রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:০৬ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মহানগরীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের রেলগেট ও শালবাগান বাজার। এ দুই এলাকার মধ্য দিয়ে দিন-রাত ছুটে চলে হাজারো বাস, ট্রাক, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবহন। মহাসড়কটির দুই পাশেই রয়েছে পথচারীদের চলাচলের জন্য ১০ ফুট প্রশস্ত ফুটপাত। অথচ এ ফুটপাত দখলে নিয়ে এর আগে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে অর্ধশতাধিক দোকান ও ফলের আড়ত। সম্প্রতি সেখানে আবারও নির্মাণ শুরু হয়েছে ফলের আড়ত।
সরেজমিন দেখা গেছে, ১০ দিন ধরে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও পাসপোর্ট অফিসের সামনের ফুটপাত বাঁশ ও চাঁটাই দিয়ে ঘিরে দখলে নেমেছেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শাহিন হোসেন কালু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোস্তাক হোসেন ও তার সহযোগীরা। দিন-দুপুরে ফুটপাতের ওপর বাঁশ, টিন ও খুঁটি বসিয়ে ফলের আড়ত নির্মাণ চলছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রাজশাহী পলিটেকনিক ল্যাবরেটরি স্কুল ও রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক দিয়েই হাঁটতে হচ্ছে তাদের। এতে বিভিন্ন সময়ই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।
স্থানীয়রা জানান, মহানগরীর রেলগেট থেকে শালবাগান পর্যন্ত গড়ে ওঠা আড়ত থেকে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালীরা প্রতিদিন দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলে থাকেন। এছাড়া রেলগেটের ফুটপাতে বসানো ফলের দোকানগুলো থেকে তুলছেন দৈনিক ২০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত।
এদিকে ফুটপাতের ওপর নির্মিত এসব দোকান ও ফলের আড়ত উচ্ছেদের জন্য গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) নগর বিশেষ শাখা ও চন্দি মা থানায় চিঠি দেন। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
অপর দিকে ফুটপাত দখলের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। এক সপ্তাহ আগে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেকানিক্যাল বিভাগের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী আলিফ আক্তার রুমন ও তার বন্ধু হাকিম রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় অটোরিকশার ধাক্কায় আহত হন।
জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী বলেন, ফুটপাত দখলে থাকার কারণে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়। শুধু আমি নই, ওই দিন আমার বন্ধু হাকিমও গুরুতর আহত হয়েছে। শালবাগানে প্রায়ই এমন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেক মানুষ। ফুটপাতে হাঁটার জায়গা থাকলে হয়তো এমন ঘটনার শিকার হতাম না।
আরেক ভুক্তভোগী রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড মডেল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহজাবিন আরার মা গুলশান আরা। তিনি নওদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। মেয়েকে স্কুলে নিতে গিয়ে তিনিও হয়েছেন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার। শুধু শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকই নন; ফুটপাত দখলের কারণে ভোগান্তিতে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। শিক্ষার্থী রুমনের মতো তারাও একই অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মোহম্মদ আব্দুর রশীদ মল্লিক বলেন, ফুটপাত দখলের কারণে আমরা বেশ সমস্যার মধ্যে রয়েছি। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। পুলিশকে চিঠি দিয়েও এর প্রতিকার পাইনি।
ফুটপাত দখলের বিষয়টি স্বীকার করে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি শাহিন হোসেন কালু বলেন, রাজশাহীর বাইরে অন্য জেলাগুলোতে ফল ব্যবসায়ীদের জন্য নির্ধারিত মার্কেট রয়েছে, কিন্তু আমাদের নেই। আগামী দুই থেকে তিন মাস ফলের মৌসুম। এ কারণে অস্থায়ীভাবে ফলের আড়ত নির্মাণ করা হয়েছে। পরে সেগুলো তুলে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে চন্দি মা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, ফুটপাতের অবৈধ দোকান সাধারণত সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ করে। সিটি করপোরেশন বা কোনো ভুক্তভোগী যখন আমাদের অভিযোগ দেন তখন আমরা অ্যাকশনে যেতে পারি।
তবে অভিযোগ পেলে এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হবে। ফুটপাত দখল ও উচ্ছেদের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফরিন বলেন, অবৈধ দোকান নির্মাণের বিষয়টি জানতাম না। এ বিষয়ে খোঁজ নেব। এরপর সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। সূত্র : যুগান্তর