শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৪৪ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর মোহনপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজ। তিনি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক পদে রয়েছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
অভিযোগ রয়েছে- কলেজের চেয়ে তিনি রাজনীতি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তবে বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানে না মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারদলীয় এই নেতা অধ্যক্ষের পদে থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে প্রকাশ্যেই তিনি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিলেও ক্ষমতার প্রভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝেই রয়েছে ক্ষোভ।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, টানা ১৫ বছর ধরেই মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজ। এর মধ্যেই ২০১৮ সালে তার কলেজ সরকারিকরণ হয়। তারপর কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা গত বছরের মার্চ মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন সরকারি কলেজের স্কেলে। কলেজ সরকারিকরণের পরও ২০২২ সালের মে মাসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আবারো সাধারণ সম্পাদক হন মফিজ উদ্দিন কবিরাজ।
সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হয়েও মফিজ উদ্দিন কবিরাজ দলীয় পদে থাকায় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কিছু দিন আগে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আলফোর রহমান। তিনি লেখেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে মফিজ উদ্দিন কবিরাজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে বহাল আছেন। এতে ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজ। আয়েনের প্রশ্রয়ে নিয়োগে অনিয়মসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আয়েন উদ্দিন মনোনয়ন পাননি। এরপর থেকে রাজনীতিতে প্রায় নিষ্ক্রিয় আয়েনের দুলাভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সালাম। তার অনুপস্থিতিতে এখন মফিজ উদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে সভাপতিত্বও করছেন। সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তিনি।
দলীয় নেতাকর্মী ও কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি চাকরিজীবী হয়েও মফিজ উদ্দিন কবিরাজকে দলীয় পদ দেওয়া আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। আবার এটি গণকর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-১৯৭৯-এর ২৫ ধারারও পরিপন্থি।
অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার দাপটে আওয়ামী লীগ নেতা মফিজ উদ্দিন কবিরাজ প্রতিদিন কলেজে যান না। কলেজের চেয়ে তিনি ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতি নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজ বলেন, আমি আওয়ামী লীগ করি বলেই এই কলেজ সরকারি হয়েছে। কলেজের উন্নয়ন হয়েছে। তারপরও আমি সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগপত্র জেলা আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেছে কিনা আমি জানি না।
সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি দলীয় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ব্যানার আগে দেখিনি। পরে দেখেছি। আর মাত্র কয়েক মাস চাকরি আছে। এ সময়ে এসব প্রশ্ন করে কষ্ট না দিলেই খুশি হতাম।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেন, মফিজ উদ্দিন কবিরাজ দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কিনা তা আমি জানি না। কোনো পদত্যাগপত্র আমি দেখিনি। পদত্যাগ করলে কাউকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হতো, সেটাও হয়নি।
তিনি বলেন, দলীয় পদে থেকে সরকারি চাকরি যেমন চাকরিবিধির লঙ্ঘন, তেমনি দলের গঠনতন্ত্রেরও পরিপন্থি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মো. আলমগীর কবীর বলেন, সরকারি চাকরি করে কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের পদে থাকতে পারবেন না। এটা চাকরিবিধির লঙ্ঘন। অধ্যক্ষ মফিজ উদ্দিন কবিরাজের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রা/অ