শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:১২ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর সঙ্গে ভারতের নৌরুট ৫৮ বছর পর আবার চালু হলো। সোমবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার সুলতানগঞ্জে এই পোর্ট অব কল উদ্বোধন করা হয়েছে। পদ্মা নদীর এপারে বাংলাদেশের রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ। আর ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদীঘি থানার ময়া। আর এ রুটেই চালু হলো নৌযান চলাচল।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ফলক উন্মোচন করে এই পোর্ট অব কলের উদ্বোধন করেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর এ নৌরুটে বাংলাদেশ থেকে পণ্যবোঝাই একটি নৌযান ভারতের ময়া নদীবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। আর সেখান থেকে একটি পণ্যবোঝাই নৌযান আসে সুলতানগঞ্জে।
এ নৌরুটটি চালুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দুয়ার উন্মোচন হলো। আপাতত শুধু পণ্য আনা-নেওয়া শুরু হলেও ভবিষ্যতে ইমিগ্রেশন চালুরও পরিকল্পনা আছে। এখানে ইমিগ্রেশন চালু হলে রাজশাহীর মানুষকে ভারতে যাতায়াত করতে আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ কিংবা অন্যান্য স্থলবন্দর ঘুরতে হবে না। পদ্মা পাড়ি দিয়ে সহজেই ভারতে যাওয়া যাবে।
এদিকে সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথে নৌবন্দর চলাচলের উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা। স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম সচিব সেলিম ফকির।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আর তাই এই নদীবন্দর চালু হলো। এখন কম খরচে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করা যাবে। ফলে দুই দেশ উপকৃত হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যেও নতুন সম্ভাবনা দেখা দেবে। একারণে দুই দেশের জনগণই অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ভারত সব সময় প্রতিবেশী দেশকে গুরুত্ব দেয়। এ জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ধরনের যোগাযোগ বৃদ্ধিতে ভারত আন্তরিক। এই নদীবন্দর দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এই নদীবন্দর চালুর মধ্য দিয়ে পিছিয়ে পড়া রাজশাহীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পথ ত্বরান্বিত হলো। এখানে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবে। এই নদীবন্দরের পরিসর যেন আরও বড় হয়, সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সেলিম ফকির, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর আফির আহমেদ মোস্তফা প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবালসহ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী নেতারা।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ইন্দো-বাংলাদেশ প্রটোকল রুট নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন; কিন্তু পরবর্তীতে এ নিয়ে তেমন কাজ হয়নি। সাম্প্রতিককালে বিআইডব্লিউটিএ ওই চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন নৌরুট চালু করতে উদ্যোগী হয়।
পাকিস্তান আমলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী আর পদ্মার ওপারের ভারতের সঙ্গে নৌ যোগাযোগ ছিল। আনা-নেওয়া হতো নানা ধরনের পণ্য। ১৯৬৫ সালে এই নৌরুট বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কেটে গেছে ৫৮ বছর। দীর্ঘ সময় পর আবার গোদাগাড়ী দিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নৌরুট চালু হলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পথে ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রাথমিক পর্যায়ে ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, পাথর, মার্বেল, খনিজ বালু ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যসামগ্রী বাংলাদেশে আসবে। আর বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, মাছ, ইট, পাট ও পাটজাত পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ভারতে যাবে।
সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে পদ্মা-মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্যে পরিবহণ খরচ কমবে।
এই নৌপথটি চালু করতে গত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করে আসছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ২০২০ সালের অক্টোবরেই সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথটি চালুর কথা ছিল; কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এর কাজ পিছিয়ে যায়। এখন এপারে একটি পন্টুন করে নৌযান চালানো শুরু করা হলো।
এই রুট দিয়ে মানুষের যাতায়াতের জন্য ইমিগ্রেশন চালুরও পরিকল্পনা আছে। এ জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। ইমিগ্রেশন বিভাগও ইতিবাচক এ ব্যাপারে।
দীর্ঘদিন পর এ নদীবন্দর চালু হওয়ায় খুশি এলাকার মানুষ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা দেখছেন এই নদীবন্দর ঘিরে। রা/অ