রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:২৮ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বছর দুয়েক আগে নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মাহমুদুল ফারুক জেলার সার ডিলারদের কাছে ঘুস দাবি করেছিলেন। এ অভিযোগ তদন্ত করে জেলা প্রশাসন তাকে বদলির সুপারিশ করেছিল। এরপর তাকে অন্যত্র বদলিও করা হয়েছিল।
এর এক বছর ৯ মাস পর অন্তত ২৫ জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে এই কর্মকর্তাকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এ নিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
রাজশাহী অঞ্চলের অধীন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তৃতীয় গ্রেডের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চাকরিজীবনের শেষে তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তাদের চাওয়া থাকে বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে অবসরে যাওয়া। অঞ্চল ফাঁকা না থাকার কারণে সব যোগ্যতা থাকার পরও অন্তত ২৫ জন কর্মকর্তা এ পদে আসতে পারছেন না। অথচ এই পদে পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তাকে বসানো হয়েছে অতিরিক্ত পরিচালকের পদে। এটি দুঃখজনক। শুনেছি কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক বড় কর্মকর্তার স্বামীকে ম্যানেজ করে ফারুক এই পদ বাগিয়ে নিতে পেরেছেন যা তার পাওয়ার কথা নয়।
জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ-১ শাখার উপসচিব কামরুল হাসান গত ২৯ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে ঈশ্বরদীর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ মাহমুদুল ফারুক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে পদায়ন করেন। অথচ ফারুক কৃষি বিভাগের পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তা। জাতীয় বেতন স্কেলের তৃতীয় গ্রেডের পদ হলো অতিরিক্ত পরিচালক। তৃতীয় গ্রেডের অন্তত ২৫ জন কর্মকর্তা অঞ্চল ফাঁকা না থাকার কারণে অতিরিক্ত পরিচালক পদে বসতে পারছেন না। সেখানে রাজশাহীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে নিম্নপদের কর্মকর্তাকে বসানো হয়েছে।
জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের অধীনে রাজশাহী ছাড়াও রয়েছে নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এই চার জেলার কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালকেরা (ডিডি) অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ডিডি মোজদার হোসেন ১৩তম বিসিএস কৃষি ক্যাডারের কর্মকর্তা। আর তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নতুন অতিরিক্ত পরিচালক মাহমুদুল ফারুক ১৫ বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা। উপ-পরিচালকের চেয়ে অতিরিক্ত পরিচালকই জুনিয়র। যদিও পদমর্যাদায় দুজনেই উপ-পরিচালক।
জানা গেছে, মাহমুদুল ফারুক ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ২০২২ সালের ২৩ মে পর্যন্ত নাটোর জেলা কৃষি বিভাগের ডিডি ছিলেন। সে সময় তিনি নাটোরের সার ডিলারদের কাছে ঘুস দাবি করে আলোচিত হন। এ নিয়ে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের নাটোর জেলা শাখার পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসন এ অভিযোগের তদন্ত করে তৎকালীন ডিডিকে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করেছিলেন। পরে তাকে ঈশ্বরদীর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ হিসেবে বদলি করা হয়। নাটোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ এখন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক। তিনি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ঢাকায় থাকার কারণে তার সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার সমিতির নাটোর জেলা শাখার সভাপতি আবদুস সালাম জানান, ঘুস দিতে না চাওয়ার কারণে তৎকালীন ডিডি ফারুক কৃষি বিভাগ থেকে নানা শর্ত উল্লেখ করে চিঠি পাঠান ডিলারদের কাছে। পরে তিনি সব ডিলারের কাছে আলাদাভাবে ঘুস দাবি করেন। ঘুস না দিলে প্রকাশ্যে হয়রানি করারও ঘোষণা দেন। এ নিয়ে অভিযোগ করলে কিছুদিন পর তার বদলি হয়ে যান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাহমুদুল ফারুকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। চাকরি জীবনের প্রথমদিকে তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ছিলেন। ২০১১ সালের দিকে তার বিরুদ্ধে কৃষকদের কৃষিকার্ড দেওয়ার বিনিময়ে ঘুস নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পরে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে বরগুনার পাথরঘাটা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। পরবর্তীতে তিনি নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক হয়ে আসেন। পরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হন।
যোগাযোগ করা হলে মাহমুদুল ফারুক বলেন, আমাকে আমার পদে থেকেই অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। তবে কাগজপত্র সব রেডি হচ্ছে। পদোন্নতিও হয়ে যাবে। তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ সত্য না।
ঘুস দাবির অভিযোগ উঠলেও মাহমুদুল ফারুক এখন ভালো হয়ে গেছেন উল্লেখ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, চাকরিজীবনে একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতেই পারে। মাহমুদুল ফারুকের ঘুস চাওয়ার ওই অভিযোগের তদন্তে প্রমাণিত হয়নি। তারপরেও তিনি যেহেতু বিতর্কিত হয়েছিলেন, তাই তাকে বদলি করে দেওয়া হয়েছিল। বদলি হওয়ার পরে তিনি কাজ করেছেন। রা/অ