বসুন্ধরা ম্যাচে ফেরে ব্রাজিলীয় জোনাথনের লক্ষ্যভেদে। বসুন্ধরার শেষ গোলটিও তার। তার আগে বিজয়ীদের দ্বিতীয় গোল আর্জেন্টাইন রাউল বেসেরার। এভাবেই সন্ধ্যাটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার হয়ে রইল। রোববার ফাইনালে বসুন্ধরার মুখোমুখি হবে সাইফ স্পোর্টিং। প্রথম সেমিফাইনালে সাইফ ৩-০ গোলে হারিয়েছিল চট্টগ্রাম আবাহনীকে।
নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে ড্র থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। সেখানেই জয় পায় কিংস। ম্যাচের ১১০ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করে তারা। ডান প্রান্ত দিয়ে বদলি মিডফিল্ডার মতিন মিয়ার মাইনাসে বল পান বেসেরা। ঠান্ডা মাথায় প্লেসিং শটে জাল কাঁপান এ আর্জেন্টাইন (২-১)। এবারের ফেডারেশন কাপে এ নিয়ে চার গোল হলো বেসেরার। ম্যাচের অন্তিম সময়ে নাবিব নেওয়াজ জীবন গোল করলেও লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা তুলে দেন।
বাতিল হয়ে যায় গোল। লাইন্সম্যানের দিকে তেড়ে যান আবাহনীর ফুটবলাররা। গ্যালারি থেকে আবাহনীর সমর্থকরা বোতল ছুড়তে থাকেন মাঠে। ম্যাচে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। খেলা প্রায় ১০ মিনিট বন্ধ থাকে। খেলতে অস্বীকৃতি জানান আবাহনীর বেলফোর্ট। কয়েকবার বল মাঠের বাইরে ফেলে দেন। দেখে রেফারি হাইতির ফরোয়ার্ডকে হলুদ কার্ড দেখান। শেষ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের অনুরোধে খেলতে রাজি হন বেলফোর্ট।
আবারও খেলা শুরু হলে ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় বসুন্ধরা। পালটা আক্রমণে তৃতীয় গোল পায় তারা। ব্রাজিলিয়ান রবসনের মাইনাসে ডান পায়ের শটে গোল করেন আরেক ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জোনাথন (৩-১)। এটি তার দ্বিতীয় গোল।
সংবাদ সম্মেলন বয়কট আবাহনীর
নিয়মানুযায়ী হেরে যাওয়া দলের কোচ ম্যাচ-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রথম আসবেন। কিন্তু ফেডারেশন কাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আবাহনী ১-৩ গোলে বসুন্ধরার কাছে হারার পর তাদের কোচ সংবাদ সম্মেলনে আসেননি। তাদের জন্য অপেক্ষা করে বসুন্ধরা কোচ অস্কার ব্রুজোনকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। বসুন্ধরার কোচ চলে যাওয়ার পরও আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস আসেননি। ঢাকা আবাহনী অতিরিক্ত সময়ে তাদের গোল বাতিলের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। ওই গোল বৈধ হলে ম্যাচের ফল ২-২ হতে পারত। গোল বাতিল করায় আবাহনী গ্যালারি উত্তপ্ত ছিল। আবাহনীর কোচিং স্টাফও মেজাজ হারিয়েছিলেন। ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে না এলে ডিসিপ্লিনারি কমিটি সাধারণত জরিমানা করে থাকে। ঢাকা আবাহনী ও তাদের পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসকে কী শাস্তি দেয় ডিসিপ্লিনারি কমিটি-সেটাই এখন দেখার বিষয়।
পুলিশি পাহারায় বসুন্ধরা
আবাহনী-বসুন্ধরা কিংস ম্যাচে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। ম্যাচে সমতায় ফেরার গোল লাইন্সম্যান বাতিল করলে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। শেষে হেরেছে আবাহনী। আবাহনীর সমর্থকরা গ্যালারি থেকে বোতল ছুড়ে মারেন। লাইন্সম্যানকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন বসুন্ধরার ফুটবলার ও কর্মকর্তারা। পল্টন মডেল থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ভিভিআইপি এক নম্বর গেটে বসুন্ধরার ফুটবলারদের যাওয়ার সময় অতিরিক্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়, যা ফুটবলে সম্প্রতি বিরল ঘটনা। সূত্র : যুগান্তর